৭৮ বছর পর থাই রাজা আনন্দ মাহিদোলের হত্যার পুনর্তদন্তের দাবি নিয়ে শুনানি
প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
আইন ও বিচার ডেস্ক
থাইল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত মামলাগুলোর মধ্যে একটা হলো রাজা আনন্দ মাহিদোলের অস্বাভাবিক মৃতু্য। থাইল্যান্ডের রাজা আনন্দকে ১৯৪৬ সালে তার শয়নকক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। এই মামলা ফের চালু করার জন্য আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে।
রাম অষ্টম নামেও পরিচিত ছিলেন রাজা আনন্দ। তিনি ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। বর্তমান থাই রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের চাচা এবং শেষ রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের বড় ভাই ছিলেন তিনি।
১৯৪৬ সালের ৯ জুন মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঘরের বিছানায় দেহ মেলে ২০ বছর বয়সি আনন্দের। সরকারি তদন্ত এবং ১৯৫৪ সালে শেষ হওয়া তিনটি আদালতের রায় অনুসারে তাকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছিল।
প্রাসাদের তিনজন কর্মকর্তাকে রাজহত্যায় জড়িত থাকার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১৯৫৫ সালে তাদের মৃতু্যদন্ড কার্যকর করা হয়।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছিল, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রিদি ব্যানোমিয়ং এই ষড়যন্ত্র করেন। প্রিদিকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ১৯৮৩ সালে ফ্রান্সে মারা যান প্রিদি। যদিও পরবর্তী সময়ে সরকার তাকে মুক্তি দিয়েছিল। ১৯৯৭ সালে বিশ শতকের মহান ব্যক্তিত্বের তালিকায় ইউনেস্কো তাকে মনোনীত করে।
এই মামলাটি পুনরায় চালু করার আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে ব্যাংকক ফৌজদারি আদালতে। এই প্রথম আদালতের নির্দেশে ফের ঘটনাটির তদন্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই মামলায় প্রথম পিটিশন দাখিল করেছিলেন কুঙ্গওয়াল বুদ্ধিভানিদ। ৬২ বছরের অভিজ্ঞ রসায়নবিদ এবং সাবেক ব্যবসায়িক নির্বাহী কুঙ্গওয়াল ২০২০ সালে একটি বই লিখেছেন। প্রকাশিত এই বইয়ে সরকারি ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি। সেখানে লেখা রয়েছে, রাজা নিজেই নিজেকে গুলি করেন অর্থাৎ হত্যা নয়, আত্মহত্যার ঘটনা ছিল সেটা। তবে এই অভিযোগ প্রথমবার রায়দানের সময় খারিজ করা হয়েছিল।
আদালতে কুঙ্গওয়াল বলেছেন, তিনি প্রমাণ করতে পারেন, রাজার বন্দুক তার মৃতদেহের পাশে পাওয়া গেছিল। ওই বন্দুকের মাধ্যমে রাজার মৃতু্য হয়। চলিস্নশের দশকে মূল তদন্তকারীরা বলেছিলেন, রাজার ওই বন্দুক তার মৃতু্যর কয়েকদিন আগে ব্যবহার করা হয়েছিল। তারা জানান, আনন্দকে অন্য কোনো বন্দুক দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। যার হদিস মেলেনি।
পুরনো রায়ে বলা হয়েছিল, 'এটা হত্যা। আত্মহত্যা নয়।' কুঙ্গওয়ালের কথায়, 'আমি নতুন প্রমাণ জোগাড় করে এনেছি।' গত বছর একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরিচালিত ব্যালিস্টিক পরীক্ষার উলেস্নখ করে তিনি বলেছেন, রাজা নিজের বন্দুক দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স পরীক্ষার ফলাফল দেখেনি এবং কুঙ্গওয়ালের দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। এ ছাড়াও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ওয়াসুকিত থানুরাতকে মন্তব্যের জন্য পাওয়া যায়নি। তবে শুক্রবার আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল।
গত অক্টোবরে মৃতু্যদন্ডে দন্ডিত হওয়া প্রাসাদ কর্মকর্তা চিৎ সিংসেনির নাতনির (অপরাধী প্রমাণিত হওয়ার পর মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্তদের একজন সিংসেনি) পক্ষে মামলা চালু করার আর্জি জানান কুঙ্গওয়াল।
রাজা আনন্দের মৃতু্য নিয়ে কয়েক দশক ধরে ২৪টির বেশি বই লেখা হয়েছে। অনেক অভিজ্ঞ মানুষজনই সরকারি রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তারা বলেন, সেই সময় স্বচ্ছভাবে তদন্ত করা হয়নি। আনন্দ সংক্রান্ত কয়েকটি বই থাইল্যান্ডে প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপকভাবে বিতরণও করা হয়। তবে বেশিরভাগ বই সত্তর দশকে নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ।
থাইল্যান্ডে একটি কঠোর 'লেস ম্যাজেস্টে' আইন রয়েছে যার ফলে রাজতন্ত্রের মানহানি বা অপমান প্রমাণিত হলে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়।
শুনানি শেষে, দায়িত্বে থাকা চার বিচারপতি মামলাটি আপিল আদালতে পাঠাবেন। মামলাটি পুনরায় চালু করা হবে কিনা সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিবিসি অবলম্বনে