বৃষ্টি মানেই সৃষ্টির উন্মাদনা। বৃষ্টি মানেই প্রকৃতির সজিবতা। বৃষ্টি মানেই নাগরিক জীবনের মুগ্ধতা। বৃষ্টি বয়ে নিয়ে আসে আষাঢ়-শ্রাবণের বারতা। আর আষাঢ় শ্রাবণ মানেই ভরা বর্ষার মৌসুম। বর্ষার আদর প্রকৃতির কাছে সম্পূর্ণ আলাদা। বর্ষা এলেই প্রকৃতি যেন জেগে ওঠে যৌবনের উন্মাদনায়। বর্ষার আকাশ যেন ফরসা হতেই চায় না। সব সময় মেঘের ঘনঘটা লেগেই থাকে। শুরু হয় রাতদিন বৃষ্টির দৌড়ঝাঁপ। এ সময় গাছে গাছে সবুজের সমারহে সবুজ পাতার আড়ালে নতুন ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ মোহময় করে তোলে আমাদের চারপাশ। প্রকৃতি গ্রীষ্মের তাপদাহের প্রখরতার পর আবার নতুন করে বর্ষায় রানীর মতো করে সাজতে থাকে। তাই বর্ষাকে প্রকৃতির রানী বলা হয়। রানী তো ফুল পছন্দ করবেই। তবে তার প্রথম পছন্দের ফুল কদম। সম্পূর্ণ গোল বৃত্তাকার এই ফুলটির ঘ্রাণ মুখরিত করে তোলে বর্ষার দিনগুলো। বর্ষা এবং কদম যেন পরস্পরের সম্পূরক। তাই অনেকেই কদমফুলকে বর্ষার প্রতীক হিসেবে দেখে থাকে। বর্ষার আরেকটি ফুল দোপাটি। ফুলগুলো জোড়ায় জোড়ায় ফুটে থাকে। এই ফুলটিও নানা রঙের হয়ে থাকে। কোনটি লাল আবার কোনটি বেগুনি আবার কোনটি বা নীল সাদা। এর মিষ্টি ঘ্রাণ আর স্নিগ্ধতার কথাও সবাই জানে। উমা! বর্ষা আসবে অথচ কামিনী ফুটবে না, তা তো হয় না। বর্ষায় কামিনীর সমাদর কোনো অংশেই কম নেই। ঝোপের মতো গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেয় এই ফুলটি। শ্বেত-শুভ্রময় অপরূপ সৌন্দর্য আর অপূর্ব সুগন্ধের জন্য কামিনী আমাদের সবার পছন্দের ফুল। এই ফুল সুগন্ধ দিয়ে সকাল ও সন্ধ্যায় বাগান একেবারে ভরিয়ে রাখে।
দোলনচাঁপা বর্ষার আরও একটি ফুল। এ দেশের প্রায় প্রত্যেকটি ফুলের বাগানেই এই ফুলটি নিজের অবস্থান শক্ত করে নিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্য আর সুগন্ধের বিনিময়।
শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। আর এই ফুলটিও থই থই বর্ষায় দেখা মেলে। অনেকেই শাপলা ফুলের মালা পরে বর্ষাকে স্বাগত জানায়। নিজের সৌন্দর্য, বীরত্ব ও গৌরবময় শৌরভের জন্যই সে সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।
শ্বেতবসনা বর্ষার ফুলগুলোও কেমন যেন অধিকাংশই বর্ষার মতোই সাদা হয়ে থাকে। সাদা রঙের সুগন্ধ বিলানো ফুলগুলোর মধ্যে সাদা কাঠ গোপলাপ, মালতি, সুগন্ধি জুঁই বা যূথী, বকুল, গন্ধরাজ, শ্বেতচাঁপা, শ্বেতরঙ্গন, সুদর্শন লিলি, রজনিগন্ধা ও মেহেদি ফুল তো আছেই। আবার বর্ষার কিছু ফুলের গন্ধ থাকে না। তাতে কী! তাদের সৌন্দর্য সবারই মন কাড়ে। এর মধ্যে কাঠ টগর, চীনা টগর, শাপলা, কুন্দ ও শ্বেতকাঞ্চন অন্যতম।
বর্ষার আরও একটি পছন্দের ফুল মালতি। বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধি। রং সাদা, বৃতি পাঁচটি- লম্বা ও চোখা। গাছের শাখা-প্রশাখায় থোকায় থোকায় গুচ্ছভাবে ধরে। এই ফুলের আকার অনেকটা জুঁই ফুলের মতো।
আমাদের অতি পরিচিত ও ভালোবাসার আরও একটি ফুল কেয়া। বর্ষা আসবে আর তার সঙ্গে কেয়া আসবে না তা তো হতেই পারে না। কেয়া না ফুটলে তো অভিমানে বর্ষাই আসবে না। কেয়া মানেই বর্ষার ফুল। এর সুগন্ধের জন্য সেই প্রাচীনকাল থেকেই সে সবার সুপরিচিত।
এবার বেলি ফুলের কথা বলি। বেলি ফুল এ দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফুল। এটি প্রায় সবারই পরিচিত ফুল। বেলি ফোটে থোকায় থোকায়। দেখতে গোলাকার সাদা মোতিসদৃশ্য।
মূলত বর্ষা আমাদের সমাদর জানানোর জন্যই নানা জাতের ফুল নিয়ে দরজায় হাজির হয়। অথচ আমরা নানা ব্যস্ততার কারণে সেদিকে দৃষ্টি দিতে সময় পাই না। আসুন, এবার না হয় একটু সময় করে বর্ষার জানানো ফুলেল শুভেচ্ছার দিকে নজর দিই।