আমার সেলফোন অবিরত বাজছে। স্ক্রিনে ভাসছে রত্না হকের নাম। কারণে অকারণে যখন তখন এই মহিলার ফোন কলটা আগের চেয়ে ইদানীং আমার বেশ অসহ্য লাগে। ইচ্ছে করেই অনেক সময় কল রিসিভ করি না। না করেও অবশ্য উপায় নেই। যতক্ষণ রিসিভ না হবে, ততক্ষণ কল বাজতেই থাকবে। রিসিভ হলেই ওপার থেকে রত্না হকের বাঁধভাঙা প্রশ্ন- 'কেমন আছ, বাবু? নাস্তা করেছ? আজ কলেজে যাওনি? শরীর খারাপ করছে'সহ দুনিয়ার যত সব হাবিজাবি প্রশ্ন। আমিও তখন সুবোধ ছেলের মতো রত্না হকের সারি সারি প্রশ্নের সারি সারি জবাব দিয়ে যাই। ফোনে কথা বলার সময় সতর্ক থাকি যেন আমার কোনো কথায় রত্না হক কষ্ট না পান। যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শনেও তখন আমি মনোযোগী হয়ে ওঠি। এত কিছুর পরও রত্না হক আমার কাছে চিরকাল ঘৃণার পাত্রী। দূর থেকে আমি তার অমঙ্গল কামনা করি। তার নিপাত যাক- আলস্নাহর কাছে এমন প্রার্থনাও করি কখনো কখনো। আড়াল থেকে তার প্রতি আমার এক পৃথিবী ঘৃণা কোথা থেকে আসে কে জানে। চোখের আড়ালে যে মহিলা আমার কাছে ঘৃণিত, অথচ তার সঙ্গে ফোনে আমার কথা বলার মুড দেখে কেউ কখনো বুঝবে না ওপারের মহিলাটিকে আমি সারা জীবন অভিশাপ দিচ্ছি। হয়তো বা তার মিষ্টি মধু মাখানো ভালোবাসার সব বাক্যের কাছে আমার সমস্ত ঘৃণা আর ক্ষোভ গৌণ হয়ে ওঠে। ভালোবাসা জিনিসটার বুঝি এমনই শক্তি।
রত্না হকের কল রিসিভ করতেই ওপার থেকে রিনরিনে গলা- 'বাবু, আজ দুপুরে আমার চেম্বারে আসতে পারবে? অনেক দিন হয় তোমাকে দেখি না।' রত্না হকের এমন আহ্বানে আমিও কী করে যেন বলে ফেললাম- 'পারব না কেন? অবশ্যই পারব।' লাইন কেটে দেওয়ার পর আমার মনে হলো আমি তার প্রস্তাব নাও গ্রহণ করতে পারতাম। বারবার এই মহিলার মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছে দিন দিন আমার মরে যাচ্ছে। একবার ভাবলাম তার চেম্বারে যাব না বা দেখা করব না বলে একটা এসএমএস লিখে দিই। ম্যাসেস অপশনে গিয়ে ম্যাসেসও লিখলাম। কেন জানি সেটা আর সেন্ট করা হলো না।
আমার হাতে মোবাইল দেখে দাদি মা বললেন, 'ডাক্তার হাসনাতকে জিজ্ঞেস করত, তোর বাবাকে ফেনাজিন ইঞ্জেকশন কখন দেব, সকালে না রাতে?'
পাশের ঘর থেকে বাবা উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে বেসুরে গাইছেন- 'তুহি মেরে মন্দির, তুহি মেরে পূজা...।' আমার বাবা জুলফিকার হোসেন একজন মানসিক রোগী। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে বাবাকে মানসিক ভারসাম্যহীনভাবে দেখে আসছি। প্রতি মাসে তাকে একটি করে ফেনাজিন ইঞ্জেকশন দিতে হয়। বাবার রোগ এখন কিছুটা উন্নতির দিকে। তবুও তাকে সেই আগের মতোই পায়ে শেকল বেঁধে রাখতে হয়। তা না হলে তিনি সেই কবেই নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন। ছোটবেলায় আমি দেখতাম বাড়িতে অচেনা কেউ এলে বাবা তাদের অসভ্য ভাষায় গালি দিতেন এবং হাতের কাছে যা পেতেন, তা দিয়ে অতিথিদের মারতে আসতেন। বাবার সমস্ত শরীর তখন ক্ষুধার্থ সিংহের মতো কাঁপত। আমি ভয়ে দাদিমা'র আঁচল তলে লুকিয়ে থাকতাম।
রত্না হকের চেম্বারে যখন পৌঁছি, তখন বেলা আড়াইটা। চেম্বারে আজ তেমন রোগী নেই।
রত্না হক প্রতিবারের মতো এবারও আমার দিকে হা করে অনেকক্ষণ অপলক তাকিয়ে রইলেন। তার এই ব্যাপারটা আমার বেশ অসহ্য। কেউ আমার দিকে পলকহীন তাকিয়ে থাকলে আমার ভারী লজ্জা হয়। 'পুরুষের লজ্জা বেমানান'- এই বাণী দিয়ে সব সময় আমি আমার বন্ধুমহলে বড় বড় ভাষণ দিলেও প্রকৃত অর্থে সেই আমিই ভীষণ লজ্জার মহাসাগর।
রত্না হক মলিন কণ্ঠে বললেন, 'বাবু, তোমার কী শরীরের কোথাও জখম হয়েছে?' কপাল দলা করে জবাব দিলাম- 'না তো! আপনার এমন ধারণা হলো কেন?' হিজাবপরা রত্না হক মিনমিন সুরে বললেন, 'কাল রাতে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। তুমি কলেজ থেকে পিকনিকে যাচ্ছ। একটা ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে পিকনিকের বাস বিধ্বস্ত। রক্তাক্ত স্টুডেন্টদের লাশ পড়ে আছে, কেবল তুমিই জীবিত। তোমার কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।' এই বলে রত্না হক কাঁদতে লাগলেন এবং আমি অনেকটা অবাকই হলাম। মানুষের চোখের জল এত সস্তা! গভীর শোক ছাড়া চোখে জল কম আসে। আমাকে নিয়ে স্বপ্নঘটিত ব্যাপারে রত্না হকের এখন গভীর শোক।
চোখ মুছতে মুছতে রত্না হক বললেন, 'আচ্ছা বাবু, তুমি যে এখানে প্রায়ই আস, তোমার দাদিমা জানেন?' আমি না সূচক মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলাম- 'তিনি জানলেই কি আর না জানলেই কি?' আমার কথা শোনে রত্না হক কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলেন। তারপর হুড়মুড় করে বললেন, 'তোমাকে আজ ডেকেছি কেন, জান?' বিজ্ঞের মতো জবাব দিলাম- 'নিশ্চয় প্রতিবারের মতো এবারও সমস্ত মার্কেট ঘুরে সবচেয়ে দামি পোশাকটি কিনে দেওয়ার জন্য!' খিলখিলিয়ে হেসে রত্না হক বললেন, 'বাহঃ, তোমার তো আন্দাজ শক্তি বেশ ভালো।'
রত্না হকের সঙ্গে মার্কেটের বিশাল এক আলিশান শপিং দোকানে বসে আছি। বাজারের যে পাঞ্জাবিটা সব চেয়ে দামি, রত্না হক আমাকে সেই পাঞ্জাবিটাই কিনে দিলেন আকাশছোঁয়া দামে। প্যান্ট জুতা শার্ট ফতুয়া সব কিনে দিলেন মার্কেট ঘুরে ঘুরে। মোটা অংকের টাকায় এত এত পোশাক কেনা দেখে আশপাশের লোকজন আমার দিকে আর রত্না হকের দিকে বার বার তাকাচ্ছেন। বেশ অস্বস্তি লাগতে শুরু করল আমার।
বিকাল সাড়ে ৫টায় বিদায় হলাম রত্না হকের কাছ থেকে। বিদায় বেলায় রত্না হক কেন জানি আমাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ নীরবে কাঁদলেন। মানুষের কান্না কখনো আমাকে স্পর্শ করে না। কিন্তু রত্না হকের কান্না দেখে আমি গোপনে চোখও মুছলাম। কেন, এমনটি হবে কেন? রত্না হকের প্রতি আমার কোনো টান আছে? না নেই। বুকের অতলে তার প্রতি আমার কেবল ঘৃণা আর ঘৃণা। এত ঘৃণা কোথা থেকে আসে কে জানে।
আমাকে অনেকটা অবাক করিয়ে দিয়ে রত্না হক বললেন, 'বাবু, আমি অচিরেই সুইডেনে চলে যাচ্ছি। ওখানকার এক হসপিটালে আমার চাকরি হয়েছে। তোমাকে খুব মিস করব, বাবু।' বলেই রত্না হক আবার কাঁদতে লাগলেন।
চলন্ত গাড়ির সিটে বসে আছি আমি। আমার হাত ভর্তি শপিংব্যাগ। ব্যাগে পোশাক। রত্না হক কিনে দিয়েছেন। ভীষণভাবে মনে পড়তে লাগল আমার পেছনের লম্বা অতীতকে।
১৯৮৪ সালে আমার বাবার সঙ্গে বেশ ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছে খুব বড় ঘরের মেয়ে রত্না হকের। তাদের সংসারে আমার জন্মের তিন বছর পর এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। বাবার এক মামাতো বোন নাজমা একদিন দাবি করে বসে সে এক অবৈধ সন্তানের মা হতে চলেছে এবং তার সঙ্গে যে এই অপকর্ম করেছে সে হচ্ছে আমার বাবা। স্বামীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল বলে রত্না হক স্বামীর এই অধঃপতন মানতে পারেননি। সুখের সংসার ত্যাগ করে বাবার বাড়ি ফিরে গিয়ে সাত দিনের মাথায় স্বামীকে তালাক দেন রত্না হক। বাবার কাছ থেকে আমাকে কেড়ে নিয়ে রত্না হক নিজের কাছে রাখতে চেয়েছেন। এই নিয়ে আইনি লড়াইও চলে। সে লড়াইয়ে বাবার জয় হয়। আমি বড় হতে থাকি দাদির স্নেহে। ক্লাস সেভেনের পর থেকে আমি বাবার এই কলঙ্কিত গল্প জানি। যদিও আমার বিশ্বাস হয় না বাবা এমন খারাপ কাজ করতে পারেন।
স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বাবা এলোমেলো হয়ে পড়েন। ঘুমের বড়ি খেয়ে দিনের পর দিন মাতালের মতো দিন কাটান। কারণে অকারণে আবোল তাবোল বকতে থাকেন। এক সময় তাকে ডাক্তার দেখানো হলো। সবাই এটাকে মানসিক রোগ বলে স্বীকৃতি দিলেন। দিন দিন বদলে যান বাবা। সহজ ভাষায় যাকে বলে 'পাগল।'
রত্না হক, মানে আমার সুশিক্ষিতা মা দ্বিতীয় বিয়ের কথা চিন্তা না করে ডাক্তারি পড়তে দেশের বাইরে চলে যান এবং উচ্চতর ডিগ্রি আর ডাক্তারি সার্টিফিকেট নিয়ে দেশে ফিরে মানবসেবায় জড়িয়ে পড়েন।
এক সময় নাজমাকে ঘিরে বাবার খারাপ গল্পটি মিথ্যে প্রমাণ হলো। সেদিন থেকে রত্না হকের প্রতি আমার ঘৃণার শুরু। স্বামীর প্রতি তিনি বিশ্বাসের জায়গাটাতে অনড় থাকতে পারতেন এবং তালাকের মতো একটা জঘন্য কাজ না করলেও চলত। মাঝখান দিয়ে মাতৃস্নেহ থেকে ছিটকে পড়লাম আমি। জানা গেছে, নাজমার গোপন ভালোবাসার স্বপ্নপুরুষ আমার বাবার অন্যত্র বিয়েটা সহজে মানতে পারেনি নাজমা। ফলে সে ক্ষুব্ধ হয়ে বাবার সাজানো সংসার ভাঙতে অবৈধ সন্তানের প্রস্তাব তুলে একটা নাটক রচনা করলেন। সেই নাটকের সমাপ্তি হলো সংসার ভাঙার মধ্য দিয়ে।
\হম্যাট্রিক পরীক্ষার পরপরই এক দুপুরে আমার হাতে একটি চিঠি আসে। সেখানে স্পষ্ট লেখা- 'বাবু, আমি তোমার মা রত্না হক। অনেক কষ্টে আর অনেক প্রত্যাশা নিয়ে তোমাকে চিঠি লিখেছি। আমার দেওয়া এই নাম্বারে একটা কল করবে?'
অচেনা অদেখা কল্পনার যে মাকে রাত দিন কি ঘৃণাই না করেছি, আচমকা সেই মায়ের অপ্রত্যাশিত চিঠিখানা এসে হঠাৎ আমার জীবন থমকে দিল। সব মান অভিমান কী করে যেন ভুলে রাতে কল দিলাম চিঠিতে লেখা সেই নাম্বারে। আমার পরিচয় জেনে রত্না হক প্রথমে পাগলের মতো গলা ফাটিয়ে কাঁদলেন। সেল ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসা কান্নার সেই ধ্বনি আমার বুকে এক অদৃশ্য ক্ষতের সৃষ্টি করল। আমি বারবার বলতে চেয়েছি- 'মা, কাঁদছ কেন?' কি এক অজ্ঞাত কারণে এই ছোট্ট কথাটি পর্যন্ত বলতে পারিনি। আমারও কেবল কান্না আসছিল বুক ভেঙে।
এরপর প্রায় প্রতিদিন রত্না হক আমাকে কল করতেন। আমি কি করছি না করছি সব কিছুর ব্যাখ্যা চাইতেন। আমারও বেশ ভালো লাগত তার কাছে এসবের জবাব দিতে। এক সময় আমার ভেতরেও রত্না হকের প্রতি সেই আগের মতো ঘৃণা আর অপবাদ বেশ হানা দিয়ে উঠল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে কল করতে নিষেধ করে দেব। কী কারণে যেন সেটাও আর বলা হতো না। অথচ তার একটি ফোন কলের রিংটোনের সুরে ভেসে যায় তার প্রতি আমার রাশি রাশি ক্ষোভ। বাধ্য ছেলের মতো আমি তার কণ্ঠস্বর শুনে গলে যাই। দিন দিন সে হয়ে ওঠে আমার প্রিয় শত্রম্ন।
একদিন রত্না হক আমাকে তার চেম্বারে ডাকলেন। অনেক আগ্রহ নিয়ে তার চেম্বারে গেলাম এবং জীবনে প্রথমবার মাকে দেখে বুক খাঁ খাঁ করে উঠল। অবাক হয়ে আমি রত্না হককে দেখলাম। এ যেন আমারই প্রতিচ্ছবি। আমার ঠোঁটের বাম পাশের মতো তারও ঠোঁটের বাম পাশে একটা গাঢ় তিল আছে। এমনকি আমার চুলের মতো তারও চুল বেশ সুন্দর। অবশ্য দাদিমা'র কাছে প্রায়ই আমার মায়ের সুন্দর চুলের বর্ণনা শুনতাম।
শহরের প্রাইম হসপিটালে রত্না হকের চেম্বার। দিন দিন সে চেম্বারে আমার যাতায়াত বাড়ে। কিসের টানে আমি তার চেম্বারে ছুটে যাই বুঝতে পারি না।
লক্ষ্য করলাম, মা কখনো আমার কাছে বাবার কথা জানতেও চান না। এতেই তার প্রতি আমার অসহ্য ঘৃণার মাত্রা বাড়তে থাকে। নির্দোষ যে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, অথচ সে স্বামীর একটা খবর নেওয়ার দরকারও মনে করছেন না রত্না হক। তার কারণেই তো আজ আমার বাবার এই পরিণতি।
তাকে আমি যতই ঘৃণা করি না কেন, আবার সেই তার ডাকেই আমি বদলে যাই। তার ডাকে প্রাইম হসপিটালে কতবার ছুটে গেছি নিজেও জানি না। এমন হয় কেন? জন্মান্তরের একটা টান আছে বলে? মানুষ কী আসলেই তার নাড়ির টানের সম্পর্কের কাছে আমৃতু্য দায়বদ্ধ?
২.
এক তারিখে আমার মোবাইলে রত্না হকের শেষ কলটি এলো। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন- 'বাবু, তুমি একটু আমার বাসায় আসবে?' প্রতিবারের মতো এবারও আমি রত্না হকের বিনীত আহ্বানে নেতিয়ে গেলাম।
আমি বসে আছি প্রকান্ড এক আলিশান বাড়ির গেস্টরুমে। আমার সামনে হরেক রকম ফল আর নাশতার এলাহি কান্ড। পাশে গম্ভীর মুখে বসে আছেন রত্না হক। তরল গলায় বললেন, 'আগামী কাল রাতেই আমি সুইডেন চলে যাচ্ছি। এ দেশে আর ফিরব কিনা জানি না। যাওয়ার আগে তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই বাবু।' দেয়ালে ঝুলন্ত তাজমহলের ছবির দিকে তাকিয়ে বললাম, 'জি বলুন!' রত্না হক খুব বিষণ্ন কণ্ঠে বললেন, 'তোমার নানাজানের এক মাত্র সন্তান আমি। আব্বার মৃতু্যর আগে সমস্ত সম্পত্তি আমায় দিয়ে গেছেন। দীর্ঘদিন বিনামূল্যে রোগীদের সেবা করেছি। অবশ্য নিজের উপার্জনের অর্থ দিয়েও শহরে বেশ ক'টি জমি কিনেছি। প্রবাসে যাওয়ার আগে আমার এ সমস্ত বিষয় সম্পত্তি তোমার নামে লিখে দিতে চাই। যদি আপত্তি না কর। একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোমার বাবার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলেছি। আমার আদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত হলে তুমি। বলতে পার অনেকটা অবিচার করেছি তোমার ওপর। তুমি আমার দেওয়া সম্পত্তিগুলো গ্রহণ করলে খুশি হব।' রত্না হকের কথা শোনে আমার মেজাজ ভড়কে গেল। স্বাভাবিক গলায় বললাম, 'লোভ দেখাচ্ছেন? মাতৃস্ন্নেহ দিতে পারেননি বলে আজ সম্পদ দিয়ে তার ঋণ শোধ করতে চাইছেন? সরি, আমি আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব না।' শিশুর মতো কাঁদতে লাগলেন রত্না হক। বিষণ্ন কণ্ঠে বললেন, 'সারাজীবন কেবল ভুল করে গেলাম বাবু। ভুল শুধরানোর সুযোগ পেলাম না। অন্তত তুমি সেটা বুঝতে চেষ্টা কর। একি! কোথায় যাচ্ছ? বাবু! শোন, চলে যাচ্ছ কেন?'
রত্না হকের পিছুডাক আমার চরণ থামাতে পারেনি। আমি চলে এলাম আমার চিরচেনা আবাসস্থলে। যেখানে আছেন একজন দাদিমা আর পায়ে শেকল বাঁধানো আমার পাগল বাবা। তারাই আমার স্বর্গ। আজ থেকে কোনো রত্না হককে আমি চিনি না।