আমাদের প্রত্যাশা
অর্থবহ একটি বইমেলা
আরিফ মঈনুদ্দীন
কবি ও কথাসাহিত্যিক
যে অর্থে মেলা বসে বা মেলা হয় সেই অর্থে বইমেলা বিষয়টি একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বই একটি জাতির মননের প্রতীক, সৃজনের প্রতীক। বই এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে জ্ঞানের আদান প্রদান সংগঠিত হয়, আনন্দের আদান প্রদানেও বইয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেই অর্থে বইমেলা জ্ঞানচর্চার এক আনন্দ বিতরণের চমৎকার একটি উৎসব। এই উৎসবের মূল চালিকাশক্তি হলো, লেখক-প্রকাশক এবং পাঠক। তবে বলা যায়, শেষপর্যন্ত পাঠকরাই এই উৎসবকে ফলপ্রসূ করার একমাত্র নিয়ামকশক্তি। সুতরাং পাঠকের প্রতি সসম্মান অভিব্যক্তি প্রকাশ করেই বইমেলার নান্দনিক বিষয়ে কিছু কথা বলছি।
আমাদের বইমেলা বছরের এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয় যখন শীতের আবহ থাকে সহনীয় মাত্রায়। আবার এমন এক স্থানে এর অবস্থান যা-কিনা শহর তথা দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। মূলত বাংলা একাডেমিকে কেন্দ্র করেই যেহেতু বইমেলা, একাডেমির অবস্থানটাও এখানে হওয়াতে এর সৌন্দর্যে যুক্ত হয়েছে আরেক মাত্রা। এই স্থানটা এতটা অর্থবহ হয়েছে যে কারণে তার মধ্যে-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ অন্যতম। এই স্থান যাদের পদচারণায় মুখর থাকে তারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। আগামী দিনের দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রচনায় তাদেরই ভূমিকা থাকে বেশি। এখানে প্রতিদিন মেলার মতো মুখরতা বিরাজ করে এটাকে আরও উজ্জ্বল আরও প্রাণবন্ত মুখরতায় ভরিয়ে তোলে বইমেলায় উপস্থিত জনসমুদ্র। একটি মাসের বইমেলার রেশ বাকি ১১টি মাসেও প্রবহমান থাকে। লেখক-প্রকাশকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন প্রতিটি বছর। কিন্তু এই আগ্রহ শেষ পর্যন্ত হাপিত্যেশে ভরে উঠে অনেক সময়ে অনেক লেখক-প্রকাশকের অভিব্যক্তিতে। কেননা যে অর্থে আমরা বিরাট জনসমুদ্রকে পাঠক বলে সসম্মান সম্বোধন করি সেই অর্থ মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে যখন বেশিরভাগ আগন্তুক খালি হাতে বইমেলা থেকে বেরিয়ে পড়েন।
তখন মনে হয় বেশির ভাগ দর্শনার্থী বিনোদনের প্রত্যাশায় শুধু ঘুরতেই এসেছেন, বই কিনতে নয়। সুতরাং পাঠক কথাটি এদের সঙ্গে একেবারেই যায় না। এইজন্য আমরা কাকে দায়ী করব আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কের জন্ম দেয়। শিক্ষার্থীদের সঠিক কর্মসূচির আওতায় এনে সুশিক্ষা নিশ্চিত করাটা সোনার হরিণের মতো হয়ে গেছে। বই পাঠে যে আনন্দ আছে এবং এই অর্থবহ আনন্দটা তাদের ধরিয়ে দিতে আমরা প্রতিনিয়তই ব্যর্থ হচ্ছি সুশিক্ষিত লোক গড়ে তুলতে না পারলে পাঠক মিলবে কোথা থেকে। যদি শতভাগ লোক শিক্ষিত হয় আর এই শতভাগ থেকে শতকরা ১০ থেকে ২০ জন বই কিনে বই পড়ে তাহলে বাংলা একাডেমির মেলা বইশূন্য হতে পুরো মাস অপেক্ষা করতে হবে না। মোদ্দা কথা বইপড়ার মতো শিক্ষিত লোক তৈরি করতে ব্যর্থ হলে বইমেলার উৎসবকে ফলপ্রসূ করার চিন্তা করা বোকামি মাত্র।
বই পড়ে যে বিনোদিত হওয়া যায় তা আমরা প্রায় ভুলতেই বসেছি। কেউ কেউ আজকালকার ইন্টারনেটের যুগকে দায়ী করেন, প্রত্যেকের হাতে যে মোবাইল ফোন থাকে সেটিই বইকে তাদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছে। এটা সর্বৈব সত্য নয়। তার প্রমাণ, বিদেশের কোনো কোনো দেশে গেলে সেই দেশের মানুষের বইপড়া দেখে এটা টের পাওয়া যায়। বিশেষ করে যখন মোবাইল ফোনের প্রচলন হয়নি তখনো বই ক্রেতার সংখ্যা উলেস্নখযোগ্য ছিল না। শিক্ষায় পার্সেন্টেজে যদি আমরা এগিয়ে যেতে পারি-তখন পাঠকের সংখ্যাও বেড়ে যাবে। একথা স্মরণ রাখতে হবে যে-সবাই বই পড়বেন না, কেউ কেউ পড়বেন। এই 'কেউ কেউ'ই সংখ্যায় বাড়বে যখন শিক্ষিত শ্রেণি বাড়বে। এর ভেতরে আবার একটি কথা আছে, শুধু তথাকথিত শিক্ষিত নয়-যখন সুশিক্ষিত লোক বাড়বে। কেননা সংখ্যাধিক্য দেখানোর জন্য সার্টিফিকেট বিতরণের মাধ্যমে সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করা যায় না। আমাদের ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে বইমেলার প্রভাব ঢেউয়ের মতো প্রবহমান করতে গেলে বইপড়ার আনন্দটা শিক্ষার্থীদের পাইয়ে দিতে হবে। আর এটা স্কুল-কলেজ থেকেই শুরু করা সম্ভব, এ নিয়ে প্রায় সবসময় অনেক লেখক বুদ্ধিজীবীকে চেঁচামেচি করতে দেখা যায়। চেঁচামেচি বলছি এইজন্য যে, যারা এই বিষয়টা চিন্তা করলে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে তাদেরকেই এ নিয়ে ভাবতে হবে, অন্যরা ভাবলে লাভ নেই। কারণ সংশ্লিষ্টরা যে বিষয়টা বোঝেন না-এমন নয়। তারা বুঝেও কীসের মোহে যেন কাজ করেন না। আমরা বুঝলেও আমাদের কিছু করার নেই। ঘুমের মানুষকে জাগানো যায়, কিন্তু ঘুমের ভান করে পড়ে থাকলে, জাগাবে কার সাধ্য!
সুতরাং বইমেলাকে অর্থবহ করতে হলে শিক্ষিত জাতি নিশ্চিত করতে হবে এবং সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে বই পাঠের আনন্দটা ধরিয়ে দিতে হবে। আজকালকার ডিজিটাল যুগে গেস্নাবাল ভিলেজের যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে প্রত্যেকেই ইন্টারনেটে সংযুক্ত। মোবাইল ফোন দখল করে নিয়েছে আমাদের সময়ের বেশিরভাগ অংশ। এটা একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার। পৃথিবী এগিয়ে যাবে তার আপন গতিতে এবং মানুষেরও একটি নিজস্ব গতি আছে। এখানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হলো নদীর গতিপথে বাধা দেওয়ার শামিল। এতে কখনো কখনো হয়তো সাফল্য আসে তবে সেই সাফল্য নিশ্চিত করতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। আমাদেরও চেষ্টা করতে হবে। লেখক-প্রকাশকের মুখে হাসি ফোটাতে হলে প্রথম হাসিটা ফোটাতে হবে পাঠকের মুখে। পাঠক যখন বই কেনা শুরু করবে তখনই বইমেলা হয়ে উঠবে অর্থবহ। এই ক্ষেত্রে বইয়ের প্রচারণার একটি বিষয় প্রকাশকদের মাথায় রাখা উচিত। কোথায় কোন বই বের হলো, বইটি কাদের জন্য এবং কেন কেনা উচিত তা পাঠকের অবহিতকরণ জরুরি।
বইপড়ার আন্দোলন গড়ে তুলতে কিছু কিছু সংগঠনের তাৎপর্যতা আমাদের চোখে পড়ে এটা যদিও ভালো উদ্যোগ, এই উদ্যোগ অব্যাহত রেখেই আগে সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যালয়ের গন্ডি থেকেই সব উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের বইপড়ার অভ্যাসটা গড়ে দিতে হবে। এজন্য শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। আর এ উদ্যোগ সফল হলে দেখা যাবে সারাদেশ থেকে সত্যিকার পাঠকরাই মেলাতে উপচে পড়বে। নিত্যপণ্যের বাজারের মতো না-হলেও এর কাছাকাছি অবস্থায় চলে যাবে বইয়ের কেনাকাটা।
পরিশেষে আর একটি বিষয় উলেস্নখের দাবি রাখে, বইমেলা মূলত বাংলা একাডেমিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অবস্থানগত কারণে এখানে মেলা বসাটা জুতসই হয়েছে। একাডেমির সংকীর্ণ পরিসরের কারণে, এর বাইরে অনতিদূরে হলেও মেলার আবহ ক্ষুণ্ন হবে। তাই আমরা এই উদ্যানকেই স্থায়ী ভেনু্য হিসেবে রেখে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এ বছরও কিছু কথা চাউর হয়েছিল যে, গণপূর্ত বিভাগ এখানে মেলা করতে দেবে না। সব তর্কবিতর্ক শেষে কাঙ্ক্ষিত স্থানেই মেলা হচ্ছে; সুতরাং সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আবেদন এই স্থানকেই বইমেলার স্থায়ী স্থান হিসেবে আইনি জটিলতা পরিহার করে পাস করে দেওয়া হোক।
\হমেলার নান্দনিকতায় আরও কিছু বিষয় উলেস্নখের দাবি রাখে। আমাদের প্রতিভাধর স্থপতিদের কল্যাণে এমন পরিসরে মেলার অবকাঠামো তৈরি করা হয় যা কিনা এককথায় সর্বোচ্চ মাত্রায় নান্দনিক। দশনার্থী-পাঠকরা মুগ্ধ হয়ে ঘুরে ঘুরে মেলা দেখে কেউ কেউ দেখাতেই বই কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠে-প্রতিদিন মেলার বিকেলটা অপরূপ সৌন্দর্যে ভরে উঠে লেকের জলে আলোর প্রক্ষেপণে যে হৃদয়গ্রাহী আবহের সৃষ্টি হয় তা-ই মেলাকে চমৎকার একটি যুগলসন্ধ্যা উপহার দেয়। তরুণ-তরুণীরা এই দৃশ্য প্রাণভরে উপভোগ করে। শেষে বলি, মেলা তার কাঙ্ক্ষিত সাফল্যে পৌঁছার জন্য সব প্রতিবন্ধকতা দূর হোক, দূর হোক আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার যাবতীয় অনিয়ম-অব্যবস্থা।
বইমেলা নিয়ে আমার জিজ্ঞাসা
জহীর হায়দার
কবি
ঐতিহ্যবাহী জাতীয় গ্রন্থমেলা উপলক্ষে এ বছর আমার তিনটি কবিতার বইসহ একটি উপন্যাসও প্রকাশিত হবে। 'জহীর হায়দারের স্বদেশপ্রেমের কবিতা', 'কবিতার সময়কে জয় ক'রে ক'রে।' প্রকাশনা: নব সাহিত্য প্রকাশনী।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বইমেলা নিয়ে নানা প্রশ্ন, নানা জিজ্ঞাসা আমার। কিন্তু গ্রহণযোগ্য উত্তর পাই না কোথাও। গ্রন্থমেলা নিয়ে মূল কথা হচ্ছে, মেলার উদ্যোগ আয়োজন বরাবরই ভালো। তবে এই ভালোর পেছনে অনেক অন্ধকার এবং অনেক মন্দ দিকও আছে। যেসব সম্মিলিতভাবে সরকারি সহযোগিতায় সংশোধন অতি জরুরি হয়ে পড়েছে, তা না হলে দেশের লেখক এবং প্রকাশক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রতি বছর। তাছাড়া আমি মনে করি, দেশের জনপ্রিয় এই বার্ষিক গ্রন্থমেলাটি রাজধানীর মোহাম্মদপুর অথবা শেরেবাংলা নগর এলাকায় স্থানান্তর করা যেতে পারে। তাতে এই মেলা আরও বেশি জাঁকজমকপূর্ণ এবং আরও বেশি হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠবে। তবে হঁ্যা, এসবের সঙ্গে আরও একটি জোরালো প্রসঙ্গ এসে সামনে দাঁড়ায়। আর তা হচ্ছে : দেশে বর্তমানে যে অপ্রচলিত এক শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়েছে। এতে বই-পাঠক তো দূরের কথা, অদূর ভবিষ্যতে মেলা থেকে বই কিনে পড়ার মতো পাঠক একজনও আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। যা এই দেশ এবং এই জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে আমরা ধারণা।
বইমেলা কীভাবে
আধুনিক হবে ?
মোহাম্মদ শামসুল কবির
লেখক ও গবেষক
\হ
প্রতিবারের মতো এ বছরও বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী চত্বরে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। বাঙালির জীবনে এটি একটি মিলন মেলাও বটে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের জন্য। এবার পঞ্চমবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বইমেলা উদ্বোধন করবেন। গতবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের জন্য ১৫ জন লেখকের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এবার দেবেন ১৬ জন জ্ঞানীকে তথ্যানুযায়ী। গত বছর ২৩ সালে বই প্রকাশ হয়েছে ৩ হাজার ৭৩০টি এবং বিক্রি হয়েছিল ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই। গত ২০২২ সালের তুলনায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার বই বিক্রি কম হয়েছে।
এবার আলোচনায় আসা যাক, বইমেলাকে আরও কীভাবে প্রযুক্তির যুগে সুন্দররূপে গড়ে তোলা যায় সেটি ভাবার সময় এসেছে। এ জন্য প্রয়োজন অনেকেই বলে থাকেন বইয়ের মান ভালো নয়। ভালো বই প্রকাশ হচ্ছে না। এ জন্য প্রকাশক এবং লেখককে দোষারোপ না করে কীভাবে বই নির্ভুলভাবে ছাপা যায়, বই কীভাবে তরুণ প্রজন্মতে ভূমিকা রাখবে সেদিকে নজর দেওয়া। প্রযুক্তি তাড়নায় বইপড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে মানুষ। মেধা বিকাশ, দেশ ও জাতি গঠনে সমৃদ্ধশালীভাবে গড়ে তুলতে হলে বইপাঠের কোনো বিকল্প নেই। শুধু তাই নয় সামাজিক গণমাধ্যমের সঙ্গে নিয়ে উন্নত গবেষণাসুলভ বই যা দিয়ে শিক্ষার্থীর ও জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার কেটে যাবে ও আলোর দিকে ধাবিত হবে এবং বর্তমান তরুণ সমাজ কীভাবে বইপড়ায় আকৃষ্ট হবে এ জন্য দেশের পাঠাগারগুলো অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বইমেলায় তথ্যানুযায়ী জানা যায়, মেলায় মানুষের সংখ্যা প্রচুর সমাগম কিন্তু ক্রেতা কম। অনেকেই এটিও বলেন, যত মানুষ মেলায় আসে তার ২৫ শতাংশ যদি বই কিনত, বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করত। মেলায় আসা ১০ শতাংশ মানুষও বই কেনে না। এটিই সত্যি এবং বাস্তব। মেলায় ঘুরতে, বেড়াতে ও দেখতে আসে বেশিরভাগ মানুষ বা নারী ও পুরুষ। আবার কেউ আছে শুধু দেখতে আসে। আড্ডা মারতে আসে। কিন্তু যদি একটি করে বই কিনে যেত তাহলে গত বছরে জরিপে মেলায় এসেছে ৬৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪৬৩ জন মানুষ। ভাবুনতো একবার! যদি একটি করে বই কিনে নিয়ে যেত তাহলে আরও কতটি বই না বিক্রি হতো প্রকাশকের। লেখকদের বইও কাটতি হতো।
মেলায় বিভিন্ন রকমের বইয়ের স্টল থাকবে, এটিই স্বাভাবিক, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, ইতিহাস, সাহিত্য, অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান, রাজনৈতিক, ভূগোল, জীবনী গ্রন্থ, দর্শনের ইত্যাদি। কিন্তু দেশে যেখানে ৯০ শতাংশ মুসলিম সমাজ বসবাস করেন, তাদের চাহিদা অনুযায়ী মহাগ্রন্থ আসমানি কিতাব আল কোরআন, প্রসিদ্ধ হাদিসগুলো, তাফসির, ইসলামের ইতিহাসের ওপর গবেষণামূলক প্রবন্ধ, নবী করিম (সা.) থেকে শুরু করে সাহাবি ও মুসলিম মনীষীদের জীবনী গ্রন্থসহ বইয়ের মেলায় খুব অভাববোধ মনে হয়। এটি আমি সব সময় বাংলা একাডেমিকে বলে আসছি, তারা যেন বেশ ক'টি ইসলামি স্টল বরাদ্দ করে তাদের মেলায় স্থান করে দেন, তাতে পাঠক ও লেখকদের জন্য অনেক উপকারই হবে না, জ্ঞান সমৃদ্ধিশালী ঘটবে এবং চর্চা ও গবেষণার মাধ্যমে তারা আরও প্রচার ও প্রসার লাভ করতে থাকবে ইসলামকে মানুষ চিন্ততে পারবে। ইসলাম যে শান্তি ও মানবতার ধর্ম।
পরিশেষে বলি, বইমেলা নিঃসন্দেহে এটি বাঙালি জাতির জন্য মিলনমেলা। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন অব্যাহত থাকবে ইনশাআলস্নাহ। লেখক তার লেখনীর মাধ্যমে তার বই পাঠকদের উপহার দেবেন। বাংলা একাডেমি তার প্রকাশনার মাধ্যমে বইগুলো বিশ্বে প্রচার ও প্রসার ঘটাবেন এবং অনুবাদ সাহিত্যকে আরও উন্নত করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি বইমেলাকে আরও কীভাবে আধুনিক করা যায় সেদিকে নজর দেবেন। শিশুদের কীভাবে বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে পরিবারের সেটিও মাথায় রাখতে হবে। এই কামনায়।
নতুন বইয়ের গন্ধ
সমীর আহমেদ
কবি ও কথাসাহিত্যিক
দেখতে দেখতে আবার চলে এলো বাঙালির প্রাণের স্পন্দন অমর একুশে বইমেলা। মেলার পরিধি আগের মতো থাকলেও, আরও ২০টি নতুন প্রকাশনা সংস্থা স্টল বরাদ্দ পেয়েছে। বইবিমুখ এ সমাজে নতুন নতুন প্রকাশনা যোগ হওয়া এবং এতো এতো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দেখে সত্যি বিস্ময় লাগে। ১০ শতাংশ প্রকাশনীর সম্পাদনা বোর্ড আছে কি না সন্দেহ। গুণগত মানের বইয়ের জন্য প্রকাশনা শিল্পকে সরকারের কঠোর নীতিমালায় নিয়ে আসা উচিত। মানহীন বই পাঠকবিমুখতা আরও বাড়িয়ে তোলে। পাঠকের আত্মদহন, হতাশা ও বিভ্রম কাটে না। সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন ভালো বই, ভালো প্রকাশনা সংস্থা। ভালো লেগেছে এবার একুশে বইমেলার স্স্নোগান, 'পড়ো বন্ধু গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ'। জ্ঞানভিত্তিক সুষম সমাজ গড়তে লেখক-প্রকাশক-পাঠক সব সময় সব দেশেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এবারও কয়েকবার বইমেলায় যাওয়ার ইচ্ছে আছে। বাংলাদেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান 'ঐতিহ্য' থেকে আসছে আমার নতুন উপন্যাস, 'টঙ্ক'। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে কমরেড মনি সিংহ হাজংদের নিয়ে টঙ্ক প্রথা উচ্ছেদের জন্য জমিদারদের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। হাজং কৃষকরা স্স্নোগান দিতেন, 'জান দেবো, তবু ধান দেবো না'। ধানের জন্য এমন মর্মভেদী স্স্নোগান বিশ্বের আর কোনো দেশে হয়েছে কি না আমার জানা নেই। এ উপন্যাসে সামগ্রিক টঙ্ক আন্দোলন এবং হাজংদের সংস্কৃতি, মন ও মনন চিত্রিত করার প্রয়াস রয়েছে। সবশেষে, মেলায় গেলে নতুন বইয়ের গন্ধ পাই। খুব ভালো লাগে।