রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

আত্মসমর্পণ, গ্রেপ্তার বা আদালতে সোপর্দের সময় পরিচয় নিশ্চিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ২৮ মে ২০২৪, ০০:০০
আত্মসমর্পণ, গ্রেপ্তার বা আদালতে সোপর্দের সময় পরিচয় নিশ্চিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা

কোনো মামলায় আত্মসমর্পণের ক্ষেত্রে পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মসনদ বা পাসপোর্টের অনুলিপির মাধ্যমে আসামির পরিচয় বিচারককে নিশ্চিত করতে হবে বলে এক রায়ে উলেস্নখ করেছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে বিচারকদের প্রতি নির্দেশনা দিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ সম্প্রতি এ রায় দেন। রায়ে আরও বলা হয়েছে, কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার বা আদালতে সোপর্দ করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন বা পাসপোর্টের মাধ্যমে তার পরিচয় পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে সার্কুলার (পরিপত্র) জারি করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালত বলেন, যখন কোনো আসামিকে কারা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে, তখন জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন বা পাসপোর্টের মাধ্যমে সেই আসামির পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে আসামির ফিঙ্গারপ্রিন্ট (আঙুলের ছাপ) সংগ্রহ করে তা ভেরিফাই (যাচাই) করবে। এ বিষয়ে দেশের সব কারা কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশনা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।

আদালতের এসব নির্দেশনা এক মামলায় প্রকৃত আসামির পরিবর্তে অন্যজনের কারাভোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসেছে। 'মাদক মামলায় যুবলীগ নেতার আয়নাবাজি' শিরোনামে গত ফেব্রম্নয়ারি মাসে এক দৈনিকে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের আগস্ট মাসে উত্তরায় একটি বাসায় অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সেখানে বিপুল ফেনসিডিল ও গাঁজা পাওয়া যায়। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এ ঘটনায় দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। তাদের মধ্যে একজন পলাতক ছিলেন। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় পলাতক ওই ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাদন্ড দেন বিচারিক আদালত। সাজাপ্রাপ্ত ওই আসামির নাম নাজমুল হাসান (ঢাকার উত্তরার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা)।

কিন্তু নাজমুল পরিচয় দিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে যিনি জেল খেটেছেন, তার নাম মিরাজুল ইসলাম। টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে নাজমুলের সাজা খাটছিলেন তিনি। যদিও চুক্তিমতো তিনি সব টাকা পাননি। জামিনে বেরিয়ে এসে টাকা চাইতে গেলে মিরাজুলকে ইয়াবা দিয়ে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এ মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের কারাদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে নাজমুল হাসানের নাম উলেস্নখ করে ২০২৩ সালে হাইকোর্টে আপিল করা হয়। এই আপিল গত ১৫ ফেব্রম্নয়ারি রায়ের জন্য ছিল। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন সেদিন হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চে উপস্থাপন করে আইনগত প্রতিকার প্রার্থনা করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে, বিচারিক আদালতের এক আইনজীবী বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতি বরাবর আবেদন করেন- যার পরিপ্রেক্ষিতে আপিলটি নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের ওই বেঞ্চে (রায় দিয়েছেন যে বেঞ্চ) পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আপিলটি খারিজ করে এ রায় দেওয়া হয়।

আদালতে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। নাজমুল হাসানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. গিয়াসউদ্দিন আহম্মদ। এ মামলায় বিচারিক আদালতে আসামিপক্ষে নিয়োজিত ও হাইকোর্টে আপিল করা আইনজীবীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে