শিশুর চঞ্চলতা ও মানসিক বিকাশ

শিশুর চঞ্চলতা অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে হলেও এটি শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চঞ্চল শিশুরা সাধারণত বেশি কৌতূহলী হয়, নতুন কিছু শেখার প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো শিশুকে ভবিষ্যতে একজন সফল ও সৃজনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল (চিকিৎসক, কবি, ছড়াকার ও কলামিস্ট)
শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে চঞ্চলতা স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা স্বভাবতই চঞ্চল এবং এই চঞ্চলতা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এটি কোনো সমস্যা নয় বরং শিশুর প্রাকৃতিক বৃদ্ধি এবং সঠিক মানসিক বিকাশের প্রতিফলন। তবে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চঞ্চলতা বা অস্থিরতা অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। শিশুর চঞ্চলতা স্বাভাবিক প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে, চঞ্চলতা একটি স্বাভাবিক আচরণ যা শিশুর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের অংশ। অধিকাংশ শিশুদের মধ্যেই চঞ্চলতা দেখা যায় এবং এটি তাদের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক গঠন ও বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত। শিশুরা যখন তাদের শরীর ও মনকে ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়, তখন তারা নিজেদের চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে। চঞ্চল শিশুরা সাধারণত কৌতূহলী হয় এবং তারা সর্বদাই নতুন কিছু আবিষ্কার করার চেষ্টা করে। তারা এক জায়গায় স্থির থাকে না। বিভিন্ন পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং আশপাশের মানুষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা যখন শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকে তখন তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ দ্রম্নত হয়। শিশুদের কল্পনাশক্তি এবং সৃজনশীলতার বিকাশেও চঞ্চলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানসিক বিকাশ ও চঞ্চলতার সম্পর্ক শিশুর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে চঞ্চলতা সর্বদাই ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হয়। চঞ্চল শিশুরা নতুন পরিস্থিতি বা সমস্যা মোকাবিলা করতে বেশি সক্ষম হয়। তারা মানসিকভাবে সক্রিয় থাকে এবং নতুন অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে উন্মুখ থাকে। এই অভিজ্ঞতাগুলো শিশুর মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশে সহায়ক হয়। শিশু যখন বিভিন্ন ধরনের কাজের মধ্যে নিজেদের সক্রিয় রাখে, তখন শারীরিক গতিশীলতা, যেমন দৌড়ানো, লাফানো বা খেলাধুলা করার সময় শিশু তার সমন্বয় ক্ষমতা, মনোযোগ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। চঞ্চলতা শিশুকে নতুন সমস্যা সমাধানের জন্য চিন্তাভাবনা করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো খেলনা গড়ে তোলার সময় শিশুরা তাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করে- যা তাদের সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। চঞ্চল শিশু সাধারণত দ্রম্নত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে এবং তারা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়। অতিরিক্ত চঞ্চলতা যদিও চঞ্চলতা স্বাভাবিক এবং ইতিবাচক, তবে অতিরিক্ত চঞ্চলতা কিছু ক্ষেত্রে মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে। অউঐউ (অঃঃবহঃরড়হ উবভরপরঃ ঐুঢ়বৎধপঃরারঃু উরংড়ৎফবৎ) বা মনোযোগ ঘাটতি ও অতি চঞ্চলতা হলো এমন একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে শিশুরা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি অস্থির ও চঞ্চল হয়ে থাকে এবং মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। এই ধরনের শিশুরা একটানা কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারে না, সহজেই বিভ্রান্ত হয় এবং অনেক সময় অন্যদের তুলনায় বেশি চঞ্চল আচরণ করে। চঞ্চলতা সামলানোর কৌশল শিশুর চঞ্চলতা নিয়ন্ত্রণের জন্য অভিভাবকরা কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। প্রথমত, শিশুর দৈনন্দিন রুটিনে ডিসিপিস্নন নিয়ে আসুন। নিয়মিত খেলাধুলা, পড়াশোনা এবং বিশ্রামের সময় ঠিক করে দিলে শিশুরা নিজেদের মানিয়ে নিতে শিখবে। শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ব্যায়াম বা খেলাধুলা শিশুদের শরীরের শক্তি খরচ করতে সাহায্য করে, ফলে তাদের চঞ্চলতা কিছুটা কমে। দ্বিতীয়ত, শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশের জন্য সঠিক পুষ্টি ও ঘুম অপরিহার্য। অনেক সময় অপুষ্টির কারণে শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত চঞ্চলতা দেখা যায়। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয়ত, শিশুদের সঙ্গে মনোযোগী হয়ে কথা বলুন এবং তাদের সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করুন। অনেক সময় শিশুরা তাদের চঞ্চলতা প্রকাশ করে ভিতরের চাপা মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। তাই তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং তাদের অনুভূতিগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন। শিশুর চঞ্চলতা অনেক সময় নেতিবাচক বলে মনে হলেও এটি শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চঞ্চল শিশুরা সাধারণত বেশি কৌতূহলী হয়, নতুন কিছু শেখার প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো শিশুকে ভবিষ্যতে একজন সফল ও সৃজনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। তাদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য এই কৌতূহল এবং চঞ্চলতা জরুরি। চঞ্চলতা শিশুর সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। যখন শিশুরা একসঙ্গে খেলাধুলা করে, তখন তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শিখে। এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তারা সহযোগিতা, সহানুভূতি এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করে।