'প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে একটি দিন আমাদের জন্য বন্ধু' এই প্রতিপাদ্যে শৈশব-কৈশোরের ফেলে আসা মধুর স্মৃতি কাবাডি খেলার মধ্য দিয়ে যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম কেরানীগঞ্জ কমিটির চড়ুইভাতি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রামীণ ঐতিহ্য আর মানুষের মাঝে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন অটুট রাখতে এ খেলার আয়োজন করা হয়। শনিবার ৯ নভেম্বর সকাল হতে না হতেই সবাই জড়ো হয় পূর্বনির্ধারিত স্থান উপজেলার কলাতিয়া নাওখোলার নদীপাড়ে। বাজারের দায়িত্বে থাকা সবাই বাজার নিয়ে যথাসময়ে হাজির হয়। প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে শুরু হয় রান্নার জন্য আয়োজন, শুরু হয় কাজের ধুম। দায়িত্ব অনুযায়ী সবাই যে যার মতো শুরু করে কাজ। কেউ পানি আনা, কেউ কাটাকাটি, কেউ চুলা জ্বালানো, কেউ আবার হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কারের কাজে নেমে পড়ে। চাল ধোয়া, মাংস কাটাসহ সব কাজই করা হয়েছে মিলেমিশে। রান্নার দায়িত্বে ছিল যারা তারা ব্যস্ত সুস্বাদু রান্না করার কাজে। রান্না করতে করতে একসময় দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলো।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শুরু হলো ভোজন পর্ব। রাঁধুনিদের রন্ধনশিল্পে মুগ্ধ হলো সবাই। গান, কবিতা ও আড্ডা ছিল চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানে। চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানটি আলোকিত করে রেখেছিলেন ফ্রেন্ডস ফোরাম উপদেষ্টা ও কলাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক বেদৌরা আলী শিমুল। এর আগে সাধারণ শিক্ষার্থী লাল দল অপরটি ফ্রেন্ডস ফোরাম কেরানীগঞ্জ সবুজ দল কাবাডি খেলায় অংশগ্রহণ করেন। এতে লাল দলকে পয়েন্ট টেবিলে হারিয়ে সবুজ দল বিজয়ী হয়। খেলা পরিচালনা করেন ফ্রেন্ডস ফোরাম কেরানীগঞ্জ কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক মৃদুল রাজবংশী, সহ-প্রচার সম্পাদক সেতু আফরিন ও সহ-শিক্ষা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আয়শা সিদ্দিকা বাঁধন। এ সময় খেলা দেখতে কলাতিয়ার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সমবেত হন। তাদের মধ্যে ফারুক শেখ নামে এক বৃদ্ধ বলেন, 'একটা সময় ছিল প্রতিটি গ্রামে কাবাডি খেলা হতো এখন আর এ খেলা তেমন দেখা যায় না। দীর্ঘদিন পরে সুপরিচিত পত্রিকা যায়যায়দিন বন্ধুদের খেলা দেখতে আমাদের ভালো লেগেছে। আমরা চাই এমন কাবাডি খেলার আয়োজন আগামীতেও হোক। কাবাডি খেলা আমাদের ঐতিহ্য। এই খেলাকে বাঁচিয়ে রাখতে মাঝে মাঝে এমন আয়োজন প্রয়োজন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকাশমণি গাছের ফাঁকে ফাঁকে লাল, হলুদ সোনালি ফুল, ঝরা পাতার শব্দ, পাখির ডাক, পুরো নাওখোলা নদীপাড় স্বপ্ননিবাস যেন এক টুকরো রঙিন শিক্ষা পরিবারের ক্যানভাসে আচ্ছন্ন। কার গানের গলা ভালো আন্দাজ করা বেশ মুশকিল! বন্ধুরা ব্যস্ত খুব। এ সময় উপদেষ্টা ও অধ্যাপক বেদৌরা আলী শিমুল বলেন, চড়ুইভাতি ও কাবাডি খেলা সুস্থ ধারার বিনোদনকে উৎসাহিত করে। সুস্থ ধারার বিনোদনে মানুষ যখন সম্পৃক্ত হবে তখন তারা শারিরিক মানসিকভাবেই সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে। এ জন্য তারা মাদক থেকে দূরে থাকবে যেটা আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে পজেটিভ ভূমিকা পালন করবে। হারিয়ে যাওয়া এ খেলাগুলো নতুন করে আবার শুরু হলে সমাজের অপরাধ কর্মকান্ড হ্রাস পাবে। যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম কেরানীগঞ্জের বন্ধুরা নতুন করে আমাদের মাঝে নিয়ে এসেছে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য।' ফ্রেন্ডস ফোরাম কেরানীগঞ্জ কমিটির দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ সাদি বলেন, 'চড়ুইভাতিকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হয় তা আমার জানা নেই। তবে চড়ুইভাতি ও কাবাডি মানে আনন্দ, খুনসুটি, সবাই মিলে শৈশবে ফিরে যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া আর একটি স্মৃতিময় দিন। ফ্রেন্ডস ফোরাম চড়ুইভাতি ছিল আমার জীবনের একটি সেরা মুহূর্ত। সবাই মিলে একসঙ্গে রান্না করা, খাওয়া-দাওয়া, গল্প-আড্ডা ও বিদ্রোহী কবিতা সবকিছুই ছিল অসাধারণ।' পারস্পারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, আনন্দ, একঘেমি দূর ও ব্যস্ততার মাঝে কিছুটা প্রশান্তি। ফ্রেন্ডস ফোরাম কেরানীগঞ্জ কমিটির সভাপতি কাওসার আহমেদ বলেন, 'আধুনিকতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে মহাকালের পাতা থেকে ভিডিও গেমের দৌরাত্ম্যে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার চড়ুইভাতি ও কাবাডি। শৈশবে যেসব খেলাধুলায় দিন কাটিয়েছেন আজকের বয়োবৃদ্ধরা, তারাও এখন ভুলতে বসেছেন সেসব খেলার নাম। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আমাদের বন্ধুদের স্মৃতিপটে শৈশব। ঐতিহ্যবাহী এ খেলা এখনো মানুষের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে। আশা করি গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খেলা আবারও সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। ফ্রেন্ডস ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মাসুম পারভেজ বলেন, 'চড়ুইভাতি ও কাবাডি হচ্ছে গ্রামীণ খেলা। কিছু সময় আনন্দ দিতে ও হারিয়ে যাওয়া খেলাটি ফিরিয়ে আনতেই এ আয়োজন। ফ্রেন্ডস ফোরাম কেরানীগঞ্জ কমিটি কাবাডি খেলার আয়োজন করায় বহুলোক দেখতে এসেছে। সুন্দর ও দর্শকদের উত্তেজনার মধ্য দিয়ে খেলাটি শেষ হয়েছে। তবে এ আয়োজনকে সফলভাবে সম্পন্ন করার পেছনে কিছু যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম বন্ধুদের নাম উলেস্নখ করতেই হয়। তার মধ্যে ফ্রেন্ডস ফোরাম কেরানীগঞ্জ কমিটির সহ-সভাপতি শিহাব উদ্দিন, অর্থবিষয়ক সম্পাদক মোরসালিন হোসেন, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম রাজু, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন মিনহাজ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক শিপন উদ্দিন, সদস্য কিফায়েত হোসেন, সাব্বির হোসেন, নাজমুল ইসলাম হৃদয় ও রিফাত হোসেন অন্যতম।
চা-চক্রের মাধ্যমে গল্পে মুখর সময়টা যেন চড়ুই পাখির মতো ফুরৎ করে উড়ে চলে গেল! শৈশবের স্মৃতি মোড়ানো হরেক রকম চড়ুইভাতি ও কাবাডি খেলা, প্রাণখুলে আড্ডা, গলা ছেড়ে গান, গুচ্ছ গুচ্ছ গল্প, চমৎকার সব রান্না। নাওখোলা নদী পাড়ের দুপুরটা অসাধারণ, অনবদ্য, রোমাঞ্চকর। জীবন এখানে বেশ রঙিন। বেঁচে থাকুক আনন্দময় জীবন।
সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক
ফ্রেন্ডস ফোরাম কেরানীগঞ্জ, ঢাকা