বছর শেষে পুরো ডিসেম্বরের লম্বা ছুটি। বাসায় বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছি। সময় যেন কাটছেই না। সময় কাটানোর জন্য কোনো কিছু না পেয়ে ভাবলাম, 'লেখালেখি' করলে কেমন হয়? যদি বিখ্যাত হয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু লিখতে বসে বুঝলাম কাজটা অতটা সহজ না। কোনো কিছু যখন দূর থেকে দেখা হয়, খুব সহজ মনে হয়। সেটা যখন নিজের কাঁধে এসে পড়ে, তখনই সব বাহাদুরি বেরিয়ে যায়। 'লেখালেখি' জিনিসটাও আমার কাছে তেমনই। 'লেখালেখি করতে গিয়ে প্রথম যে মহাসাগরে আমি পড়লাম, সেটা যেনতেন কোনো মহাসাগর না। রীতিমত 'প্রশান্ত মহাসাগর', 'আটলান্টিক মহাসাগর' ও তার কাছে পান্তাভাত। এ মহাসাগরটির নাম হচ্ছে 'বিষয়'। এ এমন এক মহাসাগর, যেখানে একবার পড়লে সাঁতার কেটে তা পাড়ি দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। যেখানে পড়বে, সেখানেই পড়ে থাকবে। এ মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রথমেই সাহায্য নিলাম মায়ের। মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'বলতো মা, কি নিয়ে লেখা যায়?' সঙ্গে সঙ্গে মায়ের ইন্সট্যান্ট রিপস্নাই, 'তুইতো সারাদিনই ফুটবল খেলা নিয়ে পড়ে থাকিস, মেসিকে নিয়ে কিছু লেখ অথবা ওই যে মেসির বস আছে না লিওনেল স্কেলেনি (মায়ের ভাষায়) তাকে নিয়ে লেখ।' মা তো নিজের মতো বলে গেল, আমি সাগরেই পড়ে রইলাম। কারণ মায়ের দেওয়া 'বিষয়' আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। মাকে জিজ্ঞাসা করে লাভ নেই। তাই প্রশ্ন করার মানুষ খুঁজতে লাগলাম। বাবাকেও জিজ্ঞাসা করা যাবে না। জিজ্ঞাসা করলে এখনই বলতে শুরু করবে, 'বাবা, তুমি চলমান কোনো বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লেখো। যেমন: বঙ্গবাজারে আগুন, মেট্রোরেল ইত্যাদি।' তাই বাবাকে প্রশ্ন করার কোনো মানে হয় না। 'বৃথাই কষ্ট, সময় নষ্ট'। তাই আবার ভাবতে লাগলাম কাকে প্রশ্ন করা যায়। ছোট ভাইকে প্রশ্ন করে দেখা যাক। নাহ! সেটাও চলবে না। ওকে প্রশ্ন করলে বলবে, 'ভাইয়া, সুপারকার নিয়ে লেখো।' এভাবে বিষয় খুঁজতে খুঁজতে আমি কখন যে প্রশ্ন করার মানুষ খুঁজতে শুরু করলাম নিজেই ভুলে গেছি। আচ্ছা, বড় বড় লেখক যারা, যেমন: মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, হুমায়ূন আহমেদ। তারা কি 'লেখালেখি'র ওপর কোনো কোর্স করেছেন? আমারও কি তাহলে সেরকম কোনো কোর্স করে সার্টিফিকেট নিতে হবে? ভেবে ভেবে আমি আর কুল-কিনারা পাই না। পুরো দুই দিন, দুই রাত ভাবার, পর আমার এমন এক বুদ্ধি মাথায় এলো, যা চিন্তা করে বের করার পর আমি নিজেই বেকুব বনে গেলাম। আরে! বিষয় তো আমি এই দুদিন যাবত নিজের পকেটে করে নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছি! আমার সে কাঙ্ক্ষিত বিষয়ই তো 'বিষয় বিভ্রাট'।