রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি চালু সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০
যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি চালু সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে

কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নীতিমালার আলোকে যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, অনুসন্ধান ও সুপারিশের জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি কমিটি গঠন করেছে। সমিতির তৎকালীন কার্যনির্বাহী কমিটি গত ৩১ মার্চ আইনজীবী জেসমিন সুলতানাকে সভাপতি করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটি গঠন করে।

কমিটির অপর সদস্যরা হচ্ছেন- অ্যাডভোকেট রমজান আলী সিকদার, অ্যাডভোকেট রেহানা সুলতানা, ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ ফারুক, অ্যাডভোকেট আঞ্জুমান আরা রানু, ব্যারিস্টার হারুন-অর-রশিদ, অ্যাডভোকেট নিঘাত সীমা (বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি), অ্যাডভোকেট মাহবুবা আক্তার (বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট), অ্যাডভোকেট শবনম মোস্তারী এবং অ্যাডভোকেট মাহমুদা আফরোজ মনি।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থিত ল' রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) কার্যালয়ে গত ৩০ মে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ বিষয়ক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, কোনো আইনজীবীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এলে তার পেশা পরিচালনা করা কঠিন হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আইনজীবীদের সতর্ক করে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এখানে আমরা সবাই বন্ধুর মতো কাজ করি। নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা সবাই সচেতন। আরেকটা কথা বলে রাখি, কোনো আইনজীবীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ (যৌন হয়রানির) যদি আসে তাহলে তিনি কিন্তু আর এই পেশায় থাকতে পারবেন না। কারণ তাকে আর কেউ বিশ্বাস করবে না। তাকে হেয় হতে হবে। ফলে কাজ (আইন পেশা) করাটা তার জন্য দুরূহ হয়ে যাবে। এই কথা মাথায় রেখে আমার মনে হয় না এখনো এই ধরনের কোনো অভিযোগ এসেছে। কারণ আইনজীবীরা অনেক সচেতন। এখানে বোনেরা যেমন কাজ করেন, তেমনি ভাইয়েরাও কাজ করেন। সবাই আমরা পারস্পরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই কাজ করি। তাই আশা করছি, এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না।

তবে ভবিষ্যতে যদি কখনো এমন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে আপনারা (যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা) সচেতনভাবে বিষয়টি তদন্ত করবেন এবং রায়ের আলোকে যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই সমিতি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কারো কাজের ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে না এলে সমাজ এগিয়ে যাবে না। তাই কারো চলার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না। এই ধরনের কাজ (যৌন হয়রানি) হচ্ছে মানুষের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা, কাজকে নিরুৎসাহিত করা।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আইনজীবী হিসেবে যখন কোর্টে আসি তখন এই কোর্টে মাত্র জ্জ জন নারী আইনজীবী কোর্টে আসতেন। তখন পুরুষ আইনজীবীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০০/৭০০-এর মতো। এখন অনেক অনেক নারী আইনজীবী প্র্যাকটিসে আসছেন, আপিল বিভাগেও তিনজন নারী বিচারপতি ছিলেন যারা অবসরে গিয়েছেন। এখনো একজন নারী বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন। তাই তাদের উৎসাহ জোগাতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের মানসিক হয়রানি করা যাবে না। কারো বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানির অভিযোগ উঠলে সেটিও দেখবেন। অভিযোগ পেলে সঠিকভাবে তদন্ত করে কাজ করবেন। সঠিক তথ্য সামনে এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী কর্মস্থল এবং শিক্ষাঙ্গনে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য দিকনির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করেন।

শুনানি শেষে ২০০৯ সালের ১৪ মে রায় দেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ রায়ে হাইকোর্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ গ্রহণের জন্য যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটিসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে