কিশোরকালীন বয়সে ছেলেমেয়েদের দৈহিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। সুস্থ দেহেই বাস করে সুন্দর মন। শরীর সুস্থ না থাকলে কোনো কিছুতেই আনন্দ পাওয়া যায় না। লেখাপড়া করতেও ইচ্ছে করে না। সেজন্য খাদ্য ও পুষ্টির দরকার। আবার যে কোনো খাবার খেলেই যে শরীর ভালো থাকবে তাও কিন্তু নয়। কারণ সব ধরনের খাদ্যেই শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের খাদ্য উপাদান থাকে না। সেজন্য খাদ্য নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রতিদিনের খাবারে আমিষ, শর্করা, আমিষ, চর্বি বা তেল, ভিটামিন, খনিজ দ্রব্য ও পানি প্রয়াজনীয় পরিমাণে পাওয়া যায়।
কিশোরকালীন ছেলেমেয়েদের পুষ্টির প্রয়োজন খুব বেশি। কেননা, এই সময়ে ছেলেমেয়েরা হঠাৎ বেড়ে উঠে এবং তাদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি পায়। সেজন্য তাদের প্রতিদিনই যথাযথ পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। কিন্তু অনেকইএ বিষয়ে গুরুত্ব দেন না। কেউ কেউ মনে করেন যে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান ও পুষ্টি শুধু দামি খাবার ও ফলমূলেই পাওয়া যায়। কিন্তু ধারণাটি সম্পূর্ণই ভুল। একটু সচেতন হলেই সহজপ্রাপ্য ও সুলভমূল্যের খাদ্যদ্রব্য থেকে প্রয়োজন পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।
৬টি খাদ্য উপাদানসমৃদ্ধ খাদ্যের প্রয়োজনীয় পরিমাণের সমাহারকে সুষম খাদ্য বলে। বয়সভেদে এই 'প্রয়োজনীয় পরিমাণের' তারতম্য হতে পারে। যেমন ১৩-১৪ বছর বয়সের কোনো কিশোর বা কিশোরির পুষ্টির প্রয়োজন একটি ৮-৯ বছরের শিশুর চেয়ে বেশি। একই বয়সের মেয়ে শিশু ও ছেলে শিশু, কিশোর-কিশোরি, তরুণ-তরুণির পুষ্টির প্রয়োজনে কোনো তারতম্য নেই। আবার দুজন একই বয়সের তরুণ-তরুণি একজন বেশ দীর্ঘকায় ও স্বাস্থ্যবান এবং অপরজন ছোটখাটো ও সাধারণ স্বাস্থ্যের হলে, দৈহিক গঠনের কারণে প্রথমজনের প্রয়োজনীয় পুষ্টির তথা খাদ্যের পরিমাণ দ্বিতীয় জনের চেয়েবশি হবে। দুজন একই বয়সি ও একই রকম দৈহিক গঠনের পুরুষের মধ্যে যিনি বেশি দৈহিক পরিশ্রম করেন তার খাদ্যের প্রয়োজন বেশি হতে পারে। দুজন সমবয়সি এবং একই রকম দৈহিক গঠন সম্পন্ন মেয়ের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। এভাবে বয়স, দৈহিকগঠন ও কাজের ধরনভেদে পুষ্টির প্রয়োজনীয়তার তারতম্য হয়। কারণ খাদ্যের ৬টি উপাদানের প্রতিটিই বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের দৈহিক বৃদ্ধি ও সুস্থতার জন্য খুব প্রয়োজন। এগুলো দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। অন্যথায় যথাযথ পুষ্টির অভাবে দৈহিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। এছাড়া প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে তারা নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়।
এ সময়টায় হরমোনের কারণে দেহে পরিবর্তন আসে বলে কারও ওজন কমে যায় বা বেড়ে যায়। কারও রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কারও চেহারায় কমনীয়তা কমে যায়। কারও মেজাজ রুক্ষ হয়ে যায়। এ জন্য তাদের খাবারে থাকতে হবে কলিজা, ডিম, বাদাম, খেজুর, কিশমিশ, কচুশাক, ছোট মাছ, বেদানা, সফেদা, পেয়ারা, আপেল, আমলকী ও লিচু ইত্যাদি। যেগুলো রক্তস্বল্পতা রোধ করবে।
দেহের বৃদ্ধি ও হাড় মজবুতের জন্য ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। এ জন্য খেতে হবে দুধ, দুধজাতীয় খাবার, দই, পনির, সমুদ্রের মাছ, সবজি, ডিম, পোস্তদানা, সয়াবিন, মাখন, ঘি, মাছ ইত্যাদি।
ভিটামিন সি-এর জন্য পেয়ারা, আমলকী, আমড়া, জাম্বুরা, কমলা, মাল্টা, লেবু খেতে হবে। প্রতিদিন এক গস্নাস লেবুর শরবত পান করা খুবই উপকারী অভ্যাস। জিঙ্ক ও ফলিক অ্যাসিডের জন্য খেতে হবে সমুদ্রের মাছ, গরুর মাংস, ব্রকলি, লেটুসপাতা, পানি, ডাল, পাতাজাতীয় সবজি ইত্যাদি।
কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টি ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, তা জানার জন্য মাঝেমধ্যে তাদের ওজন উচ্চতা মাপতে হবে। তারা ক্লান্ত, অবসাদগ্রস্ত ও পড়াশোনায় অমনোযোগী হলে বুঝতে হবে তাদের শরীরে হিমোগেস্নাবিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের অভাব হচ্ছে। ওজন কমানোর জন্য কখনই তাদের ডায়েট করা উচিত নয়। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেবে। সুষম ও পরিমিত খাবার এবং ব্যায়ামই পারে ওজন আদর্শ ও পরিমাপে রাখতে।
নাজিয়া আফরিন
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ
নারী মৈত্র।