নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশা পূরণে সচেতনতাই যথেষ্ট
প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
জ্যোতিষ সমাদ্দার বাবু
সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই সময় ও জীবনকে পাশাপাশি রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে যানবাহন চালনা ও যানবাহনে চলাচল করা উচিত। গবেষণায় দেখা যায়, সড়কগুলোতে প্রতিদিন যত গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে তার বেশির ভাগই সামান্য ত্রম্নটি, ওভার স্পিড ও ড্রাইভারের অসহিষ্ণুতার কারণেই হয়। ২০১৭ সালের ৫ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়। ফলে ২০১৭ সাল থেকে ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে সরকারি উদ্যোগে জাতীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রতিটি দিবস পালিত হয় শুধুমাত্র পালন করার দরকার তাই; কিন্তু কোনো দিবসের তাৎপর্য গুরুত্বসহকারে পরবর্তী সময়ে আর মনে রাখা হয় না বা ঐ দিবসের নিয়ম-কানুন শুধু ঐ দিনেই সীমাবদ্ধ থাকে। ঠিক নিরাপদ সড়কও ঢাকঢোল পিটিয়ে পালন করা হয়। কিন্তু সড়কে আইন মানার কোনো ইচ্ছা নেই। প্রতিদিন এত গাড়ি দুর্ঘটনা এবং এত প্রাণহানি ঘটে তবুও পখচারী, যাত্রী, ড্রাইভার বা কারো মধ্যে একটু সচেতনার আভাস পরিলক্ষিত হয় না। মাঝেমধ্যে সরকার কর্তৃক আইন অমান্য করার জন্য গাড়ির ড্রাইভারদের নামে মামলা বা গাড়ির বিভিন্ন কাগজপত্রের জন্য মামলা দিয়ে কিছু জরিমানা আদায় করা হয়। তবে এতেও কোনো লাভ হচ্ছে না। কোনো আইনই গাড়ি দুর্ঘটনা কমাতে পারছে না।
মোটকথা কারো মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই। নিয়ম-শৃঙ্খলার কোনো বালাই নেই- কে শোনে কার কথা। সবাই আগে আগে গন্তব্যে পৌঁছাতে চায়। কোন গাড়ির ড্রাইভার কার আগে যাবে, কত বেশি যাত্রী তুলতে পারবে, কে কাকে ওভারটেক করবে- এ প্রবণতাই সব সময় লক্ষ করা যায়। আবার পথচারীরা কে কত তাড়াতাড়ি রাস্তা পারাপার হবে সেই চিন্তা তাদের মাথায় থাকে কিন্তু কখনই তারা রাস্তা পারাপারের নিয়মটি মানতে চান না।
সড়কপথে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি একটি অন্যতম প্রধান সামাজিক, অর্থনৈতিক সমস্যা। এমনকি এ সমস্যা জনস্বাস্থ্যগতও বটে। আমাদের দেশে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি দুর্ঘটনায় যে মূল্যবান প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে তা অত্যন্ত বেদনার। সড়কপথে গাড়ি দুর্ঘটনায় যিনি মারা যান, তার পরিবারকে দীর্ঘকাল ধরে বয়ে বেড়াতে হয় দুঃসহ যন্ত্রণা। আর যারা প্রাণে বেঁচে যান তাড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে পরিবারের এবং সমাজের বেঝা হয়ে যান এবং তাদের দুর্বিষহময় জীবন যাপন করতে হয়। বেঁচেও তারা ভোগ করেন মৃতু্যও চেয়েও অধিক যন্ত্রণা।
গাড়ি দুর্ঘটনা কারোরই কাম্য নয়। তথাপি সড়ক বা মহাসড়ক সব সময় নিরাপদ হয় না। কিন্তু সচেতনভাবে গাড়ি চালালে নিরাপদভাবে যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু প্রতিনিয়ত সেখানে বেড়ে চলছে মৃতু্যর মিছিল। দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হচ্ছে সঠিক নিরাপদ সড়কব্যবস্থার অভাব। আজকাল সংবাদপত্রে প্রকাশে প্রতিদিনকার অনিবার্য বিষয় হচ্ছে সড়কপথে গাড়ি দুর্ঘটনা। আমরা যখন থেকে আধুনিক সড়কব্যবস্থায় নির্ভরশীল হয়েছি, যান্ত্রিক যানবাহনের ভরসা করছি, তখন থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবি অব্যাহত রয়েছে। দিন দিন যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে হারে রাস্তায়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের সংখ্যা। রাতে দূরপালস্নার গাড়ি এবং ভোর হতে না হতেই শহরে শুরু হয় মানুষের কর্মব্যস্থতা। এই ব্যস্ততা থেকে যানজটসহ বিভিন্ন রকমের দুর্ঘটনা। কর্মব্যস্ত মানুষগুলো রাস্তায় এসে জড়ো হয় একসঙ্গে। তখন থেকেই শুরু হয় এলোপাতাড়ি ছোটাছুটি, গন্তব্যস্থলে কে আগে যাবে তার জন্য ছুটে চলা। কেউ কেউ পৌঁছায় গন্তব্যস্থলে আবার কেউ কেউ চিরদিনের মতো পৌঁছায় পরকালের গন্তব্যস্থলে বা পঙ্গুত্ববরণ করে। সড়কে গাড়ি দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অধিক যানবাহন, ওভার স্পিড, দ্রম্নততার সঙ্গে ওভারটেকিং করা, ত্রম্নটিপূর্ণ ট্রাফিক ব্যবস্থা, ভাঙা রাস্তা, গাড়ির ত্রম্নটিপূর্ণ ইঞ্জিন, চালকের অসাবধানতা ইত্যাদি দায়ী। এছাড়া আরও আছে, ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করা, ওভার ব্রিজ বা ফুটপাত রেখে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটা, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অদক্ষ চালক বা হেল্পার দিয়ে গাড়ি চালানো, প্রতিযোগিতাপূর্ণ গাড়ি চালনা ইত্যাদি। শুধু মুখে বলে সচেতন নয়, এর জন্য কঠিন আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে করে জনসাধারণ সব সময় নিয়ম মানতে বাধ্য হন। বর্তমান সময়ে সড়কপথে গাড়ি দুর্ঘটনা একটি আতঙ্কের নাম। এই আতঙ্ক ও এর ভয়াবহতা থেকে নিজেদের প্রাণ রক্ষা ও নিরাপদ রাখতে সরকারসহ সব জনগণের এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে, তবেই এ ভয়াবহ মৃতু্যর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
পুলিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইন অমান্য করে প্রতিদিনই সড়কপথে কোথাও না কোথাও গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটছে। শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি করা যাচ্ছে না। সড়কে নিরাপত্তা যে তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে যাচ্ছে। সড়কে চলার পথকে সুশৃঙ্খল ও সুসমন্বিত করতে হলে সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে সচেতন হতে হবে এবং অন্যকে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। টেকসই সচেতনতা ক্যাম্পেইন ও যানজটমুক্ত নিরাপদ গন্তব্য এ নিয়ে যদি সরকার, বাসমালিক, বাসচালক, যাত্রী ও পথচারী সবাই সচেতন হয়, তবে গাড়ি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করে ও যানজটমুক্ত একটি সুন্দর শহর হতে পারে।
লেখক : সাংবাদিক ও সংগঠক