সংসারের জোয়াল ঠেলে কেটে যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা। দিন-মাস-বছরও। বয়স বাড়ে, মন্থর হয়ে আসে কাজের গতি। তারপরও কেউ জানতে চায় না, হাড়ভাঙা ওই পরিশ্রমের পারিশ্রমিক কী? যিনি শ্রম দিচ্ছেন, তার পরিশ্রমের মূল্য কতটা? একটি মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্ট বলল, গৃহবধূদের বেকার বলা যাবে না। তারাও স্বোপার্জনকারী। সংসারে তারা দিবারাত্রি যে কাজ করেন, তার মূল্য রয়েছে।
১৫ বছরের পুরনো একটি ঘটনা নিয়ে মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলা উঠেছিল বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের বেঞ্চে। তিনিই মামলার রায় দেওয়ার সময় পর্যবেক্ষণে ওই মন্তব্য করেন।
গৃহবধূদের উপার্জন প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, 'কে বলেছে, গৃহবধূরা বেকার? সংসারে গৃহবধূদের অবদান অনেক বড়। তারা কোনো ছুটি না নিয়ে ৩৬৫ দিন সংসারের যাবতীয় কাজ করেন। একই কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করালে যে খরচ হতো, তা ব্যয় করতে হয় না ওদের দৌলতেই। তাই সংসারে ওদের কাজের আর্থিক মূল্যও রয়েছে। আর সেই জন্যই গৃহবধূদের বেকার বলা যাবে না। তাদেরও উপার্জনকারী হিসেবেই দেখতে হবে।'
এই মর্মে এক গৃহবধূর মৃতু্যর ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় সাড়ে ছ'লাখ টাকা দেওয়ার নিদান দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
পথ দুর্ঘটনায় ওই মহিলার মৃতু্য হয়েছিল ২০০৮ সালের এপ্রিলে। বর্ধমানের ক্ষীরগ্রামে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাস ধরতে এসেছিলেন মহিলা। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডের সামনেই তাকে পিষে দিয়ে চলে যায় একটি বাস। এই ঘটনায় বর্ধমানের মোটর অ্যাকসিডেন্ট ক্লেম ট্রাইবু্যনালে মামলা করেন তার পরিবার। ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবি করেন ছ'লাখ টাকা। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে মামলা, সেই সংস্থা এই দাবি মানতে চায়নি।
বর্ধমানের ওই পরিবারটিকে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয় সংস্থাটি। পাল্টা ওই গৃহবধূর পরিবার হাইকোর্টে মামলা করেন। তাদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। তিনি ২০০৮ সাল থেকে ওই গৃহবধূর সম্ভাব্য উপার্জনের হিসাব দিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্য দিকে, সংস্থার তরফে বলা হয়, যিনি মৃত, তিনি কোনো উপার্জন করতেন না। তিনি একজন গৃহবধূ। তবে তার সম্ভাব্য উপার্জন হিসাবে এত টাকা চাওয়া হয় কী করে।
এই মামলারই শুনানিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছে মৃত গৃহবধূর পরিবারকে ৬ লাখ ৪১ হাজার ২০০ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। ওই গৃহবধূর প্রতি মাসের সম্ভাব্য বেতন ৩০০০ টাকা হিসাবে ধরে তার ওপর সুদের হার হিসাব করেই এই টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালত। তবে যেহেতু ইতোমধ্যেই ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, তাই বাকি আরও ৪ লাখ ৫১ হাজার ৭০০ টাকা দিতে হবে সংস্থাটিকে।