মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষা সবার কাছে অতি প্রিয়। ফাগুন এলেই পলাশে শিমুলে আগুন জ্বলে। ফাগুন এলেই আমাদের চেতনায় ভাষা শহীদের কথা জেগে ওঠে। ফেব্রম্নয়ারির এক তারিখ থেকে শুরু হয় বাঙালির প্রাণের গভীরে জমানো এক অনন্য সত্তা ও অনুভবের মাস ভাষার মাস। তাজা রক্তের মাধ্যমে এ মাসেই আমরা অর্জন করেছিলাম প্রিয় এই মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা। লেখক প্রকাশক ও পাঠকের মিলনমেলায় বাংলা একাডেমিকে ঘিরে অদ্ভুত এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয় পুরো ফেব্রম্নয়ারি মাসজুড়ে। বিশ্বে এমন নজির বিরল। বইমেলা বলতে যা বোঝায়, বাংলা একাডেমি আয়োজিত 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা' তা নয়। আন্তর্জাতিক বইমেলা মূলত লেখক, প্রকাশক আর বই বিক্রেতার সম্মিলন। সেখানে পাঠকের অংশগ্রহণ খুব বেশি নয়। বিশ্বে প্রথম বইমেলা শুরু হয় প্রায় ৫০০ বছর আগে। খ্রিষ্টীয় ১৫ শতকে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে। পরে ১৭০০ শতকে ইউরোপসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশ বইমেলার আয়োজন শুরু করে। বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাঙালির জাতিসত্তার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য, স্বাধীনতাসংগ্রামের চেতনা এর সঙ্গে যুক্ত। ফলে বিশ্বজুড়ে বাংলাভাষী বইপ্রেমী মানুষ যেখানেই অবস্থান করেন, ফেব্রম্নয়ারি তাদের গন্তব্য বাংলা একাডেমির বইমেলা। লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের পদচারণায় মুখরিত হয় বইমেলা।
'বইমেলা' কিংবা 'গ্রন্থমেলা' শব্দ দু'টির যে কোনো একটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশে বইমেলা। যে মেলা বইপ্রেমী মানুষের প্রাণে দোলা দেয়। কোনো এক অদ্ভুত জাদুবলে লাখো মানুষকে টেনে আনে একাডেমির বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণে। বর্ধমান হাউস ও এর আশপাশ ঘিরে জমে ওঠে লেখকদের জমজমাট আড্ডা। কাটে লেখক প্রকাশকদের নির্ঘুম রাত। প্রকাশিত হয় হাজার হাজার বই। নতুন বইয়ের মৌ মৌ গন্ধে মোহিত হয় মেলায় আসা ক্রেতা, দর্শনার্থী। বিক্রি হয় লাখ লাখ কপি বই। ভিড় ঠেলে প্রয়োজনীয় বইটি হাতে পাওয়ার পর আনন্দে ভরে ওঠে ক্রেতার মন। তারপর বইটি বগলদাবা করে প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নেওয়ার চেষ্টা। মঞ্চের সামনে বসে আলোচনা কিংবা দাঁড়িয়ে একটু গান শোনা। এসবই আমাদের কাছে খুব চেনা এবং জানা একটি বিষয়। কিন্তু আমরা অনেকেই এই মেলার ইতিহাস জানি না। অমর একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের কাছে ব্যাপকভাবে একুশে বইমেলা নামেই পরিচিত। প্রকাশক শুধু ফেব্রম্নয়ারি মাসে বই প্রকাশ করেন না। লেখক শুধু ফেব্রম্নয়ারির বইমেলাকে সামনে রেখে বই লেখেন না। পাঠকও শুধু ফেব্রম্নয়ারি মাসে বই কেনেন না। এ সবই একটি চলমান প্রক্রিয়া। বছরের যে কোনো সময় বই প্রকাশিত হবে, পাঠক তার পছন্দের বই বছরের যে কোনো দিন কিনবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশে লেখক, প্রকাশক ও পাঠক এক অদ্ভুত মিথস্ক্রিয়ায় আটকা পড়েছেন অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে। দেখা যায়, বাংলাদেশে বেশিরভাগ গ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে। বেশিরভাগ লেখকও একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে তার পান্ডুলিপি তৈরিতে মনোনিবেশ করছেন। পাঠকও বিশেষ বাজেট করছেন একুশে বইমেলা থেকে বই কেনার। আমাদের ঐতিহ্যের যত আয়োজন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা এখন তার শীর্ষে অবস্থান করছে একথা বলা যায় নির্দ্বিধায়। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বইমেলার ইতিহাস নিয়ে বললেন, 'বাংলাদেশে বইমেলার উদ্ভবের ইতিহাস খুবই কৌতূহলোদ্দীপক। বইমেলার চিন্তাটি এ দেশে প্রথমে মাথায় আসে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদদীনের। তিনি বাংলা একাডেমিতেও এক সময় চাকরি করেছেন। বাংলা একাডেমি থেকে ষাটের দশকের প্রথম দিকে তিনি গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। তিনি যখন বাংলা একাডেমিতে ছিলেন, তখন বাংলা একাডেমি প্রচুর বিদেশি বই সংগ্রহ করত। এর মধ্যে একটি বই ছিল ডড়হফবৎভঁষ ডড়ৎষফ ড়ভ ইড়ড়শং. এই বইটি পড়তে গিয়ে তিনি হঠাৎ দু'টি শব্দ দেখে পুলকিত বোধ করেন। শব্দ দু'টি হলো : 'ইড়ড়শ' এবং 'ঋধরৎ'. কত কিছুর মেলা হয়। কিন্তু বইয়েরও যে মেলা হতে পারে এবং বইয়ের প্রচার-প্রসারের কাজে এই বইমেলা কতটা প্রয়োজনীয়, সেটি তিনি এই বই পড়েই বুঝতে পারেন। ওই বইটি পড়ার কিছুদিন পরেই তিনি ইউনেসকোর শিশু-কিশোর গ্রন্থমালা উন্নয়নের একটি প্রকল্পে কাজ করছিলেন। কাজটি শেষ হওয়ার পর তিনি ভাবছিলেন বিষয়গুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবেন। তখন তার মাথায় আসে, আরে! প্রদর্শনী কেন? এগুলো নিয়ে তো একটি শিশু গ্রন্থমেলাই করা যায়। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। তিনি একটি শিশু গ্রন্থমেলার ব্যবস্থাই করে ফেললেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি) নিচতলায়।' তার মতে, এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম বইমেলা। এটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৫ সালে। শিশু গ্রন্থমেলা করে সরদার জয়েনউদদীন পুরোপুরি তৃপ্ত হতে পারেননি। আরও বড় আয়োজনে গ্রন্থমেলা করার তিনি সুযোগ খুঁজতে থাকেন। সুযোগটি পেয়েও যান। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জে একটি গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলায় আলোচনা সভারও ব্যবস্থা ছিল। সে সব আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৎকালীন প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল হাই, শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও সরদার ফজলুল করিম। এই মেলায় সরদার জয়েনউদদীন একটি মজার কান্ড করেছিলেন। মেলায় যে রকম বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন, উৎসুক দর্শকরাও এসেছিলেন প্রচুর, বইয়ের বেচাকেনাও মন্দ ছিল না, কিন্তু তাদের জন্য ছিল একটি রং-তামাশাময় ইঙ্গিতধর্মী বিষয়ও। মেলার ভেতরে একটি গরু বেঁধে রেখে তার গায়ে লিখে রাখা হয়েছিল 'আমি বই পড়ি না'। সরদার জয়েনউদদীনের এই কান্ড দর্শকদের ভালোভাবেই গ্রন্থমনস্ক করে তুলেছিল বলে অনুমান করেন শামছুজ্জামান খান। এখানেই সরদার জয়েনউদদীন থেমে থাকেননি। ১৯৭২ সালে তিনি যখন গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক, তখন ইউনেসকো ওই বছরকে 'আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ' হিসেবে ঘোষণা করে। গ্রন্থমেলায় আগ্রহী সরদার জয়েনউদদীন এই আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ উপলক্ষে ১৯৭২ সালে ডিসেম্বর মাসে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। সেই থেকেই বাংলা একাডেমিতে বইমেলার সূচনা। ১৯৭২ সালে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানে কোনো বইমেলা হয়নি। তবে বাংলা একাডেমির দেয়ালের বাইরে স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশনীর কিছু বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন। তার দেখাদেখি মুক্তধারা প্রকাশনীর চিত্তরঞ্জন সাহা এবং বর্ণমিছিলের তাজুল ইসলামও ওভাবেই তাদের বই নিয়ে বসে যান। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বিশাল জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মেলার উদ্বোধন করেন। সে উপলক্ষে নিজামী, চিত্তবাবু এবং বর্ণমিছিলসহ সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়ালঘেঁষে বই সাজিয়ে বসে যান। সে বছরই প্রথম বাংলা একাডেমির বইয়েরও বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে একটি স্টলে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। এভাবেই বিচ্ছিন্ন বই বিক্রির উদ্যোগের ফলে ধীরে ধীরে বাংলা একাডেমিতে একটি বইমেলা আয়োজনের জন্য গ্রন্থমনস্ক মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। ১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে প্রথম 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা'র আয়োজন সম্পন্ন করেন। কিন্তু স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দু'জন ছাত্র নিহত হয়। ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর সেই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। এরপর প্রতি বছর বইমেলা বিশাল থেকে বিশালতর আকার ধারণ করে। মেলা উপলক্ষে বিপুল বই প্রকাশিত হয়। বলা চলে এই মেলাকে উপলক্ষ করেই বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। এখন অনেক নতুন প্রকাশক এই শিল্পে এসেছেন। পাঠকের সংখ্যাও প্রতি বছর বাড়ছে। এই মেলা এক মাস ধরে চলে। পৃথিবীতে আর কোনো বইমেলাই এত দিন ধরে চলে না। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে এটি পৃথিবীর দীর্ঘদিনব্যাপী আয়োজিত একটি বইমেলা। এই মেলায় মানুষের আগ্রহ এতই বেশি যে, শুধু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকেও গ্রন্থপ্রেমী বাঙালিরা এতে অংশ নেন। কিন্তু বাংলা একাডেমির ভেতরে অনেক নতুন ভবন এবং অবকাঠামো তৈরি হওয়ার ফলে এখানে আর বইমেলা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বইমেলার পরিসর বাড়িয়ে এর একটি বড় অংশকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে অমর একুশের স্মৃতিবাহী এই মেলাটির ঐতিহ্যের বিস্তার ঘটল। যে মেলা একুশের মহান ঐতিহ্যকে ধারণ করে এত বিশাল আকার ধারণ করেছে, তা এখন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল স্থান সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানেও সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই স্থান থেকেই ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বাঙালির মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন। এখানেই রয়েছে স্বাধীনতাস্তম্ভ এবং শিখা চিরন্তন। আরও আছে মুক্তিযুদ্ধের মু্যরাল ও স্বাধীনতা-জাদুঘর। তাই এখানে বইমেলা সম্প্রসারিত হওয়ায় বাংলাদেশের বাঙালির জাতিসত্তার উদ্বোধনের স্মৃতিবাহী একুশের ঐতিহ্যের সঙ্গে স্বাধীনতাসংগ্রামের চেতনা যুক্ত হয়ে মেলাটি এখন নতুন আঙ্গিক ও পরিসর নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। আবার কারো মতে বইমেলার ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায় ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই নিয়ে বইমেলার সূচনা করেন। এই ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা বই। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি একাই বইমেলা চালিয়ে যান। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি; এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা'র আয়োজন সম্পন্ন করেন। সেই ৩২টি বইয়ের মেলা আজ বাঙালির সবচেয়ে স্বনামধন্য বইমেলায় পরিণত হয়েছে। বাংলা একাডেমি চত্বরে ছেড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত হয়েছে। বইমেলায় শিশুপ্রহরের পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্য কর্নার করার কথা ভাবা যায়। যুক্ত করা যেতে পারে অনুবাদ কর্নার। লিটলম্যাগ চত্বরের পাশাপাশি হতে পারে। লিটলম্যাগ কর্তৃপক্ষের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। লিটলম্যাগ একটি আন্দোলনের নাম। লিটলম্যাগ চত্বরকে গুরুত্বপূর্ণস্থানে রাখতে হবে। বিশ্বসাহিত্য নিয়ে আলোচনা ও প্রজেক্টরের মাধ্যমে সে আলোচনা দেখানোর ব্যবস্থা করা যায়। কলকাতার বইমেলার মতো প্রতিদিন আলাদা দেশের থিম নির্ধারণ করা যেতে পারে। বইমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি একটি কেন্দ্রীয় সাহিত্য মেলার আয়োজন করলে ভালো হয়। এতে সারাদেশের তৃণমূলের কবি লেখকরা অংশগ্রহণ করতে পারে। জাতীয় কবিতা উৎসবের মতো জাতীয় সাহিত্য মেলার আয়োজন করতে পারলে তৃণমূলের কবি ও লেখকদের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি হবে সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে।
সাম্প্রতিক সময়ে ই-বুকের দাপটে মুদ্রিত বই কোণঠাসা বলে অনেকে মনে করেন।
মুদ্রিত বইয়ের স্পর্শ, ঘ্রাণ, ইচ্ছামতো পড়ার স্বাধীনতা ই-বুকে পাওয়া যায় না। একটি মুদ্রিত গ্রন্থ তৈরিতে যতগুলো পর্ব, লেখক-প্রকাশকের যত আবেগ জড়িয়ে থাকে, তা ই-বুকে সম্ভব নয়। পাঠকও একটি নতুন মুদ্রিত গ্রন্থ নিয়ে যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, ই-বুক নিয়ে তেমনটা নয়। তারপরও নতুন প্রজন্মের বিশাল একটি অংশ ক্রমেই ই-বুকে ঝুঁকছে। এটিকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। মুদ্রিত বই আর ই-বুক পাশাপাশি হাত ধরে বেড়ে উঠুক সেটাই প্রত্যাশা। অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুধু বইয়ের মেলা নয়, লেখক পাঠকের মিলনমেলা, মহান ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের স্মৃতি অনুভবের এক অনুপম উপলক্ষ। বই হোক মানুষের নিত্যসঙ্গী। বই হোক বিনোদনের সেরা মাধ্যম।