২০২৩ সালে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে জাতিগত ঘৃণা উসকানির দায়ে অভিযুক্ত করেছেন সুইডেনের কৌঁসুলিরা। সুইডিশ প্রসিকিউশন অথোরিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ওই দুই ব্যক্তি 'একটি জাতি বা জাতীয় গোষ্ঠীকে ক্ষুব্ধ করে তোলার অপরাধ' করেছেন। স্টকহোমে মসজিদের বাইরে এবং অন্য স্থানে চারটি আলাদা ঘটনায় জনসমক্ষে ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন পুড়িয়েছেন তারা।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুইডেনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সন্ত্রাসী হামলার সতর্কতার মাত্রা বাড়ায়। প্রতিবেশী ডেনমার্কেও কোরআন পোড়ানোর প্রবণতা শুরু হয়- যা বন্ধে আইনে কাড়াকড়ি আরোপ করে সরকার।
সুইডেনের জ্যেষ্ঠ কৌঁসুলি আনা হানকিও বিবৃতিতে বলেছেন, দুই ব্যক্তিকেই মুসলিমদের বিশ্বাসের অবমাননার উদ্দেশ্যে করা ওই চারটি ঘটনার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার রেকর্ডকৃত ভিডিওতে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের মূল প্রমাণ রয়েছে বলে উলেস্নখ করেছেন তিনি। তবে অভিযুক্তের একজন তার আইনজীবী মার্ক সাফারিয়ানের মাধ্যমে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন তিনি কোনো অন্যায় করেননি। সাফারিয়ান জানান, তার মক্কেলের বিক্ষোভ প্রদর্শনের অধিকার সুইডেনের সংবিধানের দ্বারা সংরক্ষিত। তবে অন্য অভিযুক্তের আইনজীবী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
ওই অভিযুক্ত ইরাকের একজন শরণার্থী। তিনি জানিয়েছিলেন, ইসলামের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং কোরআন যাতে নিষিদ্ধ করা হয় সেই দাবি তুলতে চেয়েছেন তিনি। সুইডেনের অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে আবেদনে মিথ্যা তথ্য দেয়ায় তারা এই শরণার্থীকে ডিপোর্ট বা ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু নিজ দেশে তার ওপর নির্যাতনের ঝুঁকি থাকায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
২০২৩ সালে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে সুইডেনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয়। জুলাইতে বাগদাদে সুইডিশ দূতাবাসের কমপাউন্ডে আগুন জ্বালিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। সে বছরের আগস্টে সুইডেনের গোয়েন্দা সংস্থা স্যাপো দেশটিতে হুমকির মাত্রা চার-এ উন্নীত করে, যার সর্বোচ্চ মাত্রা পাঁচ। চলতি মাসের শুরুতে কৌঁসুলিরা সুইডিশ- ডেনিশ বংশদ্ভূত আরেক ব্যক্তিকে ২০২২ সালে মালমো শহরে একই ধরনের অপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।
২০২০ সালে কোরআন পোড়ানোর আরেক ঘটনায় জাতিগত ঘৃণা উস্কে দেওয়ার জন্য গত বছরের অক্টোবরে এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেন সুইডিশ আদালত। মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ পোড়ানোর জন্য কারো বিরুদ্ধে দেয়া এটিই দেশটির আদালতের প্রথম কোনো রায়। সমালোচকদের কারো কারো মতে, বিশ্বের অন্যতম উদার দেশ সুইডেন ও ডেনমার্কে কোরআন পোড়ানোকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হিসেবেই দেখা উচিত।