মাদকমুক্ত হতে জনসচেতনতা জরুরি

প্রকাশ | ২২ জুন ২০২৪, ০০:০০

সাখাওয়াত হোসেন
প্রতিবছর ২৬ জুন পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। কিন্তু এই দিবসটি শুধুমাত্র পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। মাদকসেবন বা মাদকাসক্তি নামক এই ছোট অথচ ভয়ংকর শব্দটি বর্তমান বিশ্বে বিশেষ করে আমাদের দেশে বিশেষ করে যুবসমাজের জন্য আরও ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইদানীং শিশু-কিশোরের একটা অংশ এই ভয়ংকর নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। আদিকাল থেকেই মানুষ এই নেশার জালে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। মাদকাসক্ত বলতে আমরা বিভিন্ন নেশার দ্রব্য গ্রহণ করে নেশা করার প্রবণতাকেই বুঝি। এই আসক্তি হতে পারে পানীয়, ধূমপান, ঘ্রান নেওয়া, সেবন করা বা ইনজেকশনের মাধ্যমে। নেশার ফলে বাস্তব চৈতন্যকে অবলুপ্ত করে তাকে নিয়ে যায় এক স্বতন্ত্র ভাবনার জগতে এসব বিশ্বাস থেকেই মাদকাসক্তির বিকাশ, যেটা সম্পূর্ণ ভুল। মদ, গাঁজা, ভাং, আফিম, মারিজুয়ানা, চরস, প্যাথেড্রিন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হিরোইন ইত্যাদি। তবে গবেষণা বলছে, সব মাদকেরই শুরু হয় ধূমপান দিয়ে। জীবনের হতাশা, ব্যর্থতা, বিষাদ, কৌতুহল- এসব থেকেই নেশা গ্রহণের সূত্রপাত ঘটে এবং জীবনের অস্থিরতা, নৈতিক মূল্যবোধের অভাব, সঙ্গদোষ, অসৎ নেতৃত্ব, প্রেমে ব্যর্থ, ব্যয়ের চেয়ে আয় কমের হতাশা, কালো টাকার উত্তাপ এবং ব্যয়ের অপরিচ্ছন্ন পন্থা যুবসমাজকে মাদক নামক এই বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকাসক্তির প্রভাবে বহুলোকের বিশেষ করে যুবসমাজের ধ্বংস নেমে আসছে, শুরু হয়েছে এক ভয়াবহ অবক্ষয়ের। এই নেশার টাকা যোগাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি বেড়ে যাচ্ছে। এই নেশা দেহের অক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মাদকাসক্তির ফলে মানসিক ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন চেতনা নাশক মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ফলে মানসিক আচ্ছন্নতা দেহের মাংসপেশির কম্পন ও মৃতু্য পর্যন্ত ঘটছে। ফলে মাদকাসক্তির পরিণাম হিসেবে ব্যক্তি জীবনে আসে ব্যর্থতা এবং জাতীয় জীবনে আসে সর্বনাশ। এ দেশে মাদক মূলত আসে মাদকের স্বর্গ নামে খ্যাত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল (লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড), গোল্ডেন ক্রিসেন্ট (আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান)। গোল্ডেন ওয়েজ (ভারত, কাতার, দুবাই, চায়না) হয়ে। মাদকের ক্ষতিকর ব্যক্তিগত দিক ছাড়াও এর আরও একটি ব্যবসায়িক দিক আছে, যা বিশাল অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত। মাদকাসক্তির ভয়াবহ পরিণাম থেকে বর্তমান সময় ও মানুষকে বাঁচাতে হলে এই ভয়াল ব্যাধির বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। পারিবারিক বা নৈতিক শিক্ষা, সামাজিক ও ধর্মীয় শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। খেলাধুলা, সংস্কৃতিবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে কর্মসংস্থান করলে তারা কর্মময় জীবনযাপন করবে। শিক্ষার যথার্থ প্রসার ঘটলে, মানুষের নৈতিক জ্ঞান অর্জিত হলে নেশাগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা কমবে। সবচেয়ে বড় কথা, মাদকাসক্তদের যেমন নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা জরুরি, এর চেয়ে অনেক বেশি জরুরি মাদক ব্যবসায়ীদের আইনানুকভাবে শাস্তি দেওয়া। বাংলাদেশে কোনো মাদক ব্যবসায়ী বা চোরাকারবারির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে- এমন তথ্য আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। মাদকের ব্যবহার এখন জাতীয় সমস্যারুপেই বিবেচিত হচ্ছে। এই অপরাধ জগৎ থেকে বের হতে হলে রাজনীতিবিদ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সবাইকে সৎ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে। সবাই মিলে সংগঠিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। নইলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বজার রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। যে কোনো মূল্যে আমাদের শিশু-কিশোরের হাতে বই আর খেলার সামগ্রী, যুবকের মন ও মননে জ্ঞান সাধনা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে হবে। পারিবারিকভাবে প্রতিটি পরিবার যদি সচেতন হয়, তবে মাদকের এই ভয়াবহ অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব।