রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
ওকালতি কচড়া

জীবনে প্রথম সাকসেশন সার্টিফিকেট কেইস ফাইলিংয়ের অভিজ্ঞতা

অ্যাডভোকেট আজিজ উলস্নাহ ইমন
  ১১ জুন ২০২৪, ০০:০০
জীবনে প্রথম সাকসেশন সার্টিফিকেট কেইস ফাইলিংয়ের অভিজ্ঞতা

২০০৭/০৮ সালে একদিন সন্ধ্যায় চেম্বারে আসিফ ভাই এলেন। চেম্বারে এসেই শ্রদ্ধেয় সিনিয়র স্যার সৈয়দ আহমেদ স্যারকে সালাম দিলেন এবং ড. নাইম ভাইকে নিয়ে স্যারের সঙ্গে একটা মামলা ফাইল করার বিষয়ে আলোচনা করতে লাগলেন। আসিফ ভাই খুব সম্ভবত ড. নাইম ভাইয়ের স্কুলের সিনিয়র ভাই ছিলেন। আসিফ ভাইয়ের সদ্য প্রয়াত মায়ের ব্যাংক একাউন্টে রক্ষিত বেশ কিছু টাকা, প্রায় ষাট লক্ষাধিক টাকার ওয়ারিশ উনার পুত্র-কন্যারা এখন সাকসেশন সার্টিফিকেট'র মামলা করে কোর্ট থেকে সার্টিফিকেট নেবেন এবং ব্যাংক থেকে উনার অ্যাকাউন্টে রক্ষিত টাকা উত্তরাধিকার আইনানুসারে বণ্টন করে নেবেন।

স্যার আমাকে ফাইলটা বুঝিয়ে দিলেন এবং ড. নাইম ভাই বললেন, 'ইমন তোমার কম্পিউটারে দেখবা...ফোল্ডারে আমাদের আগের একটা সাকসেশন সার্টিফিকেট'র মামলার ফাইল আছে, তুমি এই মামলাটা সেভাবেই রেডি করো। আর একটা পাওয়ার অব এটর্নিও রেডি করতে হবে যে, সব ভাই বোনদের পক্ষে একজন কোর্টে গিয়ে সাক্ষী দেবে। সেটাও পাবা ওই ফোল্ডারে।

আমি ফাইলের কাগজগুলো পড়তে লাগলাম। ডেথ সার্টিফিকেট, ওয়ারিশান সনদপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, জন্মসনদ, ছবি ইত্যাদি চবৎঁংব করতে লাগলাম। এরপর কম্পিউটারে সংশ্লিষ্ট ফোল্ডারে গিয়ে কাজ শুরু করলাম। ওরে বাবা! এই মামলায় তো কোনো বিবাদী নাই! সব্বাই দেখি দরখাস্তকারী!

কারণ, কোনো ডিস্পিউট নাই পুত্র-কন্যাদের মধ্যে। (অবশ্য বিবাদ থাকলে বা একাধিক স্ত্রী থাকলে যে বা যারা ওকালতনামায় সাইন দেবে না তাকে বিবাদী-অপরপক্ষ করতে হয়। এটাই নিয়ম।)

পিটিশন রেডি হলে সিনিয়র স্যারকে প্রিন্ট করে দেখালাম। স্যার কিছু কারেকশন করলেন এবং বললেন সাকসেশন সার্টিফিকেট ক্যান বি ফাইলড অনলি ফর উবনঃং ধহফ ংবপঁৎরঃরবং.

তখন জজকোর্টে সিনিয়র স্যার আর আমি যেতাম। ড. নাইম ভাই, ব্যারিস্টার সাইফুর রশিদ ভাই আর অ্যাডভোকেট খন্দকার শাহরিয়ার শাকির ভাই হাইকোর্টে যেতেন। মরহুম শফি ভাই ছিলেন আমাদের চেম্বারের ক্লার্ক। স্যারের চেম্বারের অভিজ্ঞ ক্লার্ক শফি ভাই। প্রায় ৩৩ বছর ধরে ঢাকা জজকোর্টে স্যারের মুহুরি ছিলেন। আর সিনিয়র স্যারের ওকালতির বয়স তখন ৪৭ বছর। (শফি ভাইয়ের বড় ছেলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করে জাপান থেকে পিএইচডি করে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। উনার ছেলেরা উনাকে কোর্টের কাজ থেকে অবসর নিতে চাপ দিতেন। কিন্তু, উনি কোর্টে আসতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন।) খুব দক্ষ মুহুরি ছিলেন শফি ভাই এবং সিভিল মোকদ্দমায় প্রসিডিওরাল ব্যাপারে অনেক দক্ষ। (পরবর্তীতে আমার ঢাকা জজকোর্ট'র সব দেওয়ানি মোকদ্দমায়ও আমি শফি ভাইকে রাখতাম হাজিরা ও পদক্ষেপ নিতে। মোকদ্দমার কোনো স্টেপ আগে থেকেই জানিয়ে রাখতেন।)

সাকসেশন সার্টিফিকেট মামলার ফাইলিং-এর দিন আসিফ ভাই এলেন কোর্টে। ফাইল করা হলো। নেক্সট ডেট ধার্য্য করা হলো সমন জারির জন্য। শফি ভাই প্রসেস সারভারকে দায়িত্ব দিলেন জারির জন্য।

ইদানীং দেখি অনেক লইয়ার এফিডেভিড দিয়ে সাকসেশন সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করে অজ্ঞতাবশত। এতে অবশ্য সেরেস্তাদার আপত্তি করেন না। কারণ, এফিডেভিট হলে সিলমারা ও হলফ নেওয়া উপলক্ষে আরও কিছু নগদ নেওয়া যায়!

আসলে যে কোনো মামলা-মোকদ্দমা ড্রাফট করার আগে সংশ্লিষ্ট অর্ডার রুল সেকশনসহ পূর্ববর্তী মামলার উচ্চ আদালতের নজিরগুলো স্টাডি করা ম্যান্ডাটরি। এতে সর্বোচ্চ ১/২ ঘণ্টা ব্যয় হবে যদি সিভিল মোকদ্দমায় দক্ষ হয় সেই বিজ্ঞ আইনজীবী।

কয়দিন আগে এক মামলায় দেখলাম সাকসেশন সার্টিফিকেট'র এপিস্নকেশনের শেষাংশে প্রথমে অভভরফধারঃ দিল! তারপর ঠবৎরভরপধঃরড়হ!ও দিল এবং সর্বশেষে শপথনামাও দিল বিজ্ঞ আইনজীবী!

অদ্ভুত ব্যাপার! ব্যাপারটা এরকম যে, কারও জ্বর হওয়ার পর তাকে ঘধঢ়ধ, অপব আর চধৎধপবঃধসড়ষ তিন কোম্পানির ওষুধ একসঙ্গে গুলিয়ে খাওয়াই দেওয়া আর কি! এতে ট্রিপল একশান বা রিয়্যাকশান হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা প্রকট।

ওকালতি করতে কোনো আরজি বা এপিস্নকেশনে ঠবৎরভরপধঃরড়হ এবং কোন এপিস্নকেশনে অভভরফধারঃ দিতে হয় শেষাংশে তা জানা জরুরি। নচেৎ মোকদ্দমা দায়ের করার সময় সেরেস্তাদার কর্তৃক নাস্তানাবুদ হতে দেখেছি অনেককেই।

তাই, সংশ্লিষ্ট মামলা-মোকদ্দমায় প্রাসঙ্গিক আইন অধ্যয়ন করে দরকার হলে কোনো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সিনিয়রের সঙ্গে বা নিজের কোনো সংশ্লিষ্ট আইনে অভিজ্ঞ বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করে বা আরজি লিখিত জবাব দেখিয়ে বুঝে শুনে মোকদ্দমা দায়ের করলে ক্লায়েন্টও সহজে রিলিফ পেতে পারে। নতুবা পরবর্তীতে অর্ডার ৬ রুল ১৭ করতে হয় বারবার। যা কিঞ্চিৎ বিব্রতকর পরিস্থিতির উদ্ভব করে এবং বিবাদী অপরপক্ষ তখন তা চ্যালেঞ্জ করে মামলাটা নিষ্পত্তিতে বিলম্বিত করার চেষ্টা করে। আইনপেশায় অধ্যয়নের বিকল্প নেই।

ওই যে আমরা ছোটবেলায় পড়েছিলাম!

'ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ'

আমাদের জন্য আইনজীবীনং অধ্যয়নং তপঃ হবে কি!

এপিলেট ডিভিশনের সম্মানিত সাবেক বিচারপতি ওহাব মিয়া স্যার আমাদের ইধৎ ঠড়পধঃরড়হধষ ঈড়ঁৎংব-এ বলতেন, 'ঞযব সড়ৎব ুড়ঁ ৎবধফ, :যব সড়ৎব ুড়ঁ ষবধৎহ. ঞযব সড়ৎব ুড়ঁ ষবধৎহ, :যব সড়ৎব ুড়ঁ রিষষ বধৎহ. ঘড় ষবধৎহরহম, হড় বধৎহরহম.'

সাকসেশন সার্টিফিকেট মামলাটার সংক্ষিপ্ত আলোচনা অন্য আরেকদিন হবে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে