শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

টাউটমুক্ত হোক আইন অঙ্গন

অ্যাডভোকেট মো. সাইফুদ্দীন খালেদ
  ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
টাউটমুক্ত হোক আইন অঙ্গন

সেবামূলক কয়েকটি পেশার মধ্যে আইনপেশা অন্যতম। বহুকাল থেকে আইনজীবীরা সাধারণ মানুষকে আইন পেশার মাধ্যমে সেবা দিয়ে আসছেন। আইনপেশা সর্বজন স্বীকৃত ও মানবতার পেশা। দেখা যায়, একটি বিরোধকে কেন্দ্র করে নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত পর্যন্ত আলাদা আলাদা কোর্টে বহু মামলা দায়ের হচ্ছে। সঠিক আইনের প্রয়োগ করে একজন আইনজীবী মানুষকে ন্যায়বিচার এনে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনগণের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞ আইনজীবীদের ভূমিকা ব্যাপক। এই উপমহাদেশের বিচারপ্রার্থী মানুষের প্রত্যাশা পূরণে এবং গণ মানুষের অধিকার আদায়ে অনেক খ্যাতনামা বিজ্ঞ আইনজীবীদের অবিস্মরণীয় ভূমিকা জাতিকে পথ নির্দেশ দিয়েছে। ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব ব্যক্তি জীবনে আইন পেশায় নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি মানুষের অধিকার আদায়ে ছিলেন আপসহীন চরিত্রের অধিকারী।

আইনজীবীরা নামের আগে 'বিজ্ঞ' শব্দটি ব্যবহার করতে পারেন। আমার জানামতে পৃথিবীতে এই একটি পেশা (আইনপেশা) আছে যার নামের পূর্বে 'বিজ্ঞ' শব্দটি ব্যবহার করা যায়। কিন্তু বর্তমানে এই পেশা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য কেন? আমি খুঁজেছি সেই প্রশ্নের উত্তর। দালাল-টাউট বা আইনজীবী না হয়েও আইনজীবী পরিচয় দেয় তাদের জন্য আজ এই মহৎ পেশা বিরূপ মন্তব্যের মুখোমুখি। বার কাউন্সিল কর্তৃক এ বিষয়টি যাচাই হওয়াটা একান্তভাবে প্রয়োজন বা সময়ের দাবি। আইন পেশার স্বচ্ছতার স্বার্থে আমাদের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ ওই বিষয়ের ওপর একটি জরিপ করে বিষয়টি যাচাই করতে পারেন।

পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা আইনজীবী সমিতিকেও এ ব্যাপারে আরও সোচ্চার হতে হবে। দেশের সব আইনজীবী সমিতি ও আদালত অঙ্গনে টাউট, দালাল ও ভুয়া আইনজীবী সহকারী মুক্ত করতে সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য উচ্চ আদালত। এ আদেশ বাস্তবায়ন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এলএল.বি/এলএল.বি (অনার্স) পাসের পর এডভোকেটশিপ (এমসিকিউ+লিখিত+মৌখিক) পরীক্ষার মাধ্যমে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে হয়, নিদর্শন স্বরূপ অনুমতি পায় 'গাউন' পরার এবং অধস্তন আদালতে আইনপেশা চর্চার। যদি যাচাই করে একটি প্রতিবেদন বা ঘোষণা দেওয়া যায়, আমাদের দেশের প্রতিটি আদালত প্রাঙ্গণ টাউটমুক্ত, তাহলে আমার মনে হয় সেটা আমাদের আইনজীবী এবং বিচার বিভাগের জন্য একটি গৌরবের বিষয় বলে বিবেচিত হবে।

আইনজীবী সমাজ বিচার প্রার্থী জনগণের সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন, যাহা কিনা সাধারণ মানুষ উপলব্ধি করতে পারেন না। সমাজে আর একটি কথা প্রচলিত আছে এই বলে যে- 'যার নেই কোনো গতি সে করে উকালতি' আসলে কি বিষয়টি এরকম, আমি মনে করি, মোটেই নয়, ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল।

মনে রাখুন আইনজীবীকে সব বিষয় অল রাউন্ডার থাকতে হয়। পড়াশুনার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে হয়। যার আছে সব গতি সেই করে একমাত্র ওকালতি। কারণ, গতিহীন লোক আর যা-ই করুক ওকালতি করতে পারে না। আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স নির্ধারণ করা উচিত। আইনজীবীদের রয়েছে সবচেয়ে বড় অস্ত্র কালো কোট। কালো কোটের সম্মান রক্ষার্থে আমাদের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদ্বার করা উচিত- তাহলে আমাদের সম্মানজনক আইন পেশায় আরও স্বছতা ফিরে আসবে। সর্বশেষ কথা হচ্ছে, আদালত অঙ্গন হয়ে উঠুক বিচার প্রার্থী জনগণের আস্থার অঙ্গন।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ

সুপ্রিম কোর্ট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে