ফরাসি অ্যাসাইলাম কোর্টে সবচেয়ে বেশি আপিল আবেদন বাংলাদেশিদের
প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
আইন ও বিচার ডেস্ক
ফ্রান্সের ন্যাশনাল কোর্ট অব অ্যাসাইলাম (সিএনডিএ) গত বছরের আশ্রয়ের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। আদালতের জনসংযোগ বিভাগ অনুসারে, ২০২৩ সালে, মোট ৮ হাজার ১২১ জন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী প্রাথমিকভাবে প্রত্যাখ্যাত আশ্রয় আবেদনের বিরুদ্ধে অ্যাসাইলাম কোর্টে আপিল দায়ের করেছিলেন।
ফ্রান্সে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা প্রথমে শরণার্থী এবং রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য ফরাসি দপ্তরে (অফপ্রা) আশ্রয়ের জন্য আবেদন জমা দেন। তবে অফপ্রা থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়া ব্যক্তিরা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতীয় আশ্রয় আদালতে (সিএনডিএ) আপিল করার সুযোগ পান। আদালত প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে আশ্রয় আদালতে মোট ৬৪ হাজার ৬৮৫টি আপিল আবেদন জমা হয়েছে- যা ২০২২ সালের তুলনায় পাঁচ শতাংশ বেশি।
তবে একই সময়ে আদালত গত বছরের আবেদনসহ মোট ৬৬ হাজার ৩৫৮টি আবেদন নিষ্পত্তি করেছে। প্রতিটি আপিল শেষ করতে সিএনডিএ গত বছর সময় নিয়েছে গড়ে ছয় মাস।
এত বিপুলসংখ্যক আবেদনের মধ্যে সর্বোচ্চ আট হাজার ১২৫টি আপিল আবেদন জমা করেছেন বাংলাদেশিরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাত হাজার চারটি আবেদন করেছেন তুরস্কের আশ্রয়প্রার্থীরা। এছাড়া পাঁচ হাজার ৪৯৬টি আবেদন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে আফগান আশ্রয়প্রার্থীরা। ২০২৩ সালে মোট ১৩ হাজার ৬০৬ জন ব্যক্তি জাতীয় আশ্রয় আদালত থেকে শরণার্থী মর্যাদা অথবা সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন পেয়েছেন- যা সিদ্ধান্ত দেওয়া মোট আবেদনের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ বা ২০ শতাংশ।
তাদের মধ্যে নয় হাজার ৪৬২ জন জেনেভা কনভেনশনের আওতায় রিফিউজি স্ট্যাটাস বা শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছেন। বাকি চার হাজার ১৪৪ জন আশ্রয়প্রার্থী ইউরোপীয় কনভেনশন অনুসারে সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন বা অস্থায়ী সুরক্ষা পেয়েছেন। আদালতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বা সুরক্ষা পাওয়ার দিক দিয়ে শীর্ষে আছে সিরিয়া, ইরান এবং ইউক্রেন থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা।
আর বাংলাদেশিদের সুরক্ষা পাওয়ার হার ১১ শতাংশ। গত বছর আট হাজার ১২৫ জন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী সিএনডিএ'তে আপিল আবেদন করলেও সিদ্ধান্ত পেয়েছেন ছয় হাজার ১৬৮ জন। আর তাদের মধ্যে সুরক্ষা পেয়েছেন ৬৯০ জন আশ্রয়প্রার্থী। অর্থাৎ মাত্র ১১.২ শতাংশ ব্যক্তি রিফিউজি স্ট্যাটাস অথবা সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন পেয়েছেন। ২০২২ সালেও এই হার একই ছিল। বাংলাদেশিদের মধ্যে নারী আশ্রয়প্রার্থীদের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাওয়ার হার (২০.৫%) এবং পুরুষদের (১০.৭%) প্রায় দ্বিগুণ। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি অফপ্রার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছে কিন্তু সুরক্ষার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে ফ্রান্সের জাতীয় আশ্রয় আদালতের সর্বশেষ দেশভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে। গত বছর থেকে, অনেক বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী ইনফোমাইগ্রেন্টসের কাছে অভিযোগ করে আসছে যে, অনেক আশ্রয়ের আবেদন আদালতের শুনানি ছাড়াই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচু্যতি এবং কোভিডপরবর্তী নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মতো উলেস্নখযোগ্য সমস্যা রয়েছে দেশে।