সম্প্রতি অধস্তন আদালতের একটা মামলার রায় পেলাম চেক সংক্রান্ত। প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কর্মচারীর হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে মালিক ইন্ডিয়া গেল ট্রিটমেন্ট এর জন্য। মাসখানেক পর দেশে ফিরলেন। ক্যানসারের রোগী ছিলেন। লাস্ট স্টেইজ। মৃতু্যর জন্য দিন গুনছিলেন। এর মধ্যে একদিন ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ এর জন্য লিগ্যাল নোটিশ পেলেন!
বিস্মিত হলেন। তারই বিশ্বস্ত কর্মচারী তার অগোচরে অফিসের চেক বই থেকে একটা চেক সরিয়ে রেখে এই কুকর্ম করেছে। হতাশ হলেন। কিন্তু, তার অগাধ আস্থা আইন আদালতের ওপর।
ইতোমধ্যে তিনি মৃতু্যবরণ করলেন। এরপর দেওয়ানি মোকদ্দমা দায়ের করল সেই কর্মচারী। এবার তার স্থলাভিষিক্ত হলো তার সন্তানরা। ডিক্রি পেল বাদী। (কনসিডারেশন ছাড়া চেক!) দেনাদার এর চেক ব্যতীত অন্য কারও চেক গ্রহণ করবেন না।
ব্যবসায়িক লেনদেন হিসাবে ৩০ লাখ টাকার একাউন্ট পেয়ি চেক জমা দিলেন। জয়েন্ট সিগনেচার এবং সিলসহ চেক ইসু্য করা হয়। চেকটি ছিল একটা স্কুলের ফান্ডের এবং সেই স্কুলের প্রিন্সিপাল চেক এ সাইন ও সিল দেন এবং স্কুলের ম্যানেজমেন্টের আরেকজন এর সাইনও আছে।
পাওনাদার তার পাওনাবাবদ চেক গ্রহণ করে এবং ব্যাংকে জমা দেন। তার একাউন্টে জমা হয়। কয়েক বছর পর তাকে এরেস্ট করা হয় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে! গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে। সুতরাং, চেক গ্রহণ করার সময় সাবধান হওয়া উচিত।
সেদিন একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর চেম্বারে তিনি তার মেসেঞ্জারকে বললেন, যে চেক বই নিয়ে আসতে। চেকে সাইন করার পর জিজ্ঞেস করলাম যে চেক বই এভাবে অরক্ষিতভাবে কেন রাখে!
বলল, 'ভাই! আমার চেকবই তো চেম্বারেই রাখি।'
বললাম, 'ঘবাবৎ ফড় রঃ ধমধরহ.'
তারপর কয়েকটি মামলার ফ্যাক্ট শেয়ার করলাম।
সে বলল, 'এভাবে তো ভাবি নাই, ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে।'
২৬ মার্চ গেলাম চোখের ডাক্তারের কাছে। লেন্স দিয়ে পাওয়ার এডজাস্ট করে প্রেসক্রিপশন নিয়ে বের হওয়ার আগে বললাম, 'একটা ফ্রি পরামর্শ দিচ্ছি। এভাবে যেখানে সেখানে চেকবই রাখবেন না। একটা পাতা কেউ সরিয়ে রাখলে বড় বিপদে পড়বেন। পরে দেখবেন পরিচিত কেউ একজন ৭০ লাখ টাকা চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই দিসে!'
তার পাশের জন বললেন, 'একাউন্টে তো টাকা নেই! চেক নিয়া কি হবে!' আমি হেসে বললাম, 'সেজন্যই তো মামলা খাবেন!'
এবার বললেন, 'আমি তো অফিসে চেকবই রেখে যাই!'
বললাম, 'ঘবাবৎ ফড় রঃ ধমধরহ.'
আইনপেশায় গত ১৭ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে তার কাছের বন্ধু এবং আত্মীয়স্বজন।
বন্ধুই পার্টনারশিপ ব্যবসা করে এবং মনোমালিন্য হয়! এরপর মামলা। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে। বন্ধু বন্ধুর জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকে। তাই, সুজন দেখে বন্ধুত্ব করা উচিত।
আর, নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে সাবধান হওয়া উচিত।
আজকের প্রসঙ্গ ছিল ভিকটিম সংক্রান্ত। অবশ্য রাজা মিয়ার মতো অনেকেই আছে যারা টাকা ধার নিয়ে চেক দিয়ে পরবর্তী সময়ে সব টাকা আত্মসাৎ করে বছরখানেক জেল খেটে বের হয়ে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ ধার দিয়ে ভুক্তভোগী; আর কেউ অসাবধানতার কারণে ভুক্তভোগী।
লেখক, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট