বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যা
প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২৪, ০০:০০
খোন্দকার শাহিদুল হক
ষড়ঋতুর এই দেশে আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাসব্যাপী থাকে বর্ষার ভরা যৌবন। সজল মেঘের ভেলায় বর্ষা যেন মেতে ওঠে দুরন্ত খেলায়। ঘন ঘন বৃষ্টির সঙ্গে কখনো বজ্রপাত আবার কখনো বা ঝড়ো হাওয়ার তান্ডব। মেঘেরা যেন ইচ্ছে করেই দলবেঁধে ছুটে আসে প্রকৃতির সঙ্গে খেলা করার জন্য। খাল-বিল, নদী-নালায় পানি উপচে ওঠে। নিমিষেই তলিয়ে যায় মাঠ-ঘাট। বিলে-ঝিলে ফোটে পদ্ম-শাপলা-কলমি এবং ডাঙ্গায় ফুটে কদম, কেয়া, হিজল, বেলি, গন্ধরাজসহ কত নাম না জানা ফুল। এ সময় বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনতে কার না ভালো লাগে!
আজ সকাল থেকেই মেঘ মেঘ ভাব। বিকেল শেষ হতে না হতেই চারদিকে ঘন অন্ধকারে ছেয়ে গেল সব। মনে হলো মেঘেরা পাঠিয়েছে ঘন আঁধারের চিঠি। সেই সঙ্গে বাইরে যেতে মানা। দেখতে দেখতে সব পথঘাট ফাঁকা হয়ে গেল। বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দের ডানায় ভর করে হঠাৎ নেমে এল ঝুম বৃষ্টি। অবিশ্রান্ত ধারায় ছন্দহারা সুরে যেন ঝরেই চলেছে তারা। এ সুর এলোমেলো, তবু কেড়ে নেয় মন। উদাসী দৃষ্টিতে জানালার পাশে বসে দূর গগনে দৃষ্টি মেলে দিয়ে দেখছি বৃষ্টির অপরূপ রূপ। মনের সঙ্গে বৃষ্টির এত নিবিড়তা, এত শখ্যতা তা আর আগে কখনো অনুভব করিনি। বৃষ্টির এই দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্য যে একবার দেখেছে সে তার প্রেমে পাগলপারা না হয়ে আর পারে না।
শহরের মানুষ সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটায়। সে নিজের থেকে এতটুকু ফুসরত পায় না প্রকৃতির দিকে দৃষ্টি দেওয়ার। কিন্তু বৃষ্টি তাকে তার নৃত্য দেখতে কিংবা গান শুনতে বাধ্য করে। শহরের টিনের চাল নেই। তাই সেখানে বৃষ্টির রিনিঝিনি সুরও নেই। তবু আছে অবিরাম ঝরে পড়ার অপ্রকাশিত এক সুর, এক ছন্দ এবং প্রকৃতির ভালোবাসার এক মোহনীয় গন্ধ। তাতে মুগ্ধ তো হতেই হবে।
একটু পরেই মনে হলো ছাদ থেকে যেন কার নূপুরের ছন্দ ভেসে আসছে। তাই পায়ে পায়ে ওঠে গেলাম বাসার ছাদে। না কেউ নেই। অন্ধকার আর বৃষ্টি দু'জনে মিলেমিশে একাকার। মাঝে মাঝে বিদু্যতের ঝলকানি। তাপদাহের প্রচন্ডতায় এই বৃষ্টির শীতলতা যে কতটা উপভোগ্য তা বৃষ্টিতে না ভিজলে বুঝানো যাবে না। আমিও ভিজতে লাগলাম। আহ! সে কী এক প্রশান্তি। এবার কেন যেন মনে হলো কেউ একজন দুই বাহু দিয়ে পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। কে সে? হয়তো সেই হবে। হয়তো আমার আগেই বৃষ্টিমুখর এই সন্ধ্যায় ছাদে ভিজতে এসেছিল। আমাকে ভিজতে থেকে নিজেকে পারেনি আর আটকিয়ে রাখতে। আমি নিশ্চল পাথরের মতো দু'বাহু সামনে প্রসারিত করে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম। মনে হলো, হাজার হাজার কবিতার পঙ্ক্তি প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটার মতোই আমার হৃদয়ে ফুটেই চলেছে অবিরাম। আর আমি তার নীরব পাঠকমাত্র।