একুশ এলো
কাকলী আফরোজ
একুশ এলে কাঁদো কেন মা?
এমনি করে করুণ সুরে!
ভাইয়া নাকি এই একুশে
হারিয়ে গেছে অনেক দূরে?
তোমার ভাষা, আমার ভাষা,
সবার প্রাণের ভাষা দিতে,
শুনেছি ভাইয়া যুবক বুকটি-
সেদিন দিয়েছিল তা পেতে।
তবে কেন কাঁদো মা তুমি?
মলিন করো কেন মা মুখ!
তোমার ছেলে ভাষা দিয়েছে
বাংলা ভাষা প্রাণ পেয়েছে
এইতো বড় সুখ।
এই ভাষাতে কথা বলি
মনের দুঃখ ব্যথা ভুলি
মা, তুমি আর কেঁদো না।
দেশের কথা ভেবে ভুলো
জমানো সেই সব বেদনা।
বাংলা আমার প্রাণের ভাষা
গোলাপ আমিন
বাংলা আমার প্রাণের ভাষা
গর্ব আমার তাই,
বাংলা ভাষার জন্য বহুত
ত্যাগের সীমা নাই।
ভাষার জন্য জীবন দিয়ে
শহীদ হলো যারা,
বিশ্ব জুড়ে আজকে দেখি
স্মরণীয় তারা।
তাদের ত্যাগ ও মর্যাদায়
খুশি বাংলাভাষী,
প্রাণের গভীর থেকে তাই
তাদের ভালোবাসি।
বাংলা ভাষা লিখতে-পড়তে
শুদ্ধতা চাই আরও,
ভাষার প্রতি ভালোবাসা
তবেই হবে গাঢ়।
একুশ, উনিশ শ' বাহান্ন
খলিফা আশরাফ
ধুলোর বিক্ষোভ উড়েছিল পথে
মগজে গেঁথেছিল বিক্ষুব্ধ তরঙ্গ উত্তাল
দুর্দান্ত উত্তেজিত পা এবং উত্তোলিত হাত
মেঘের গর্জন ছিল কণ্ঠে সবার
বেতস লতাও অকস্মাৎ ঋজু সটান
অকুতোভয় শাল বৃক্ষের মতো
সেদিন পাখিরাও প্রণয় ভুলে
উত্তাল মিছিলে মিশেছিল
দুর্বার ডগায় ছিলো প্রখর রৌদ্র তাপ
বাহান্নের একুশে ফেব্রম্নয়ারি,
পদ্মা মেঘনা যমুনা গভীরে উত্তাল উৎরোল
ছিল কিছু বিনাশী ঘূর্ণাবর্তের হানা
পাড় ভাঙার নির্ভীক পয়গাম
অটুট ঐক্য ছিল জলে স্থলে অন্তরীক্ষে
বৃক্ষের খাঁজে খাঁজে লুকানো ক্রোধ
অগ্নিমশাল ছিলো প্রকৃতির চোখে
ভাষা বঞ্চিত মানুষের বিক্ষুব্ধ বুকের ভেতর
জমা ছিল অজস্ত্র বারুদের স্তূপ,
জনতার রুদ্র মিছিলের দুরন্ত ঝঞ্ঝায়
গিয়েছিল উড়ে পরভৃৎ
শোষক-শিরস্তান
অবনত হয়েছিল অবশেষে,
বুকের তপ্ত রক্তে বাঙালি লিখেছিল ইতিহাস
একুশে ফেব্রম্নয়ারি ঊনিশ শ' বাহান্নে
মায়ের ভাষা বাংলা বসেছিল রাজাসনে
অভিষিক্ত আজ অতুল ঐশ্বর্য শ্রদ্ধায়
পৃথিবীর বরেণ্য দরবারে।