বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

অতিরিক্ত আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া ঠিক না

নাজিয়া আফরিন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ নারী মৈত্রী
  ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
.

অতিরিক্ত আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ বয়স ও পরিশ্রম ভেদে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যতটুকু ফাইবার থাকা দরকার তার চেয়ে অতিরিক্ত গ্রহণ করলে নানারকম বিপত্তি হয়। দৈনিক যতটুকু ফাইবার জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন বয়সভেদে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যতটুকু ফাইবার গ্রহণ করা প্রয়োজন তা নিচে ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো- বয়স দৈনিক যতটুকু ফাইবার খাওয়া উচিত ২-৫ বছর ১৫ গ্রাম ৫-১১ বছর ২০ গ্রাম ১১-১৬ বছর ২৫ গ্রাম ১৭ বছর ও তদূর্ধ্ব ৩৮ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করলে অনেকের বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, উচ্চ মাত্রায় জ্বর, গ্যাস বা মলত্যাগ করতে অক্ষমতা অনুভব হতে পারে। প্রস্তাবিত দৈনিক ফাইবার গ্রহণ মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ২৫ গ্রাম এবং পুরুষদের জন্য প্রতিদিন ৩৮ গ্রাম। তবে এই পরিমাণের চেয়ে বেশি ফাইবার গ্রহণ করলে নিম্নোক্তসমস্যাগুলো হতে পারে :পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, আমাশয়, কোষ্ঠকাঠিন্য, অস্থায়ীভাবে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, অন্ত্রের জটিলতা, রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস। ফাইবার জাতীয় খাবারের তালিকা আঁশযুক্ত খাবার খাদ্যশস্য: লাল চাল বা ঢেঁকিছাঁটা চাল সাধারণ চালের তুলনায় অধিক আঁশসমৃদ্ধ। পূর্ণশস্য গমের আটায় বেশি ফাইবার থাকে। সাধারণ ময়দার বদলে লাল আটার তৈরি রুটি, পাউরুটি ও চাপাতি অধিক আঁশসমৃদ্ধ। ওটস ও বার্লি বা যব ফাইবারসমৃদ্ধ সিরিয়াল জাতীয় খাবার। ফল ও শাকসবজি: সব রকম ফল ও শাকসবজি আঁশের খুব গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে, কাঁচকলা, মাটির নিচের আলু এগুলো আঁশের মধ্যে পড়বে না। এগুলো ভাত-রুটির মতো কার্বোহাইড্রেট বা শ্বেতসারজাতীয় খাবারের উদাহরণ। ডাল ও বিচি জাতীয়: মসুর, মুগ, খেসারি ও অন্যান্য ডালে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার থাকে। শিমের বিচি, ছোলা, মটর, কিডনি বিনসহ অন্যান্য বিন জাতীয় খাবারও আঁশের ভালো উৎস। বাদাম: বিভিন্ন রকম বাদামে ফাইবার থাকে। অতিরিক্ত আঁশযুক্ত খাদ্য গ্রহণের ক্ষতিকর প্রভাব ওজন কমাতে, রক্তে শর্করা ও চর্বি কমাতে এবং বৃহদান্ত্রের ক্যানসারসহ নানা রোগ প্রতিরোধে অনেক সময় চিকিৎসকরা বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু এতে অনেক সময় বিপত্তি দেখা দেয়। পেটে প্রচুর গ্যাস হয়, ঢেঁকুর ওঠে এবং বিব্রত হতে হয়। আঁশ বা ফাইবার হলো খাবারের সেই অংশ, যাকে হজম করার জন্য মানুষের দেহে কোনো উৎসেচক বা এনজাইম নেই। তার মানে এই আঁশ হজম না হয়ে সরাসরি পেট থেকে বেরিয়ে যায় এবং মলের পরিমাণ বাড়াতে ও কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু মানুষের অন্ত্রে রয়েছে অনেক রকম ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু- যার কিছুটা এই আঁশ হজম করে ফেলে এবং হাইড্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস প্রচুর পরিমাণে তৈরি করে। এ কারণেই আঁশ খেলে গ্যাস হয়। এজন্য কাঁচা ফলমূল, শাকসবজি বা গোটা শস্য খাবারে তেমন অভ্যাস না থাকে, তবে ধীরে ধীরে শুরু করতে হবে। একসঙ্গে অনেক আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিমাণ বাড়াতে হবে। যে আঁশ বা ফাইবার জাতীয় খাবারে বেশি গ্যাস হয়, সেটা বাদ দিতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ও নরম করার জন্য প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। সবশেষে বলতে চাই, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। পরিমিত পরিমাণে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সুষম খাবার রাখাটা আবশ্যক। নাজিয়া আফরিন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ নারী মৈত্রী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে