ওকালতি কচড়া
নো ফিস, নো ফাইল ওপেনিং
প্রকাশ | ২১ মে ২০২৪, ০০:০০
অ্যাডভোকেট আজিজ উলস্নাহ ইমন
একদিন বিকাল সাড়ে ৪টায় আমি চেম্বারে যাব হাইকোর্ট থেকে। সঙ্গে সহকর্মী প্রিয় ছোট ভাই ছিল। উবার কল দিয়েছি। গাড়ি কাছাকাছি ছিল। চলে আসছে। হয়তো আর মিনিট দুয়েক লাগবে!
দোতলার বারান্দায় একজন প্রিয় ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। ছোট ভাই একজন উদীয়মান লেখক ও আইনজীবী; সম্প্রতি একটা গল্পের বই প্রকাশ করেছেন। আমাকে বলেছিল এক কপি দিবে। দেখা হওয়া মাত্রই সালাম দিয়ে বলল, 'ভাইয়া! একটু দাঁড়ান! আমি আপনার কপি নিয়ে আসছি চেম্বারে! এখনই নিয়ে আসছি! এক মিনিটেই!'
লেখক বই আনল। দু'কপি আমাদের দুজনের জন্য। আমি বললাম, 'আমি দুই কপির মূল্য দিব। তুমি কিছু মনে করিও না!'
হেসে বলল, 'ভাইয়া! কি বলেন?'
আমি আগেই টাকা আলাদা করে রেখেছিলাম।
ওর পকেটে টাকাগুলো জোর করে দিয়ে বললাম, আমাদের জন্য গাড়ি ওয়েট করছে। যাই।
ফেরার পথে হাদীকে বললাম, 'লেখকদের থেকে আমি ফ্রি বই না নেওয়ার একটা কারণ আছে। আমার এক লেখক বন্ধু আমাকে দিয়ে প্রম্নফ দেখাত তার লেখা কিংবা কবিতা। পান্ডুলিপি নিয়ে সে ঢাকায় গেল। আজিজ সুপারে আড্ডা দিত। ছাত্র ইউনিয়ন করত। বেশ কিছু প্রকাশকের সঙ্গে পরিচয় ছিল। কিন্তু তার পান্ডুলিপি বই আকারে ছাপতে লগ্নি করতে নারাজ। তার নিজের গাটের পয়সা খরচ করেই সে বই প্রকাশ করল। বইমেলার আগে পেরেছিল কিনা মনে নাই।'
কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ'র উপন্যাসের মধ্যেও প্রকাশকদের কিছু গল্প আর পুরিশ থেরাপির কিছু সরস বর্ণনা ছিল।
একজন লেখকসত্তা খুবই অসহায় হয়ে পড়ে এই প্রকাশক কমিউনিটির কারণে। লাভের গুড় আর গাছেরটা খায় এরা আবার তলারটাও কুড়িয়ে নিয়ে যায়!
বিখ্যাত লেখিকা জে কে রাউলিং যখন তার হ্যারি পটারের পান্ডুলিপি নিয়ে বিভিন্ন প্রকাশকের কাছে যান! একজন ছাড়া সবাই উনাকে বলেছিল যে, এসব আজগুবি কাহিনী কেউ পড়বে না। হতাশ হয়ে এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রকাশনীতে গেল!
এর পরে ছাপা হলে এটা বেস্ট সেলার হলো।
এরপর একের পর এক সিরিজ আসতে লাগল।
খুব সম্ভবত জে কে রাউলিং হলেন প্রথম বিলিয়নিয়ার রাইটার।
এবার ভাবো/ভাবুন! কি চিজ ছিল ওইসব প্রকাশকগুলো!
জিনিস! ফ্রুটিকাপ্রম্নফ!
এরা খালি লাভই বুঝে! লস নিবে না। রিস্ক নিবে না।
সব ইন্টেলেকচুয়াল'র কপি রাইট খাওয়ার জন্য এরা নানান টাইপ এগ্রিমেন্ট রেডি করে আর নব্য লেখক কিংবা আর্টিস্টদের বস্ন্যাকমেইল করে তাদের ওপর ছড়ি ঘুরানোয় এক্সপার্ট এরা। সাচ আ মিন! তাই আমি নতুন লেখক বা কবির প্রকাশিত বই ফ্রি নিতে নারাজ।
আর ফ্রি জিনিসের কদরও কম।
আমি ব্যক্তিগতভাবে আইন পেশায় এসেছি ২০০৬ সালে। শুরুটা চট্টগ্রাম জজ কোর্টে হলেও এর কিছুদিন পর ঢাকায় তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে আসি।
ছোট আপার শহীদবাগের বাসায় উঠি। ঋ.ঐ. অৎরভ ধহফ অংংড়পরধঃবং ল' চেম্বারে জয়েন করলাম। সিনিয়র ফয়সল হাসান আরিফ স্যার বেশ বিজ্ঞ, অমায়িক এবং বেশ মোটিভেশনাল ছিলেন। আমার আইনজীবী হওয়ার পেছনে স্যারের অনেক অবদান আছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে স্নাতক, সম্মান ও এলএলএম করে স্যার আইন পেশায় মনোনিবেশ করেছেন দীর্ঘদিন ধরে। স্যারের চেম্বারে জজকোর্টে যেতাম নিয়মিত।
এরপরে আরও অনেক ল' চেম্বারে কাজ করেছি।
আমাদের কাছেও অনেকে ফোনে বা সাক্ষাৎ করে পরামর্শ চায়। কিন্তু ম্যাক্সিমাম টাইম ফ্রি-তে পরামর্শ নিয়ে যেতে চায়!
ইয়াং বয়সে ইনফ্যাক্ট অনেকে পরামর্শ ফ্রি-তে নিয়ে আর টিকিটাও দেখা দিত না।
আমার বিজ্ঞ সিনিয়র একদিন এক ফাইল দিয়ে বললেন, 'ফাইলটা রেখে দাও! ফাইল খোলার দরকার নাই। ক্লায়েন্ট ফিস দিলে তারপর কাজ শুরু করবা! কারণ, যতক্ষণ ফিস না দিচ্ছে হি ইজ নট ইয়োর ক্লায়েন্ট!'
সেই মূলমন্ত্র ব্যক্তিগত জীবনে ফলো করছি বেশ কয়েক বছর ধরেই।
নো ফিস। নো ফাইল ওপেনিং। ফাইল অবশ্যই ওপেন হয়। ক্লায়েন্টও আসেন। হাসিমুখেই ফিস দেন। আমার এক স্কুলের বন্ধু একবার বলল, 'দোস্ত! আমাদের ব্যাচের ডাক্তার বন্ধুর চেম্বারে গেলাম। দেখল। আসার সময় জোর করে ফিস দিলাম। দেখলাম বেশ খুশি হলো। এটা ওর পেশা। আমি কেন ফ্রি ট্রিটমেন্ট নিব দোস্ত! আমার অবস্থা তো ভালো।'
আসলে পুওর মার্জিনালাইজদের জন্য ফ্রি পরামর্শ বা মামলা ফ্রি-তে অবশ্যই করব। এটা তাদের অধিকার।
কিন্তু অবস্থাসম্পন্ন কেউ নিশ্চয়ই দরিদ্র কোটায় টিসিবির লাইনে দাঁড়ান না!
অবশ্য অনেকে ফ্রি পেলে আলকাতরাও চায়!
আজিজ উলস্নাহ ইমন, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট