শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সুরের জাদুকর কমল দাশ গুপ্ত

জোবায়ের আলী জুয়েল
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সুরের জাদুকর কমল দাশ গুপ্ত

কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার কমল দাশ গুপ্ত ১৯১২ সালের ২৮ জুলাই বাংলাদেশের নড়াইল (তৎকালীন যশোর) জেলার কালিয়া থানার বেন্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা তারা প্রসন্ন দাশ গুপ্ত ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী।

কমল দাশ গুপ্তের শিক্ষা জীবন শুরু কলকাতায়। ১৯২৮ সালে তিনি ক্যালকাটা একাডেমি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরবর্তী সময়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। দু'বছর পর পারিবারিক বিপর্যয়ের কারণে পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে। পরে কুমিলস্না ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে তিনি বি.কম পাস করেন। উত্তর ভারতে মীরার ভজনে সুরের প্রয়োগ বিষয়ে গবেষণা করে তিনি ১৯৪৩ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট অব মিউজিক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছিলেন খেয়াল, গজল, নাৎ, হামদ, আধুনিকসহ সব ধরনের সঙ্গীতের দক্ষতার অধিকারী।

কমল দাশ গুপ্তরা ছিলেন তিন ভাই আর তিন বোন। প্রত্যেকেই সঙ্গীতে দক্ষতা অর্জন করেন এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। উলেস্নখ্য, তারা সবাই নজরুলের গান গেয়েই প্রসিদ্ধ লাভ করেছিলেন। তাদের মধ্যে বিমল দাশ গুপ্ত, সুবল দাশ গুপ্ত, সুধীরা সেন গুপ্তা, ইন্দিরা দাশ গুপ্তার নাম বিশেষভাবে উলেস্নখযোগ্য। কমল দাশ গুপ্তের জ্যেষ্ঠভ্রাতা বিমল দাশ গুপ্তের কাছেই কমল দাশ গুপ্তের সঙ্গীতে হাতে খড়ি। পরে দিলীপ কুমার রায়, কৃষ্ণচন্দ্র দে, রামকৃষ্ণ মিশ্র, ওস্তাদ জমির উদ্দিন খাঁর কাছে সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন। তার সর্বশেষ সঙ্গীত গুরু হিসেবে জমীর উদ্দিন খাঁ' এর নামই বিশেষভাবে জানা যায়।

১৯৩০ সালের কাছাকাছি সময়ে কমল দাশ গুপ্ত সুরারোপিত প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। গান দুটি ছিল 'গানের মালা গেঁথে গেঁথে' ও 'কতকাল আমি'। স্বকণ্ঠে কমল দাশ গুপ্তের প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অর্থাৎ প্রথম সুর সৃষ্টি ও গান রেকর্ড প্রায় একই সময়ে পাশাপাশি শুরু হয়।

সুরের রাজ্যে কমল দাশ গুপ্ত ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ দুই দশক ধরে যে সুর সষ্ট্রা সবাইকে ছাড়িয়ে বাংলা আধুনিক গান ও হিন্দি বা উর্দু গীতকে জনপ্রিয়তার এক চূড়ান্ত শীর্ষে পৌঁছাতে সমর্থ হয়েছিলেন- তিনি হলেন কমল দাশ গুপ্ত। তিনি পাশ্চাত্য সঙ্গীতে পাঠ নেন এইচএমভির অক্রেস্টা পরিচালক নিউম্যানের কাছে আর প্রায় পাঁচশ' রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখেন, ব্রজেন গাঙ্গুলী ও অনাদি দস্তিদারের কাছে।

কমল দাশ গুপ্ত সারা জীবনে প্রায় আটহাজার ৫০০ গানে সুরারোপ করে গেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ গানই জনপ্রিয়তার অতুল শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০০টি নজরুল সঙ্গীত রয়েছে। কমল দাশ গুপ্তের সুরের বৈচিত্র্য ছিল অবিশ্বাস্য। খেয়াল, রাগ প্রধান গান, ভজন, কীর্তন, কাওয়ালি, ইসলামী সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত, আধুনিক বাংলা গান, উর্দু ও হিন্দি গীত, গজল, লোকসঙ্গীত, মার্চ সঙ্গীত ও সিনেমার গানের প্রতিটি শাখায় রয়েছে তার অবিস্মরণীয় সুরের ঝংকার। সংখ্যায়, বৈচিত্র্য ও গুণগত মান উৎকর্ষে সমগ্র উপমহাদেশের সঙ্গীত জগতে তাকে অতিক্রম করার মতো অবদান আর কোনো সুরকারের নেই বলে অনেক সঙ্গীত বিশেষজ্ঞরাই মনে করে থাকেন।

এইচএমভি প্রামোফোন কোম্পানিতে ঢুকে প্রায় ২৩ বছর বয়সে সঙ্গীত পরিচালনা ও গানের সুর করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। কমল দাশ গুপ্ত খুব কম সময়ের মধ্যে তার নিরলস প্রতিভা ও নিষ্ঠার গুনে বাংলা গানের জগৎ ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন সর্ব ভারতীয় পর্যায়ে। তার সুরের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন বলেই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কমল দাশ গুপ্তকেই দিয়েছিলেন অনুমোদন ছাড়াই তার গানের সুর করার অধিকার। তখন কাজী নজরুল ইসলাম রচিত গানের প্রশংসা সবার মুখে মুখে। বাংলার ঘরে ঘরে এসব গান তৎকালীন গ্রামোফোন যন্ত্রে যখন বাজত, শ্রোতারা তন্ময় মুগ্ধ হয়ে শুনতেন।

নজরুল আর কমল দাশ গুপ্ত তারা দু'জন ছিলেন যেন মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। একই বৃন্তে দুটি ফুল। হিজ মাস্টার্স ভয়েসে কমল দাশ গুপ্ত এক মাসে ৫৩টি গান রেকর্ড করে সে সময়ে উপমহাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন। রেকর্ডসংখ্যক গানে সুরারোপের জন্য ১৯৫৮ সালে এইচএমভিতে তার সিলভার জুবিলি অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বাঙালিদের মধ্যে সর্বপ্রথম উর্দু ভাষায় কাওয়ালি গেয়েছিলেন।

নজরুল ইসলাম ছিলেন গ্রামোফোন যুগে সফল গীতিকার। শুধু গীতিকারই নন, আধুনিক বাংলা গানের জনকও ছিলেন তিনি। সে যুগের সেরা কম্পোজার কমল দাশগুপ্তকে (১৯১২-১৯৭৪ খ্রি.) নিয়ে আসেন কাজী নজরুল ইসলাম গ্রামোফোন কোম্পানিতে (১৯৩২ খ্রি.) এবং তারই হাতেই সৃষ্টি হয় বাংলা গানের স্বর্ণ যুগ। কাজী নজরুলের স্নেহ ধন্য হয়ে ওঠা কমল দাশ গুপ্তের সঙ্গীত জীবনের এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। এতে তার সঙ্গীত জীবনের মোড় ঘুরে যায়। নজরুলের কথা ও কমল দাশ গুপ্তের অসাধারণ সুর আর গায়কীর গীতি সুধায় সেদিন যে আবহ সৃষ্টি হয়েছিল তার মূলেই ছিলেন কমল দাশ গুপ্ত এবং পরোক্ষ ভাবে প্রণব রায়, মোহিনী চৌধুরী, যুথিকা রায় ও জগন্ময় মিত্র। সুতরাং, একথা একটু জোর দিয়েই বলা যায়, নজরুলপরবর্তী দশকে কমল দাশ গুপ্তের সুর আর প্রণব রায়ের কথাই ছিল বাংলা গানের প্রধান ধারা। বাংলা চলচ্চিত্রের সুরকার হিসেবেও কমল দাশ গুপ্ত প্রভুত খ্যাতি অর্জন করেন। তার সুর দেয়া ও গাওয়া 'তুফান মেল' 'শ্যামলের প্রেম' 'এই কিগো শেষ দান' চলচ্চিত্রের গানগুলো এক সময় বিপুল জনপ্রিয় ছিল। অনেক হিন্দি ছায়াছবিতেও তিনি দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। তিনি প্রায় ৮০টি ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। উলেস্নখ করা যেতে পারে, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রতিষ্ঠিত আজাদ হিন্দু ফৌজের 'ম্যাচিং সং'য়ের সুর তারই দেয়া। এছাড়া তিনি সুর দিয়েছেন হায়দরাবাদের নিজামের গোল্ডেন জুবলির বিশেষ সঙ্গীতেও ভারতীয় রণসঙ্গীতে 'কদম কদম বারহায়ে যা' গানে।

কমল দাশ গুপ্ত গ্রামোফোন কোম্পানিতে প্রথম জীবনে একজন তবলা বাদক হিসেবে প্রবেশ করে বাজাতেন ম্যান্ডেলিনি ও জাইলোফোন। তার উদ্ভাবনী শক্তি, মৌলিক প্রতিভা ও অসামান্য মেধা তাকে অচিরেই খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়। তার রক্তে যে গান ছিল তা মসৃণ হয়েছে নজরুলের সান্নিধ্য পেয়ে। আগেই উলেস্নখ করা হয়েছে তিনি শুধু বাংলা ভাষায় নয়, হিন্দি, মারাঠি, তামিল, উর্দু প্রভৃতি ভাষার গানেও সুরারোপ করেন।

নজরুল ইসলামের গান তার ভিত গড়ে দিলেও প্রণব রায়, অজয় ভট্টাচার্য, মোহিনী চৌধুরী, শৈলেন রায়, গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার, শ্যামল গুপ্ত, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিল ভট্টাচার্য রচিত গানে সুর সৃষ্টির মাধ্যমে কমল দাশ গুপ্ত শুধু জনপ্রিয় হয়ে ওঠেননি, সৃষ্টি করেন বাংলা গানের একটি নতুন ধারা। তিনি বাংলা ছবির সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে চারবার ও হিন্দি ছবির জন্য একবার মোট পাঁচবার শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার লাভ করেন। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তার শেষ ছবি 'বধূবরণ'। সমগ্র উপমহাদেশে সঙ্গীত জগতে তিনি ছিলেন অবিস্মরণীয় প্রতিভাধর সুরকার।

প্রথিতযশা কণ্ঠশিল্পী ফিরোজা বেগম তৎকালীন পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকাতে থাকতেন। সঙ্গীতের প্রয়োজনে কলকাতাতে প্রায়ই যাওয়া আসা ছিল তার। সে ধারাবাহিকতায় তিনি কমল দাশ গুপ্তের সান্নিধ্য লাভ করেন এবং তার কাছে গান শেখার সুযোগ লাভ করেন। ধীরে ধীরে তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে এবং শিল্পী ফিরোজা বেগম মনে প্রাণে কমল দাশ গুপ্তকে ভালোবাসতেন এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৫ সালে উভয়েই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন কমল দাশ গুপ্তের বয়স ছিল ৪৩ বছর। বিয়ের চার বছর পরে ৪৭ বছর বয়সে ধর্মান্তরিত হয়ে তিনি ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন এবং তার নাম হয় কাজি কামাল উদ্দিন। কলকাতায় তাদের তিন সন্তান তাহসীন, হামিন ও শাফিনের জন্ম হয়। ১৯৬৭ সালে কমল দাশ গুপ্ত সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন স্থায়ীভাবে। কিন্তু ঢাকায় আসাটা যেন কমল দাশ গুপ্তের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এখানে তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েন। চেয়েছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গীতকে তিনি ঢেলে সাজাবেন কিন্তু কার্যত তা' সম্ভবপর হয়নি। ইসলাম ধর্মগ্রহণ করার দরুণ তদানীন্তন পাক-ভারত দু'দেশেই তিনি হয়ে পড়েন বেশ উপেক্ষিত। আমাদের লজ্জা ও দায় এই যে, কমল দাশ গুপ্ত এক সময় খুবই দরিদ্রতার দরুণ ঢাকার হাতির পুলে 'পথিকার' নামে একটি মুদিখানার দোকান খুলেছিলেন।

জীবন সায়াহ্নে অল্প কিছুদিন বাংলাদেশ বেতারের ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস এ কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এ সময় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তাকে জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত করেন। বলা যায়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এটি একটি মহৎ কাজ করে ছিল।

এই বরেণ্য কৃতিশিল্পী কমল দাশ গুপ্ত যৌবনে ১৯৪৬ সালে সরকারকে সাইত্রিশ হাজার টাকা আয়কর দিতেন। মোটর গাড়ি ছাড়া কখনোই চলতেন না। সেই কমল দাশ, যুথিকার প্রেমের প্রত্যাখান, পারিবারিক সংকট ও নাথ ব্যাংকে লালবাতি জ্বলায় নিঃস্ব পুঁজি হারিয়ে একেবারে রিক্ত হয়ে পড়েন। তার বাড়ির বিশ্বস্ত ভৃত্য অবশিষ্ট যেটুকু জমি তার ছিল তাও নিয়ে বিক্রি করে একদিন উধাও হয়ে যায়। আর্থিক ও মানসিকভাবে কমল দাশ গুপ্ত সর্বহারা ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এ এক নিয়তির নির্মম পরিহাস।

১৯৭৪ সালের ২০ জুলাই বঙ্গদেশের একজন বরেণ্যকৃতী শিল্পী ও সুরকার কমল দাশ গুপ্তকে অনাদারে অবহেলায় এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় মাত্র ৬২ বছর বয়সে (১৯১২ খ্রি.-১৯৭৪ খ্রি.) নীরবে বাংলাদেশ থেকে চিরবিদায় নিতে হলো। মৃতু্যর কয়েক ঘণ্টা আগে যখন তাঁকে পোস্ট গেজেটেড মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হয় তখন তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট অথবা একটি কেবিনে ভর্তি করার জন্য তার অনুরাগী ও স্বজনরা সরাসরি হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের অনুরোধ করতে থাকেন। তখন তারা বারবার জিজ্ঞেস করছিল যে কমল দাশ গুপ্ত একজন প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা কিনা। সবাই বলছিল সঙ্গীতের এই গ্র্যান্ড মাস্টারকে অবহেলা করবেন না। এখনই দ্রম্নত চিকিৎসা দেন। কিন্তু কর্তব্যরত ডাক্তাররা বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলেন একই কথা। তিনি ক্লাস ওয়ান গেজেটেড অফিসার কিনা? সেই অসাধারণ প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আগেই কমল দাশ গুপ্ত ছেড়ে গেলেন এই পৃথিবীর মায়া।

কমল দাশ গুপ্ত বাংলা সঙ্গীতের এক অবিস্মরণীয় নাম সঙ্গীতের মুকুটহীন সম্রাট। এই সঙ্গীত বোদ্ধা সঙ্গীতে রেখে গেছেন তার উত্তরসূরি হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমেদকে। দুজনই বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা।

কমল দাশ গুপ্ত বিরল সুর স্রষ্টা হিসেবে বাংলাগানের জগতে রীতিমতো স্থায়ী আসন পেতে আছেন। তার সুরারোপিত বিখ্যাত বাংলা গানের কয়েকটি নমুনা তুলে ধরা হলো-

আমি ভোরের যুথিকা (যুথিকা রায়), সাঁঝের তারকা আমি (যুথিকা রায়), এমনি বরষা ছিল সেদিন (যুথিকা রায়), চরণ ফেলিও ধীরে ধীরে প্রিয় (যুথিকা রায়), আমারি সমাধি পরে (যুথিকা রায়), মেনেছি গো হার মেনেছি (জগন্ময় মিত্র), ভালোবাসা মোরে ভিখারি করেছে তোমারে করেছে রানী (জগন্ময় মিত্র), তুমি কি এখন দেখিছো স্বপন (জগন্ময় মিত্র), তুমি মোর জীবনে আসিও ফিরে (জগন্ময় মিত্র), এই কিগো শেষ দান, বিরহ দিয়ে গেলে (জগন্ময় মিত্র), আমি ভুলে গেছি তব পরিচয় (জগন্ময় মিত্র), আমার দেশে ফুরিয়ে গেছে ফাগুন (জগন্ময় মিত্র), পৃথিবী আমারে চায় (সত্য চৌধুরী), যেথা গান থেমে যায় (সত্য চৌধুরী), আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়, তুমি যে বহ্নি শিখা (সত্য চৌধুরী), জেগে আছি একা, জেগে আছি কারাগারে (সত্য চৌধুরী), আমি বনফুল গো, ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে, আমি বনফুল গো (কানন দেবী), যদি ভালো না' লাগে তবে দিয়ো না মন (কানন দেবী), চলে তুফান মেল (কানন দেবী), ঘুমের ছায়া চাঁদের চোখে এ মধু রাত নাহি বাকি (তালাত মাহমুদ), দুটি পাখি দুটি তীরে, মাঝে নদী বহে ধীরে (তালাত মাহমুদ), সেদিন নিশীথে বরিষণ শেষে চাঁদ উঠেছিল বনে (হেমন্ত), তোমার জীবন হতে (হেমন্ত)। এছাড়া তার সুরারোপিত আরো শ্রেষ্ঠ বাংলা গানগুলো হলো-

শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে, যদি আপনার মনে মাধুরী মিশায়ে, চরণ ফেলিও ধীরে ধীরে প্রিয়। নিশীথে ঘুম ভেঙে যায়, তুমি হাতখানি যবে রাখো মোর হাতের পরে, আমার যাবার সময় হলো, ঘুমের ছায়া চাঁদের চোখে, কতদিন দেখিনি তোমায়, হার মেনেছি গো হার মেনেছি, মম যৌবন সাথী বুঝি এলো, বিফলে যামিনী যায়, কে আজি দিল দোলা তখন ভাঙেনি প্রেমের স্বপন খানি, যাদের জীবন ভরা শুধু আঁখি জল, ভেসেছে হাল ছিঁড়েছে পাল, জানি জানি গো মোর শূন্য হৃদয় দেবে ভরি, এমনি বরষা ছিল সেদিন, একি অপরূপ রূপে মা' তোমায় হেরিনু পলস্নী জননী, ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি, ও আমার দেশের মাটি, বুলবুলি নীরব নার্গিস বনে, যবে তুলসী তলায় প্রিয় সন্ধ্যা বেলায়, পথহারা পাখি কেঁদে মরে একা, আমি চাঁদ নহি অভিশাপ, গভীর নিশীথে ঘুম ভেঙে যায়, আগুন জ্বালাতে আসিনি গো এসেছি দেয়ালি জ্বালাতে, এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি- খোদা তোমার মেহের বাণী ইত্যাদি।

তিনি সুর সৃষ্টির পাশাপাশি বেশ কিছু গানও রচনা করেন। তার মধ্যে 'মম যৌবন সাথী বুঝি এলো,' 'বিফলে যামিনী যায়', 'কে আজি দিল দোলা' উলেস্নখযোগ্য। গান তিনটি সুরারোপ করে তিনি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে রেকর্ড করেন।

সে আমলে কমল দাশ গুপ্ত গ্রামোফোন রেকর্ড, চলচ্চিত্রে নিজের একচ্ছত্র রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তালাত মাহমুদ, কানন দেবী, কুন্দলাল সায়গল, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, আব্বাস উদ্দিন, সত্য চৌধুরী থেকে শুরু করে তৎকালীন প্রথিতযশা এমন কোনো শিল্পী ছিলেন না যিনি তার সুরে গান করেননি। আর যুথিকা রায়ের সঙ্গে তো তিনি রীতিমতো জুটিবদ্ধ হয়ে একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে গেছেন।

এছাড়াও তিনি অজস্র গীত, গজল, উর্দু, হিন্দি সিনেমা, বাংলা সিনেমা, ইসলামী নাৎ, লোকসঙ্গীত, দেশাত্মবোধক, আধুনিক গানের জনপ্রিয় সুরকার ছিলেন।

এই নিবেদিত সুরস্রষ্টা, সুরের জাদুকর আজীবন বেঁচে থাকবেন হাজারো শ্রোতার কর্ণকুহরে, হৃদয়ের আঙিনায় তার কর্মে, সুরে আর সঙ্গীত সৃষ্টিতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে