কলা এমন একটি ফল, যেটি সারাবছরই পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফল নিয়মিত খেলে সাধারণ রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে সহায়তা করে। কলায় রয়েছে প্রচুর শর্করা, ভিটামিন (এ, বি ও সি), ক্যালসিয়াম, আয়রন বা লোহা ও পর্যাপ্ত খাদ্যশক্তি আছে। অন্যান্য ফলের তুলনায় কলা সহজলভ্য। দামেও সস্তা। তাই যে কোনো পেশার মানুষ সহজে এই ফলটি খেতে পারেন। উত্পাদন, স্বাদ ও সুগন্ধের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়ায় কলাকে অনেকে ফলের রানি বলেন। তবে এ ফল কোন সময় খেলে উপকার হয় তা নিয়ে অনেক মত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকালে কলা খেলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি হয়। তবে খালি পেটে কলা খাওয়া ঠিক নয়। সকালে কলা খেলে আরো যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়-
সকালের নাস্তায় কলা
সকালের নাস্তায় ডিম, টোস্ট কিংবা কর্নফ্লেক্সের সঙ্গে অনেকেই কলা খান। এতে যেমন পেট ভরা থাকে তেমন পুষ্টিও পাওয়া যায়। যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তারা অবশ্যই সকালের নাস্তায় কলা খাবেন। হজমের সমস্যা থাকলেও কলা খেতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কলা সবসময় হেলদি ফ্যাটের সঙ্গে খেতে হবে। পিনাট বাটার, ইয়োগার্ট কিংবা পরিজের সঙ্গে কলা খেতে পারেন।
ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে
অনেকেই মনে করেন, কলা খেলে ওজন বাড়ে। আর তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যতালিকা থেকে অনেকেই কলা বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু কলা খুবই পুষ্টিকর একটি ফল। রক্তচাপ ঠিক রাখা থেকে শুরু করে হৃদরোগের সমস্যা সবই দূরে রাখে কলা। এছাড়াও পাকা হলুদ কলায় প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি শরীরের নানা উপকার করে।
পানির চাহিদা পূরণে কলা
আগের রাতে বেশি তেল মসলাদার খাবার খাওয়া হলে পরের দিনও তার একটা প্রভাব থেকে যায়। কলা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া কলা, মধু দিয়ে তৈরি স্মুদি স্নায়ুর উত্তেজনা কমায়। এ কারণে সুস্থ থাকতে কলার স্মুদি খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে
পেট পরিষ্কার না হলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা যায়। এ কারণে সকালে উঠেই যাতে পেট পরিষ্কার হয় সেই দিকে খেয়াল রাখা উচিত। যাদের আলসারের মতো সমস্যা রয়েছে, যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন তাদের নিয়ম করে প্রতিদিন একটা কলা খাওয়া উচিত।
আয়ুর্বেদদের মতে, রাতের সময় কলা খাওয়া বিপজ্জনক নয়। কলা ঠান্ডা ফল। তাই যাদের সর্দির সমস্যা আছে তাদের রাতে কলা না খাওয়াই ভালো। তাছাড়া এটি হজম হতে বেশ সময় নেয়।
পুষ্টিবিদদের মতে, কলা এমন একটি ফল যা খুবই স্বাস্থ্যকর। দেহের প্রচুর শক্তি দেয়। তবে সর্দি লেগে থাকলে এবং অ্যাজমার সমস্যা থাকলে রাতে না খাওয়া উচিত। তবে ব্যায়ামের পর এবং সকাল-বিকালে খেলে কোনো সমস্যা নেই। পাকস্থলীর এডিস নিয়ন্ত্রণ করে কলা। রাস্তা বা বাসার ভাজা-পোড়া খেয়ে যাদের অবস্থা খারাপ, তারা রাতে কলা খেলে জ্বালা-পোড়া কমে যাবে। কলা পাকস্থলীর আলসারও নিরাময় করে। এতে আছে প্রচুর পটাশিয়াম। কাজেই ক্লান্তিকর দিনের পর গভীর ঘুমের জন্যে রাতে কলা উপকারী হতে পারে। পেশিকে আরাম দেয় পটাশিয়াম। সন্ধ্যা বা বিকালের দিকে একটি-দুটি কলা খেলে রাতে ভালো ঘুমের প্রস্তুতি নেয় দেহ। বড় সাইজের একটি কলায় রয়েছে ৪৮৭ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। প্রাপ্তবয়স্কের দেহে প্রতিদিনের চাহিদার ১০ শতাংশ সরবরাহ করে এই সাইজের একটি কলা।
একটি কলায় রয়েছে মাত্র ১০৫ ক্যালোরি। কাজেই আপনি যদি ডিনারে ৫০০ ক্যালোরির কম গ্রহণ করতে চান তো এক কাপ দুধ আর দুটো কলা খেয়ে ফেলতে পারেন।
রাতে কলা খেতে যে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অ্যাজমা, সাইনাস এবং সর্দির সমস্যা থাকলে রাতের বেলা কলা এড়িয়ে চলাই ভালো।