হেমন্তকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় যত্ন
হেমন্তকালের নির্জনতা এবং শীতের আগমনের প্রভাবে অনেকের মধ্যে বিষণ্নতা এবং মানসিক স্থবিরতা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত হাসুন, যোগব্যায়াম এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন।
প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল (চিকিৎসক, কবি, ছড়াকার ও কলামিস্ট)
বাংলাদেশে ঋতুচক্রের পরিবর্তন প্রকৃতির এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। হেমন্তকাল, শরৎকালের পরবর্তী ঋতু হিসেবে একদিকে শীতের আগমন বার্তা দেয়; অন্যদিকে, গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা থেকে শীতল পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার সময় ও সুযোগ তৈরি করে দেয়। তবে ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি গুরুতর বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ঠান্ডা, কুয়াশা, শুষ্ক বাতাস এবং তাপমাত্রার ওঠানামা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। আজকে আমরা হেমন্তকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় বিষয়গুলো আলোচনা করব।
শারীরিক প্রভাব
হেমন্তকালে তাপমাত্রার হঠাৎ কমে যাওয়া শরীরে বিভিন্ন প্রভাব ফেলে। ঠান্ডা এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, শ্বাসকষ্ট বাড়ে এবং বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগ যেমন সর্দি, কাশি, জ্বর এবং শ্বাসনালির সংক্রমণ হয়। শিশু, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তারা এ সময় ঝুঁকিতে থাকেন।
ঠান্ডা ও কুয়াশা থেকে সুরক্ষা
ঠান্ডা এবং কুয়াশার কারণে হেমন্তকাল সাধারণত শীতের আগাম ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সময় ঠান্ডা বাতাস শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে শ্বাসযন্ত্রকে দুর্বল করে তুলে। ফলে সর্দি, কাশি এমনকি ব্রঙ্কাইটিস এবং নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই, এ সময় গরম পোশাক পরিধান করা উচিত। বিশেষ করে, সকালে ও রাতে যখন ঠান্ডার প্রকোপ বেশি থাকে, তখন মাথা, কান এবং গলা ঢেকে রাখতে হবে।
পর্যাপ্ত তরল খাবার খাবেন
শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শরীরের পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। যদিও শীতল আবহাওয়ায় তৃষ্ণা কমে আসে, তবুও শরীরের প্রয়োজনীয় পানির ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার। পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রতিদিন অন্তত ৮ গস্নাস পানি পান করতে হবে।
সুষম খাদ্যাভ্যাস
এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। তাজা শাকসবজি, ফলমূল এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ত্বকের যত্ন নিন
শুষ্ক বাতাসের প্রভাবে ত্বক রুক্ষ ও ফাটতে শুরু করে। তাই ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে তা ফেটে যায় এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হতে পারে। বিশেষ করে ঠোঁট এবং হাতের যত্ন নেওয়া উচিত, কারণ এই স্থানগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নিন
শরীরের সুরক্ষার অন্যতম প্রাকৃতিক উপায় হলো পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা উচিত। ঘুম শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন
হেমন্তকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই অলস সময় কাটাই। কিন্তু এই সময় শরীরকে সক্রিয় রাখা প্রয়োজন। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে শীতের সকালে ব্যায়াম করতে হলে, ব্যায়াম শুরুর আগে অবশ্যই কিছু উষ্ণ পোশাক পরিধান করে নিতে হবে।
সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকুন
হেমন্তকালে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। সর্দি-কাশি বা ফ্লু-এর সংক্রমণ এড়াতে হাত ধোয়ার অভ্যাস অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়াও, জনবহুল স্থানে মাস্ক ব্যবহার করা এবং ঠান্ডা পানির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। যদি কোনো সংক্রামক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, দ্রম্নত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখা
শীতের আগমনের ফলে ঘরের ভেতরে ধুলোবালি জমতে শুরু করে- যা এলার্জি এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। ঘর পরিষ্কার রাখা এবং ঘরের ভেতরের বাতাস পরিশুদ্ধ রাখার জন্য নিয়মিত দরজা জানালা খোলা রাখুন।
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা
ঋতু পরিবর্তনের সময় শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও নজর দেওয়া জরুরি। হেমন্তকালের নির্জনতা এবং শীতের আগমনের প্রভাবে অনেকের মধ্যে বিষণ্নতা এবং মানসিক স্থবিরতা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত হাসুন, যোগব্যায়াম এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন।