রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ট্রেডমার্ক লাইসেন্স পাওয়ার আইনানুগ পদ্ধতি

যে নাম বা প্রতীকের মধ্য দিয়ে গ্রাহক কোনো বিশেষ উৎসের পণ্যকে সহজেই পৃথক করতে পারে এবং যে নাম বা প্রতীকের মধ্য দিয়ে কোনো ব্যবসায়ী তার পণ্যটিকে অন্য প্রতিযোগী পণ্য থেকে আলাদা রাখতে পারেন, আইনের ভাষায় তাকেই 'ট্রেডমার্ক' বলা হয়। ট্রেডমার্ক এক ধরনের মেধাস্বত্ব, ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি। যার অপব্যবহার ঘটলে এর মালিক আইনের আশ্রয় নিয়ে লঙ্ঘনকারীকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারেন।
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ট্রেডমার্ক লাইসেন্স পাওয়ার আইনানুগ পদ্ধতি

আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্য সুরক্ষিত রাখতে, আপনার নামে প্রতিষ্ঠিত পণ্য যেন অন্য কেউ একই নাম ব্যবহার করে বাজারজাত করতে না পারে, আপনার প্রতিষ্ঠানের সুনাম যেনো কেউ হানি করতে না পারে, ব্যবসায়ী ক্ষতি যেন করতে না পারে- তার জন্য প্রয়োজন ট্রেডমার্ক লাইসেন্স।

ধরুন 'মাতৃভান্ডার' নামে আপনার একটি বিখ্যাত রসমালাইয়ের দোকান আছে। সারা দেশের লোকের কাছে 'মাতৃভান্ডার' রসমালাইয়ের চাহিদাও রয়েছে। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম 'মাতৃভান্ডার' শব্দের আগে নিউ কিংবা আসল কিংবা খাটি শব্দ ব্যবহার করে গ্রাহকদের প্রতারিত করছে। আইনের ভাষায় 'মাতৃভান্ডার' এই নামটি ট্রেডমার্ক।

যে নাম বা প্রতীকের মধ্য দিয়ে গ্রাহক কোনো বিশেষ উৎসের পণ্যকে সহজেই পৃথক করতে পারে এবং যে নাম বা প্রতীকের মধ্য দিয়ে কোনো ব্যবসায়ী তার পণ্যটিকে অন্য প্রতিযোগী পণ্য থেকে আলাদা রাখতে পারেন, আইনের ভাষায় তাকেই 'ট্রেডমার্ক' বলা হয়। ট্রেডমার্ক এক ধরনের মেধাস্বত্ব, ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি। যার অপব্যবহার ঘটলে এর মালিক আইনের আশ্রয় নিয়ে লঙ্ঘনকারীকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারেন।

একজন ব্যবসায়ী কীভাবে প্রমাণ করবেন যে এই ট্রেডমার্কটির মালিক তিনিই? সাধারণত দুইভাবে একটি ট্রেডমার্ক নিজের অনুকূলে সুরক্ষিত রাখা যায়। প্রথমত ট্রেডমার্কটি সংশ্লিষ্ট দেশে নিজের নামে নিবন্ধন করার মাধ্যমে, দ্বিতীয়ত, ট্রেডমার্কটি নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে। একটি ট্রেডমার্ক দীর্ঘদিন ধরে একজন ব্যবসায়ী যদি নিবন্ধন করা ছাড়াই ব্যবহার করে আসেন, সেক্ষেত্রে অপর একজন ব্যবসায়ী তার ট্রেডমার্কটি পরবর্তী সময়ে নিজের নামে নিবন্ধন করলেও ওই ট্রেডমার্কটির আইনগত মালিকে পরিণত হতে পারবেন না। প্রথম ব্যবহারকারী যদি তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দেন এবং প্রমাণ করতে পারেন যে ট্রেডমার্কটি প্রথম তিনিই ব্যবহার করে আসছেন, তাহলে প্রথম ব্যবহারকারীর অনুকূলেই আদালত রায় দেবে।

বাংলাদেশে 'ট্রেডমার্ক আইন-২০০৯' এ ট্রেডমার্কের সংজ্ঞা, ট্রেডমার্কের লঙ্ঘন ও তার প্রতিকার পাওয়ার উপায় বাতলে দেয়া হয়েছে। প্যাটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের 'ট্রেডমার্ক নিবন্ধন শাখা'য় কোনো ব্যবসায়ী তার ট্রেডমার্কটির নিবন্ধন নিতে পারেন। এভাবে নিবন্ধন করার পর যদি ওই ট্রেডমার্কটি অন্য কোনো ব্যবসায়ী অনুমোদনহীনভাবে ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে ট্রেডমার্কটির মালিক লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি দুধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। পূর্বে নিবন্ধিত কোনো ট্রেডমার্কের সঙ্গে যদি আবেদনকারীর ট্রেডমার্কের মিল থাকে- যা গ্রাহককে প্রতারিত করতে পারে, সেক্ষেত্রে পরবর্তী আবেদনকারীর ট্রেডমার্কের নিবন্ধন দেয়া হবে না। যেমন 'বাটা' নামটি নিবন্ধিত থাকার পর 'রাটা' নামে অন্য কেউ ট্রেডমার্কের নিবন্ধন পাবে না, যেহেতু 'রাটা' নামটি গ্রাহকদের প্রতারিত করতে পারে। শুরুতে ৭ বছরের জন্য ট্রেডমার্কের নিবন্ধন দেয়া হয় এবং এই মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে পুনরায় ১০ বছর করে সময়ের জন্য ট্রেডমার্কটি নবায়ন করা যায়।

মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর এক বছরের মধ্যে নবায়ন করতে হয়। কাজেই মাতৃভান্ডারের মালিক তার ট্রেডমার্কটি নিবন্ধন করে থাকলে সেক্ষেত্রে তিনি দেওয়ানি (ডিস্ট্রিক্ট জাজ) ও ফৌজদারি (মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা ১ম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট) উভয়েই আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। দেওয়ানি আদালতে মামলা করলে আদালত ট্রেডমার্ক লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেডমার্ক মালিকের অনুকূলে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারে। আর ফৌজদারি আদালতে মামলা করলে আদালত লঙ্ঘনকারীকে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদন্ড এবং ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড দিতে পারেন।

ট্রেডমার্ক নিবন্ধিত না থাকলেও ট্রেডমার্কের মালিক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। ট্রেডমার্ক নিবন্ধিত না হলেও আদালত সংক্ষুব্ধ ওই ব্যক্তির ব্যবসায়িক সুনাম সুরক্ষার স্বার্থে তার পক্ষে প্রতিকার প্রদান করতে পারে। অনিবন্ধিত ট্রেডমার্কের লঙ্ঘনকে আইনের ভাষায় বলা হয় 'পাসিং অফ'। আমাদের ট্রেডমার্ক আইনের ৯৭ ধারায় 'পাসিং অফ' এর সাজা সম্পর্কে বলা আছে।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, গবেষক ও আইনগ্রন্থ প্রণেতা।

ঊসধরষ: ংবৎধল.ঢ়ৎধসধহরশ@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে