শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

ভূঞাপুরের বন্ধুরা লালনের বাড়ি ভ্রমণে

আখতার হোসেন খান
  ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
ফ্রেন্ডস ফোরাম ভূঞাপুরের বন্ধুরা লালনের বাড়ি ভ্রমণের পথে

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের সাংস্কৃতিক রাজধানী ভ্রমণ ছিল আনন্দময়। গত ১৮ অক্টোবর ভূঞাপুর উপজেলা যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের বন্ধুদের সাংস্কৃতিক আনন্দ ভ্রমণ ছিল উপভোগ করার মতো। সেদিন ছিল মহাত্মা লালন সাঁইজির ১৩৪তম তিরোধান দিবস। সাধক, গায়ক, গীতিকার ও সুরকার লালন ফকিরের তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। গাড়ি এলো ওঠে পড়লাম সবাই। গাড়ি ক্রমাগত এগিয়ে চলল। হাইয়েজ গাড়িটি তখন বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপরে। বর্ষার পরে মৃদু তরঙ্গে বয়ে চলছে এক সময়ে সর্বগ্রাসী যমুনা। উত্তর পাশে নির্মাণাধীন রেল সেতু। ড্রাইভার সুজন মিয়া যেন সবার মনের কথা পড়ে ফেলল। সে ভিডিও ছেড়ে দিল- 'পাড়ে কে যাবি নবীর নৌকাতে আয়...।' আমাদের সাথে ছিল, বামনহাটা একতা বাউল সংঘের কণ্ঠ শিল্পী আমজাদ হোসেন, আকাঈদ মিয়া, ঢোল বাদক শফিক আর ছিলেন, আলাউদ্দিন খান, আব্দুল জলিল খান, মফিজুল ইসলাম, শাহিন মিয়া, রহিজ উদ্দিন, আয়নাল, সফিক শেখ, বিপস্নব (বিটু) আর সামনের সিটে বসে করতালি দিয়ে গানের তাল ধরছেন ফ্রেন্ডস ফোরামের উপদেষ্টা অধ্যাপক আখতার হোসেন খান। সবাই উৎফুলস্ন। প্রাণে প্রাণ মিশিয়ে একযোগে গেয়ে ওঠে- 'মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি...।'

চলতে চলতে গাড়ি রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্র পেরিয়ে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর লালন শাহ সেতুতে উঠে পড়ল। পশ্চিম পাশেই এশিয়ার প্রাচীন ও প্রথম দীর্ঘতম রেল সেতু হার্ডিজ ব্রিজ। গান ছেড়ে সবাই নেমে এলো লালন শাহ সেতুতে। ছুটোছুটি আর সেলফি তোলার পর সবাই ক্যামেরা এক ফ্রেমে বন্দি হলো। গাড়ি আবার ছুটে চলল কুষ্টিয়ার ছেঁউরিয়া বাড়ির উদ্দেশে। যেথায় ঘুমায় মানবতার কবি, ফকির সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক লালন সাঁইজি। কাছে পেয়ে গেলাম লালন কন্যা ডলি মন্ডল এবং বারিক পাগলাকে। প্রিয় শিল্পী ডলি মন্ডলকে 'নীল গোলাপের ভালোবাসা' বইটি উপহার দিয়ে আমরা ফিরে এলাম।

লালন শাহকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তার গান উনিশ শতকে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিনি ছিলেন একজন মানবতাবাদী সাধক। যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সব জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক এই মনোভাব থেকেই তিনি তার গান রচনা করেছেন। তার গান ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে। তার গানগুলো যুগে যুগে ফরিদা পারভীন, শফি মন্ডল, জামাল উদ্দিন টুনটুন বাউল, কাঙ্গালিনী সুফিয়া, সমীর বাউল, লায়লা, ডলি মন্ডল, বারিক পাগলা, স্বাধীন বাংলাসহ হাজারো কণ্ঠে লালিত হচ্ছে। কুদ্দুছ ঢুলীর ঢোল বাজনা সবাইকে মুগ্ধ করে। গান্ধীজিরও ২৫ বছর আগে, ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম তাকে 'মহাত্মা' উপাধি দেওয়া হয়েছিল।

সেই মহাত্মা লালন সাঁইজির মাজার, জাদুঘর, ঘুরে আমরা গেলাম মূলমঞ্চে। আলোচনার পর শুরু হলো লালনের বাণী। সারা রাত ধরে ৪২ জন শিল্পীর কণ্ঠে মনোমুগ্ধকর গান শুনে গাড়িতে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। কানে সেই সুর বাজতে থাকল- 'যেখানে সাঁইর বাড়াম খানা, যেখানে সাঁইর বাড়াম খানা...।'

উপদেষ্টা

ফ্রেন্ডস ফোরাম, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে