জাতীয় শিশু দিবসের চেতনা
প্রকাশ | ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
খোন্দকার শাহিদুল হক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন মন্ত্রিসভা ১৭ মার্চকে 'জাতীয় শিশু দিবস' হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ থেকে দিনটি সরকারিভাবে 'জাতীয় শিশু দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে আমাদের জানতে হলে প্রথমেই হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। জানতে হবে কেন বাঙালি জাতিসত্তার কাছে এই মহান ব্যক্তির জন্ম দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। জানতে হবে তাকে জানা ও বোঝার মধ্যে জাতির জন্য কী কী কল্যাণ নিহিত আছে। জানতে হবে তিনি কীভাবে পরাধীন বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য নিজের জীবন-যৌবনকে বিলিয়ে দিয়ে হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মধ্যে নিজের অবস্থান সবার ঊর্ধ্বে দখল করে নিয়েছেন। শুধু জানলে হবে না, এ জাতির ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের জন্য শিশুদেরও তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। একটি জাতির জন্য যদি অনুস্মরণীয় ও অনুকরণীয় কোনো জাতীয় ব্যক্তিত্ব না থাকে তাহলে সে জাতি সম্মুখে অগ্রসর হতে পারে না। তাই আমাদের সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার জন্য আলোকবর্তিকা হিসেবেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশে মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও চেতনাকেই অমূল্য সম্পদ হিসেবে সবার চেতনায় সংরক্ষণ করতে হবে। আর এই সংরক্ষণাগারের মূল ফটক হবে শিশুদের সবুজ চেতনা। এই চেতনা সমুন্নত থাকলে এই জাতি টিকে থাকবে। এই চেতনা দৃঢ় থাকলে জাতি কখনো পথ হারাবে না। এই চেতনা উজ্জ্বল থাকলে জাতি কখনও অন্ধকারে পতিত হবে না। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবসকে শিশু দিবস হিসেবে পালনের মধ্য দিয়ে তার সমগ্র কর্মকালকে শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার সবুজ চত্বরে জাতিসত্তার চারা হিসেবে রোপণ করার ব্যস্ত আয়োজন আমাদের কর্তব্য।
বঙ্গবন্ধু নিজেও শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন। শিশুদের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি হয়েও শিশু-কিশোরদের ভোলেননি। তিনি তার জন্মতারিখে শিশুদের সাথে কাটাতে পছন্দ করতেন। ঐদিন শিশুরা দল বেঁধে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে যেত। আর তিনি দু'হাত বাড়িয়ে শিশুদের বুকে জড়িয়ে ধরতেন। তিনি বাংলাদেশে শিশু-কিশোররা যাতে হেসেখেলে মুক্তচিন্তায় মুক্তমনে বেড়ে ওঠার সুযোগ ও পরিবেশ পায় সেকথা ভাবতেন এবং তদানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেন। এই চেতনার ফলশ্রম্নতিতে দৃশ্যমান হয়েছে মা ও শিশু কল্যাণ অধিদপ্তর এবং শিশু একাডেমি। সৃষ্টি হয়েছে শিশুদের শিক্ষা ও সুরক্ষার আইন। সুতরাং এই দিবসকে সামনে নিয়ে শিশুদের জানাতে হবে, গোপালগঞ্জের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুনিবিড় ছায়াঘন ছোট্ট একটি গ্রাম টুঙ্গীপাড়ায় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ খোকা নামক একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে কীভাবে একদিন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু হিসেবে তথা জাতির জনক এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। শিশুদের বেড়ে ওঠার অনেক অবলম্বন যার জীবনের মধ্যে সদা উজ্জ্বল ভাস্কর হয়ে আছে তাকে আজ সঠিকভাবে শিশুদের মধ্যে অবশ্যই উপস্থাপন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র রাসেল ছিল তার নয়নমণি ও বাংলাদেশের সব শিশুদের প্রতীক। তিনি রাসেলকে এ দেশের সব শিশুর মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। আসলে বঙ্গবন্ধু ছিলেন শিশুদের মতোই সহজ সরল ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তিনি শিশুদের সব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পছন্দ করতেন। তিনি মনটাকে হালকা করার প্রয়োজন বোধ করলেই শিশুদের সাথে মিশতেন। তিনি বয়সের ব্যবধান ভুলে গিয়ে শিশুদের সাথে খেলাধুলায় একান্ত আপনজন হয়ে উঠতেন। তিনি প্রত্যেকটি শিশুর মধ্যেই তার ছোট্ট শিশু রাসেলের ছায়া দেখতেন। প্রতিটি শিশুই তার পিতা-মাতার কাছে বড় আদরের। এখানে জাত-পাত ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই। তাই সেই চেতনায় আমাদের দেশটাকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে ভালো করে গড়তে হলে এই শিশুদেরই সঠিকভাবে গড়তে হবে। তাদের কোমল উষ্ণ রক্তে বঙ্গবন্ধুর চেতনার রঙে রঞ্জিত দেশপ্রেমের বীজ বপন করতে হবে। আর সেই লক্ষ্যে স্নেহময় বাবা এবং সবার নয়নমণি ছোট ভাই রাসেলকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি শিশুর মধ্যে শেখ রাসেলের ছায়া দেখে তাদের জন্য অনন্য এক বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ার জন্য আত্মোৎসর্গ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এক্ষেত্রে আমাদেরও এগিয়ে আসতে হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য তার সব কর্মকান্ডের সহযোগী হিসেবে।