কিটোজেনিক ডায়েট
কিটোজেনিক ডায়েট হলো সুপার লো-কার্ব ডায়েট। কিটোজেনিক হলো এমন একটি কম কার্ববিশিষ্ট ডায়েট যেখানে কার্বোহাইড্রেট উপাদান থেকে কম এবং প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় উপাদান থেকে শরীরে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করা হয়। চিনি, পেস্ট্রি, মিষ্টি এবং সাদা রুটির মতো সহজে হজম হয় এ জাতীয় কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ একেবারে কমিয়ে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে কিটো ডায়েট বেশ পরিচিত একটি নাম। এ ডায়েট গ্রহণে ক্ষুধা কমে যায়।
\হ
কিটো ডায়েটের বিভিন্ন ধরনসমূহ
১. স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েট: এতে কার্ব ৫ শতাংশ, প্রোটিন ২৫ শতাংশ আর ফ্যাট ৭৫ শতাংশ থাকে।
২. টার্গেটেড কিটোজেনিক ডায়েট: একটি স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েটের মতোই এটিকে অনুসরণ করতে হয়। তবে একজন মানুষের শারীরিক পরিশ্রম কেমন হয় তার ধরন ও পরিমাণ অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় শর্করা যোগ করা হয়।
৩. সাইক্লিকাল কিটোজেনিক ডায়েট: এই ডায়েটে সপ্তাহে খাবারে পাঁচ দিন শর্করা বাদ দিতে হয় এবং বাকি দুদিন বেশি শর্করা যোগ করতে হয়।
৪. হাই প্রোটিন কিটো ডায়েট: এ পদ্ধতিতে প্রোটিন ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৫ শতাংশ হয়ে যায়। এতে ফ্যাট ৬০ শতাংশ, প্রোটিন ৩৫ শতাংশ আর শর্করা ৫ শতাংশ। বডি বিল্ডার বা এথলেটরা সাধারণত এটা করে থাকে।
কাদের জন্য ব্যবহার করা হয়
ওজন হ্রাস
ওজন কমাতে কিটো ডায়েট কতটা কার্যকরী তা নিয়ে মতবিভেদ রয়েছে। একটি কেটোজেনিক ডায়েট সাধারণত প্রথম ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত বেশি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
হৃদরোগ
ডায়েট গ্রহণের ফলে খাবারের ইনসুলিনের নিম্ন স্তর শরীরকে আরও কোলেস্টেরল তৈরি করতে বাধা দিতে পারে। এর মানে আপনার উচ্চ রক্তচাপ, শক্ত ধমনি, হার্ট ফেইলিওর এবং অন্যান্য হার্টের ক্ষতির সম্ভাবনা কম। এটা অবশ্য প্রমাণিত নয় এবং এই প্রভাবগুলোও ক্ষণস্থায়ী।
ব্রণ
কার্বোহাইড্রেটগুলো ত্বকের অবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্রণ হ্রাস করা সাহায্য করতে পারে এবং এ ডায়েট ব্রণ ব্রেকআউট বন্ধ করতেও সাহায্য করতে পারে।
ডায়াবেটিস
কম-কার্ব ডায়েট রক্তে শর্করাকে কম রাখতে সাহায্য করে কিন্তু যখন শরীর তার শক্তির জন্য চর্বিকে পোড়ায়, তখন এটি কিটোন নামক যৌগ তৈরি করে। কারো যদি ডায়াবেটিস থাকে, বিশেষ করে টাইপ ১, তাহলে রক্তে অনেক বেশি কিটোন অসুস্থ করে তুলতে পারে।
মৃগী রোগ
কিটোজেনিক ডায়েট ১৯২০ সাল থেকে এই অবস্থার কারণে সৃষ্ট খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে। কিন্তু সঠিকভাবে তা নির্ধারণ করতে বা জানতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যান্য স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি
এ ডায়েট মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডকে প্রভাবিত করে, সেইসঙ্গে স্নায়ুগুলোকে একত্রে সংযুক্ত করে। মৃগীরোগ, আলঝেইমার রোগ, পারকিনসন রোগ এবং ঘুমের ব্যাধিসহ কিটোজেনিক ডায়েট দ্বারা উপকৃত হতে পারে। এটি শরীরে যে কিটোন তৈরি হয় যখন তা শক্তির জন্য চর্বি ভেঙে দেয় এবং তা আপনার মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
কিটো ডায়েটে যেসব সমস্যা হতে পারে
পানিশূন্যতা:
কার্ব কম হওয়ার কারণে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। প্রতি ১ গ্রাম কার্ব ৩ গ্রাম পানি হোল্ড করে। তাই শরীরকে হাইড্রেটেড বা স্বাভাবিক রাখতে বেশি পানি খেতে হবে। দিনে কমপক্ষে ৩-৪ লিটার পানিপান করতে হবে। পানি আর মিনারেলের ঘাটতি কমাতে দিনে ১.৫-২ চা চামচ লবণ সারাদিনের খাবারে খেতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা
কার্ব কম খাওয়ার কারণে শরীরে ফাইবারও কমে যায়। আর ফাইবার কম হলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হবেই।
একাধিক শারীরিক সমস্যা
সঠিক নিয়ম অনুযায়ী এই ডায়েট পস্ন্যান অনুসরণ না করলে একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত মাথা যন্ত্রণা, ক্লান্তি, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, ঘুম কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা এবং শরীরিক ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বেরোনো, মাসল ব্যথা, নানা ধরনের পেটের রোগ এবং কিডনিতে স্টোন হওয়ার মতো রোগও হতে পারে।
হজমের সমস্যা
কিটো ডায়েটের সাধারণ সমস্যার মধ্যে হজমের গন্ডগোল দেখা দিতে পারে- ডায়রিয়া, বমিভাব বা গ্যাস বা পেটফাঁপা। এর মধ্যে ডায়রিয়া হওয়ার মাত্রা বেশি হয় কারণ বেশি মাত্রায় চর্বিজাতীয় খাবার দেওয়া হয় এই খাদ্যাভ্যাসে।
দেহে ভিটামিন ও খনিজের স্বল্পতা
বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি খাওয়ার পরিমাণ কিটো পদ্ধতিতে কমিয়ে দেওয়া হয়। বেশি মাত্রায় কার্ব খাওয়া পরিমাণ কমানোর ফলে শরীরে নানান পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। যেমন- ক্যালসিয়াম, আঁশ, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও বিভিন্ন রকম ভিটামিন। বিশেষ করে এ ডায়েটে ফোলেট ও থিয়ামিনের পাশাপাশি ভিটামিন এ, বি-সিক্স, বি-টুয়েল্ভ, সি, ই এবং কে'র অভাব দেখা দেয়। ফলে হাড়, বিপাক প্রক্রিয়া, মাড়ি, লোহিত রক্ত কণিকা কমে যাওয়া সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ে।
এই ডায়েটে যেসব খাবার খাওয়া যায় না
১. চিনি বা মিষ্টিজাতীয় কোনো কিছু একদম বাদ। কোক, ফলের জুস, কেক, আইসক্রিম, চকোলেট, স্মুদি, যে কোনো ধরনের মিষ্টি।
২. আটার তৈরি খাবার, ভাত, পাস্তা, নুডলস, ওটস, কর্নফ্লেক্স খাওয়া যায় না।
৩. ফলে প্রচুর পরিমাণ শর্করা থাকায় সব ধরনের ফল নিষেধ। সাধারণত অন্যান্য ডায়েটে ফল খাওয়া গেলেও কিটো ডায়েটে সেটা নেই। কিটো ডায়েটে মাত্র ২০ গ্রাম শর্করা গ্রহণ করা যায় যেখানে একটি বড় আপেলেই ২৫ গ্রাম শর্করা থাকে।
৪. সব ধরনের রোগী ডাল নিষেধ, ডালে প্রোটিনের পাশাপাশি ভালো পরিমাণে কার্বোহাইড্রেটও থাকে।
৫. আলু, মূলা, গাজর, কচু এসব বাদ দিতে হয়।
৬. যে কোনো ধরনের প্রসেসড ফুড একেবারে বাদ দিতে হয়।
এই ডায়েটে কি কি খাওয়া যায়
গরু, মুরগি, সব ধরনের মাছ, ডিম, বাটার, পনির, দই, ঘি, বাদাম, হেলদি অয়েল যেমন- অলিভ ওয়েল, কোকনাট ওয়েল, সূর্যমুখী অয়েল, যে কোনো লাল-সবুজ সবজি, পালং, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, মোটামুটি সব ধরনের মসলা, ফলের মধ্যে জলপাই, অ্যাভোকাডো, স্ট্রবেরি, লেবু এসব খাওয়া যায়।
নাজিয়া আফরিন
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ
নারী মৈত্রী।