ওকালতি কচড়া বদলি মামলা খোঁজার আতঙ্ক ও আনন্দ
প্রকাশ | ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০
জহিরুল ইসলাম মুসা
আপনারা যারা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর 'বস্নাক ডায়মন্ড' সিনেমা দেখেছেন তারা আফ্রিকার গহিন জঙ্গলের পাহাড়-নদী থেকে মুক্তা ছেঁকে আনার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা পেয়েছেন; কিন্তু ঢাকা কোর্টে প্র্যাকটিসিং আইনজীবী ছাড়া মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের দ্বোতলার সর্বপশ্চিমের খুপরি রুমের গরমে-ঘামে-ময়লার স্তূপে ডুব দিয়ে কাঙ্ক্ষিত মামলার তথ্য তুলে আনার নিদারুণ করুন অভিজ্ঞতা আপনাদের হবে না।
ঢাকা জজ কোর্টে প্র্যাকটিস করা জুনিয়র আইনজীবীদের এবং চেম্বার ক্লার্কদের অন্যতম আতংকের অ্যাসাইনমেন্ট হলো বদলি মামলা খোঁজার দায়িত্ব। মূলত যেসব মামলা মহানগর দায়রা আদালতে বিচার হবে সেসব মামলা সিএমএম আদালত থেকে তদন্ত শেষে বা আসামির উপস্থিতি নিশ্চিত শেষে ট্রায়ালের জন্য বদলি করা হয়। ঢাকায় এসব মামলার সংখ্যা এত বেশি যে, বদলি শেষে নতুন নাম্বার এবং বিচার্য আদালতের নাম পেতে কয়েক মাস এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বছর পার হয়ে যায়।
তো, বদলি মামলাগুলো নতুন রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি করে আদালত ভবনের দ্বোতলার সর্বপশ্চিমের ছোট্ট রুমে স্তূপাকারে ফেলে রাখা হয়। রুমের আকার, পুরনো-নতুন রেজিস্ট্রারের স্তূপ, ধুলা আর গা-গিজগিজ মানুষের ভিড়ের কারণে জায়গাটা হয়ে যায় কুরুক্ষেত্র; রেজিস্ট্রার দখলে নিতে আর সেখান থেকে মামলার তথ্য পেতে প্রয়োগ করতে হয় শারীরিক শক্তি, যুদ্ধ কৌশল ও বুদ্ধি।
আমার সাবেক চেম্বার সাবেক আইনমন্ত্রী ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট মিস্টার হাবিবুল ইসলাম ভূঁইয়া স্যারের চেম্বারে জয়েন করার পর অন্যান্য কলিগদের সঙ্গে প্রথম যেদিন এইরুমে আমি যাই, কোনো রেজিস্ট্রার ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পাইনি। কিন্তু কোনো এক চিপাচাপা দিয়ে একটা মামলার তথ্য আমার চোখে লেগেছিল। কলিগরা আমার দুর্লভ সাফল্য উদযাপন করে দুপুরে খাবার খাইয়ে সম্মানিত করেছিল।
এসব কষ্ট খুব সহজেই লাঘব করা যায়। প্রযুক্তির সহায়তা নিলেই হয়। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু উদ্যোগ/সার্ভিস চালু হয়েছে। যেগুলো সফলও হয়েছে। এবারের ইলেকশনে আমি এমন একজন প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি, যিনি কষ্ট করে এসব রেজিস্ট্রারের প্রতিটি পাতার ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিয়ে থাকেন।
এই যে ছবিটায় দেখা যাচ্ছে কিছু জুনিয়র আইনজীবী বদলি রেজিস্ট্রারের দখল নিয়ে পা ছড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে হলেও একটু শান্তিমতো মামলা খোঁজার চেষ্টা করছেন। রোজার দিনে পড়ন্ত বিকাল হওয়ায় এবং রুমের বাইরে রেজিস্ট্রার নিতে পারায় হয়তো একটু আরাম তারা পাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের কোর্ট-কাচারিতে এমন সব কুৎসিত সিস্টেম চালু করা আছে তাতে করে জজ-আইনজীবী-ক্লায়েন্ট-কোর্ট ইউজারের কোনো আরাম নেই। শান্তি নেই। দুঃখ-কষ্ট-গ্নানি-অপমান আছে।
জহিরুল ইসলাম মুসা, আইনজীবী,
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
ইমেইল: ুধযরৎঁষসঁংধ@মসধরষ.পড়স