সাবুদানার পুষ্টি গুণাগুণ
প্রকাশ | ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
নাজিয়া আফরিন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ নারী মৈত্রী
সাবুদানাকে সুপারফুড বলা হয়। এই খাবারটি স্বাস্থ্য ও সুস্বাদুতার এক চমৎকার সংমিশ্রণ। সাবুদানা এক প্রকার পাম গাছ থেকে উৎপাদিত। যার বৈজ্ঞানিক নাম 'মেট্রোক্সিলোন সাগু'। এর 'মেট্রোক্সিলোন' শব্দটি গ্রিক 'মেট্রো' থেকে এসেছে। যার অর্থ 'গাছের নরম অন্তসার'। সাবু হলো স্টার্চে ভরপুর একটি খাদ্য। স্টার্চের অণুগুলো অত্যন্ত জটিল বন্ধনীতে বাঁধা থাকে। যা আমাদের পাচনতন্ত্র হজম করতে পারে না। কিন্তু জিলেটিনাইজেশন সেই বন্ধনীকে শিথিল করে সাবুকে সহজপাচ্য করে তোলে। ফলে এটি দেখতে ছোট ছোট সাদা দানাদার আকারের মুক্ত দানার মতো। সাবুদানাকে ইংরেজিতে 'সাগু পার্ল'ও বলা হয়ে থাকে।
১০০ গ্রাম সাবুদানায় থাকে ৩৩২ ক্যালোরি, ১ গ্রাম প্রোটিন, ১ গ্রাম ফ্যাট, ৮৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ১ গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও সাবুদানার মধ্যে থাকে জিংকও। সাগু বা সাবুদানা একটি স্টার্চ জাতীয় খাবার যা একটি স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। আমাদের দেশে সাধারণত জ্বর হলে বা রোগীদের এই খাবারটি খাওয়ানো হয়। সাবুদানা শুধু শিশুর জন্যই নয় বরং নারীদের জন্যও অনেক উপকারী। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান, তাদের অনেকেই ইন্টারমিটিং ফাস্টিং করেন। সে সময় সাবুদানা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
সাবুদানার উপকারিতা
১. সাবুদানা বিশেষ অবস্থায় শরীরে শক্তি জোগায়: মেনোপজ ও অ্যান্ডোমেট্রিওসিসের ক্ষেত্রে এবং মাসিক হওয়ার আগে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে দুপুরের খাবারের সময় টকদইয়ের সঙ্গে একটি ছোট বাটি সাবুদানা খেলে শরীরে শক্তি পাওয়া যায়। যেহেতু এটি সাধারণত সরল শর্করা জাতীয় খাদ্য। এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। এ ছাড়াও প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ লবণও সামান্য পরিমাণে থাকে- যার কারণে এটি খাওয়ার পরে শরীরে তৎক্ষণাৎ শক্তি পাওয়া যায়। এই কারণে অনেকে ব্যায়াম করার আগে বা পরে সাবুদানা খেতে পছন্দ করেন।
২. অস্টিওপোরোসিস ও আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমায়: এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। যা হাড়কে শক্তিশালী করে ও হাড়ের ঘনত্ব উন্নত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত সাবুদানা খেলে অস্টিওপোরোসিস ও আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমে যায়।
৩. কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা প্রতিরোধ করে: সাবুদানা সহজে হজম হওয়া ছাড়াও স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। পাকস্থলীতে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায় ও এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের মতো সমস্যাও প্রতিরোধ করে।
৪. প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়: এটির খিচুড়ি প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যখন একজন নারী গর্ভবতী অবস্থায় থাকেন তখন সপ্তাহে দুইবার সাবুদানা খেতে পারেন।
৫. ফ্লু ও জ্বর দ্রম্নত সারায়: সাবুদানা ফ্লু ও জ্বর দ্রম্নত সারায়। ক্ষুধা মিটাতেও সাহায্য করে।
৬. রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে: সাবুদানাতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম। যা উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে। এতে করে হৃদরোগজনিত সমস্যা কম হয়।
৭. সাবুদানা ক্যানসার থেকে রক্ষা করে: সাবুদানাতে আছে প্রচুর পরিমাণে ট্যানিন ও ফ্লেভানয়েডস নামক দুটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা ফ্রি রেডিক্যালগুলো নষ্ট করে ক্যানসারের মতো মরণব্যাধি থেকে রক্ষা করে।
৮. সাবুদানা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে: সাবুদানা একটি ক্যালোরি-ঘন খাবার এবং যাদের ওজন বাড়াতে হবে তাদের জন্য উপকারী। এটি ক্রীড়াবিদ এবং উচ্চশক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এমন লোকদের জন্যও এটি একটি ভালো খাবারের বিকল্প। এ ছাড়া কম ওজনের শিশুদের ওজন বাড়াতে সাবুদানা খাওয়ানো হয়।
৯. সাবুদানা গর্ভাবস্থায় উপকারী: সাবুদানা গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য একটি উত্তম খাবার। এটি গর্ভবতী নারীদের ক্লান্তি দূর করে। এ ছাড়া সাবুদানায় থাকা ভিটামিন বি৬ এবং ফোলেট ভ্রূণের বিকাশ ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তবে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে সাবুদানা না খাওয়াই ভালো।
১০. সাবুদানা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: সাবুদানা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে সহায়তা করে। সাবুতে থাকা বিশেষ প্রোটিন অকালে চুল ঝরে পড়া রোধ করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, খুশকির হাত থেকে রক্ষা করে, এমনকি চুলের বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণ করে।
সাবুদানা খাওয়ার ফলে তেমন কোনো অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালোরি বেশি থাকায় এটি ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক। তাই ওজন বাড়াতে না চাইলে এটি বেশি না খাওয়াই ভালো।
সাবুদানা খাওয়ার কিছু সাধারণ নিয়ম: সাবুদানা সাধারণত পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেতে হয়। এটি যে কোনো সবজির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এটি দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায় বা সাবুদানার খিচুড়ি বানিয়েও খাওয়া যায়। অনেকে আবার সাবুদানার বড়া বা ক্ষীর বানিয়েও খায়। এ ছাড়া যে কোনো ডেজার্ট বা জুসেও মিশিয়ে খাওয়া যায়। ফালুদা তৈরিতে সাবুদানা ব্যবহৃত হয়।
নাজিয়া আফরিন
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ
নারী মৈত্রী