ওকালতি কচড়া
কয়েদি নং-১০১২/২০ (বিনাশ্রম)
প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
অ্যাডভোকেট এ এস এম সায়েম ভূঁইয়া
বুধবার সন্ধ্যায় চেম্বারে বসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ দেখি নিরীহ একজন লোক চেম্বারে ঢুকে দীপ ভাইকে অসহায় ভঙ্গিতে কী যেন বলছিলেন, আমি তেমন একটা পাত্তা দিলাম না।
আমাদের কাছে অবশ্য কেউ অসহায় না হয়ে আসেন না, এখন কেন জানি অসহায় মুখগুলো আমাদের মনে দাগ কাটতে পারে না, ডাল-ভাত টাইপের হয়ে গেছে।
যাইহোক, কাজ শেষ হওয়ার পরও দেখলাম লোকটি ওয়েটিং রুমে বসে আছে। দীপ ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম কেন আসছে এই লোক, তিনি বললেন লোকটি নাকি আজকে জেল থেকে ছাড়া পাইছেন, ছাড়া পেয়েই আমাদের চেম্বারের এক ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করতে আসছে; চিটাগং বাড়ি।
আফসোস করতে করতে তখন কইলাম, কত মানুষরে জেল থেকে বাহির করলাম কেউ এরকম এসে দেখা করল না। আহা, ম্যাডামের কী ভাগ্য, দেখিতো লোকটার সঙ্গে একটু কথা বলি।
ডাক দিলাম আমার রুমে। এর মধ্যে দীপ ভাই পকেট থেকে ২০০ টাকা বের করে লোকটারে দিয়ে দিল।
আমার কেন জানি লোকটারে দেখেই খটকা লাগল। জিগাইলাম কোত্থেকে এলেন। বলল, আজকেই জেল থেকে ছাড়া পাইছে। ২ বছর জেল খেটে বের হয়েই চেম্বারে আসছে ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করতে। পকেটে টাকা নেই, ম্যাডামের বাড়িও চিটাগং লোকটার বাড়িও চিটাগং। এখন ম্যাডাম যদি কিছু টাকা পয়সা দেয় তাহলে সেটা দিয়ে বাড়ি যাবে।
জিজ্ঞেস করলাম আপনার জামিন কী ম্যাডাম করাইছে? বলল, না ম্যাডাম করায়নি। এই কথা শুনার পরই আমি সিউর হয়ে গেলাম এই ব্যাটা টাউট।
জিগাইলাম, ম্যাডামের কাছে যে এলেন- ম্যাডামের নাম বলেনতো, নাম বলতে পারল না।
জেলখানা থেকে সাজা খেটে বের হলে হাতের মধ্যে একটা সীল দিয়ে দেওয়া হয়, যাতে করে বাস বা লঞ্চে উঠলে ভাড়া না লাগে। ওরে কইলাম, আপনি যে আজকে জেল থেকে বের হলেন আপনার হাতে সিল কই? ব্যাটা বুঝছে ও কট খেয়ে গেছে। বলে যে এক কারারক্ষীকে অনুরোধ করলে সে আর সিল দেয়নি। এই কোথা শুনেই দিলাম ধমক। এর মধ্যে দীপ ভাই তার ২০০ টাকা ফেরত নিয়ে নিল।
লোকটার হাতে একটা কাগজ দেখলাম। জিজ্ঞেস করলাম এটা কী? ও বলে জেল থেকে যে আজকে বের হইছে তার কাগজ। হাতে নিয়ে দেখলাম এটা ২০২২ সালের, আবার এটাতে মামলা নং নেই তখন পুরোপুরি সিউর হলাম ব্যাটা একটা টাউট। পরে বকা ঝকা করে বের করে দিলাম।
আজেক, হঠাৎ নিউজফিডে দেখলাম এই লোক এরকম একজনের সঙ্গে বাটপারি করে টাকা নিয়ে গেছে।
এজন্য এখন আর অসহায় ফেস দেখলে মন টন গলে না!
অ্যাডভোকেট এ এস এম সায়েম ভূঁইয়া, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।