শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শান্তি মন্ত্রণালয় এখন সময়ের দাবি
প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
জ্যোতিষ সমাদ্দার বাবু
আজ আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস। জাতিসংঘ ঘোষিত একটি দিবস, প্রতি বছর এ দিবসটি পালিত হয় ২১ সেপ্টেম্বর। বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঘোষিত এ দিবসটির উদ্দেশ্য হলো পৃথিবী থেকে যুদ্ধ ও সংঘাত চিরতরে নিরসন করে একটি সুখী-সমৃদ্ধ পৃথিবীর। যুদ্ধরত অঞ্চলসমূহে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মাধ্যমে সেসব অঞ্চলে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। এ দিবসটি ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম উদযাপিত হলেও বর্তমানে জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্র, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক দলের সদস্য এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করে থাকেন। এ বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য ঈঁষঃরাধঃরহম ধ ঈঁষঃঁৎব ড়ভ চবধপব বাংলায় যার অর্থ হয় 'শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলা'। শান্তি, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সম্প্রীতি বজায় রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য এ দিবসটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে জাতিভেদ, জাতপাতের সমস্যা যুদ্ধবিগ্রহ বাড়তে থাকায় তা দূর করার জন্যই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। তবে শুরুতে প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় মঙ্গলবার দিবসটি পালন করা হতো। তবে ২০০২ সাল থেকে ২১ সেপ্টেম্বর দিনটিকে বিশ্ব শান্তি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।
প্রতিবছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে 'শান্তির ঘণ্টা' বাজানোর মধ্য দিয়ে দিবসটির উদ?যাপনের সূচনা হয়। এ ঘণ্টা স্মরণ করিয়ে দেয় 'যুদ্ধের পরিণাম মানুষের মৃতু্য।' এছাড়া ঘণ্টাটির পার্শ্ববর্তী সড়কে ইংরেজিতে 'স্থিতিশীল বৈশ্বিক শান্তি দীর্ঘজীবী হোক' বাণী খোদাই করা রয়েছে।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস যিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি ২০২৩ সালের 'সোশ্যাল বিজনেস ডে ২০২৩' মালয়েশিয়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, 'আমরা শান্তি চাই, কিন্তু যা কিছু করি যুদ্ধের জন্য করি'। তিনি আরও বলেন, 'এবার শান্তির দিকে তাকান। যেটা দুনিয়ার মুখ্য বিষয়, সেটার জন্য কিছুই নেই। শান্তি মন্ত্রণালয় বলে দুনিয়াতে কোনো মন্ত্রণালয় নেই। শান্তি চাইতে হলে তার জন্য কাজ করতে হবে। চিন্তা করতে হবে, ফ্রেমওয়ার্ক বানাতে হবে। সেটা নেই।' যুদ্ধ সৃষ্টি করছে ইকোনমিকস, আবার শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারলে ইকোনমিকসই করতে পারবে। নতুন নতুন টেকনোলজি আসছে। 'এই যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজির কথা বলছি, তার আগে আমরা মহাজগতের জন্য টেকনোলজি করেছি- এগুলো কোথা থেকে আসছে? সব আসছে ডিফেন্স রিসার্চ থেকে। ডিফেন্স রিসার্চের প্রয়োজনেই আমাদের এদিক-সেদিক যেতে হচ্ছে যে মানুষ মারার জন্য কোনো কলকব্জা করতে হবে। এত নতুন নতুন টেকনোলজি তৈরি হচ্ছে, কারণ টাকা ঢালছে। এটা করছে মানুষ মারার জন্য। এই রিসার্চ, এই প্রতিষ্ঠান, এই গবেষণা, মানুষ ডাকা- এর কোনোটাই শান্তির জন্য নেই।'
ঐ সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, 'আরেকটি বিষয় হচ্ছে, শান্তি তো আর মুখের কথায় আসবে না। টাকা-পয়সা লাগবে, তার জন্য একটা বাজেট দরকার। মারার জন্য বিরাট বাজেট করেছেন, কিন্তু শান্তির জন্য করেননি। অথচ মারারটা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন যে সেটা শান্তির জন্য করছেন। যুদ্ধ করছেন কী জন্য, শান্তি আনার জন্য। অদ্ভুত কথা। যুদ্ধ করে শান্তি আনা যায় নাকি?'
'শান্তির নিজস্ব একটা প্রক্রিয়া থাকবে। সেই প্রক্রিয়া আমরা শুরু করিনি। আমরা শান্তির মন্ত্রণালয়ও করিনি, শান্তির বাজেটও করিনি, শান্তির ইন্ডাস্ট্রিও পৃথিবীর কোথাও নেই। এই মন্ত্রণালয়ের জন্যও কেউ নেই, বুদ্ধি দেওয়ার মতোও কেউ নেই। এটা শোনার জন্য কারও গরজও নেই।'
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস যথার্থই বলেছেন, শান্তির জন্য সবাই কান্নাকাটি করেন; কিন্তু কাজের বেলায় তেমন কেউ কিছুই করেন না। সারা পৃথিবীতে যুদ্ধবিগ্রহের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছেন। শান্তির দেখাটি নেই। বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আপনি দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের আশা ও বিশ্বাস আপনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের মাথায় বসে এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। বাংলাদেশে হোক প্রথম 'শান্তি মন্ত্রণালয়' বিশ্ব শান্তির দেশ হোক বাংলাদেশ। সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মুক্তি আসুক, শান্তি আসুক। বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক, শান্তির জয় হোক, আমরা শান্তির পৃথিবীর জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।'
লেখক : সাংবাদিক ও সংগঠক।