জনৈকা রেখা (ছদ্মনাম) যাত্রাবাড়ী থানায় হাজির হয়ে এই মর্মে এজাহার দায়ের করেন যে, চলার পথে পরিচয়ের সূত্র ধরে গত তিন/চার মাস ধরে আসামি রিপন মিয়া প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল।
এরপর উচ্চ বিলাসী জীবনযাপনের লোভ দেখিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং পূর্বের স্বামীকে তালাক দিতে আসামি উদ্বুদ্ধ করে। একপর্যায়ে তালাক দিতে বাধ্যও করে। এরপর আসামি কাজীর মাধ্যমে বিবাহ রেজিস্ট্র্রি না করিয়ে একটি ভুয়া হলফনামার মাধ্যমে স্ত্রী বানিয়ে আসামি ভাড়া বাসায় নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। এরপর বাসা থেকে বের হয়ে আসামির ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়।
মামলাটি হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৯(১) ধারায়। এ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোলো বৎসরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে, অথবা ষোলো বৎসরের কম বয়সের কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি ওই নারীকে ধর্ষণ করেছে বলে গণ্য হবে।
ধর্ষণের সংজ্ঞা দেখেই বুঝতে পারছেন বাদী সাবালিকা, স্বেচ্ছায় ফ্লাটে গেছে, কনডিশন ছিল বিয়ে করবে। এতে জোর প্রতারণা হতে পারে। কিন্তু এ মামলায় ধর্ষণের কোনো উপাদান না থাকাটাই স্বাভাবিক। তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলাটি বিচারিক আদালতে গেলে আসামি পক্ষ চার্জ গঠনের দিনে অব্যাহতি চেয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি ২৬৫(গ) ধারার বিধানমতে আবেদন দাখিল করেন। আসামির আইনজীবী অব্যাহতির আবেদনে এবং আদালতে যে বিষয়গুলো উলেস্নখ করেন তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য ছিল, মামলার ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত। আসামিকে অযথা হয়রানি করার মানসে অত্র মিথ্যা ঘটনার সঙ্গে জড়িত করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বর্ণিত ধারায় দরখাস্তকারী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার মতো কোনো উপাদান অত্র মামলায় নেই। এজাহারে উলিস্নখিত কথিত ঘটনার তারিখ ও সময় সুনির্দিষ্টভাবে উলেস্নখ করা হয়নি।
আইন অনুযায়ী কোনো পুরুষ কোনো নারীর সঙ্গে বিয়ের কথা দিয়ে কিংবা প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে সেটি লঙ্ঘন করলে সেটা হবে বিবাহ চুক্তির লঙ্ঘন, মোটেই ধর্ষণ নয়। এজাহারের বর্ণনা মতে, ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনে 'ফ্রড'-এর সংজ্ঞার সঙ্গে ভিকটিমের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তবে মোটেই ধর্ষণের কোনো উপাদান নেই। ১৬ বছরের অধিক কোনো বয়সের মেয়েকে যদি কোনো পুরুষ বিয়ের প্রলোভন দিয়ে যৌনকর্ম করে তা হলে তা ধর্ষণের নামান্তর হবে না, সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতের। (৫১ ডিএলআর, পেজ-১২৯)। যৌনকর্মের সময় যদি ভিকটিম কোনোরূপ বাধা না দেয় অথবা বাধা দেওয়ার চেষ্টা না করে অথবা কোনো চিৎকার না করে তাহলে ধর্ষণ হয়েছে বলে মনে করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যৌনকর্মে ভিকটিমের সম্মতি আছে বলে ধরে নিতে হবে, সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতের। (৫৭ ডিএলআর, পেজ-৫৯১)। এ মামলায় সমর্থনযোগ্য সাক্ষীর কোনো উপস্থিতি নেই। এ মামলায় ডিএনএ পরীক্ষায় পুরুষের বীর্যের কোনো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
আরেকটি পয়েণ্ট উলেস্নখ করা হয়, কোনো স্ত্রীলোকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সঙ্গে যৌন সংগম করা হলে, সেক্ষেত্রে ওই স্ত্রীলোকের দেহের বা শরীরের কোনো না কোনো অংশে বা জায়গায় জখম বা আঘাতের চিহ্ন থাকবে এবং এটা মেডিকেল রিপোর্ট দ্বারা সমর্থিত হবে। কারণ ধর্ষণের সময় ভিকটিম ইজ্জত রক্ষার জন্য একটু হলেও ধস্তাধস্তি করেন। কিন্তু ধর্ষণের এ মামলায় ভিকটিমের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই এবং ভিকটিমের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন না থাকলে তাকে ধর্ষণ বলা যাবে না। (১৮ ডিএলআর পেজ-৯১)।
এছাড়া ধর্ষিতার মেডিকেল রিপোর্ট না থাকায় প্রসিকিউশন কেস সন্দেহজনক হবে (বিএলডি-৩১৪) এ মামলায় ভিকটিম একাধিকবার আসামির সঙ্গে স্বেচ্ছায় ইচ্ছাকৃত অংশীদার হিসেবে যৌন সহবাস করেছে। মামলাটি বিলম্বে হয়েছে। আসামি এ পর্যায়ে অব্যাহতি পেতে হকদার (১২ এমএলআর, পৃষ্ঠা-৪০৯)
অভিযোগকারিণীর বৈবাহিক অবস্থা এবং যৌন সম্পর্কের ইতিহাসকে তার 'চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য' বিবেচনায় যৌন কার্যকলাপে অভ্যস্ত, একজন হালকা নৈতিক চরিত্রের অধিকারিণী বিধায় আসামি অব্যাহতি পেতে হকদার। তদন্তকারী কর্মকর্তা নিরপেক্ষ কোনো ব্যক্তিকে অত্র মামলায় সাক্ষী করতে পারেননি। অত্র মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সাক্ষীরা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় যে জবানবন্দি প্রদান করেছেন, তাতে সাক্ষীরা দরখাস্তকারী আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি।
মাননীয় আদালত অব্যাহতি আবেদন, আইনজীবীর বাচনিক প্রকাশ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত ও মামলার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫(গ) ধারার বিধান মতে মিথ্যা ধর্ষণ মামলার দায় হতে অব্যাহতি দানের আদেশ দেন।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, গবেষক ও আইনগ্রন্থ প্রণেতা।
ঊসধরষ: ংবৎধল.ঢ়ৎধসধহরশ@মসধরষ.পড়স