নিয়ম মেনে ডিমম নাজিয়া আফরিন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ নারী মৈত্রী
ডিম আমাদের খাদ্য তালিকার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ডিম ছোট-বড় সবার প্রিয় খাবার। এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সবারই কমবেশি জানা। আবার সহজলভ্য হওয়ার কারণে প্রতিদিনের খাবারে ডিম থাকেই। পুষ্টিগুণ ও সহজলভ্যতার কারণে অনেকে বেশি করে ডিম খেয়ে ফেলেন। ডিম অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার- যা দিয়ে বিভিন্ন রকম খাবার রান্না করা সম্ভব।
প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
ডিম আমাদের খাদ্য তালিকার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ডিম ছোট-বড় সবার প্রিয় খাবার। এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সবারই কমবেশি জানা। আবার সহজলভ্য হওয়ার কারণে প্রতিদিনের খাবারে ডিম থাকেই। পুষ্টিগুণ ও সহজলভ্যতার কারণে অনেকে বেশি করে ডিম খেয়ে ফেলেন। ডিম অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার- যা দিয়ে বিভিন্ন রকম খাবার রান্না করা সম্ভব। পাশাপাশি এটি খুবই স্বাস্থ্যকর ও প্রোটিনে ভরপুর। অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতির জন্য এটি প্রোটিনের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর উৎস। এছাড়া এটি সেলেনিয়াম, ভিটামিন এ, ডি, বি-৬, বি-১২, জিঙ্ক, আয়রন ইত্যাদি খনিজসমৃদ্ধ। লুটিন এবং জেক্সানথিনের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উপস্থিতির জন্য চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, ম্যাকুলার অবক্ষয়, ছানি এবং ছত্রাককে প্রতিরোধ করতে পারে ডিম। ডিমে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড- যা হার্ট ভালো রাখতেও সহায়তা করে। পেশি থেকে হাড়ের শক্তি বাড়ায় ডিম। ডিমে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ। ফলে চোখের ইনফেকশনজনিত রোগ দূর করে এই খাবার। একটা বয়সের পর হাড়ের গঠন দুর্বল হয়ে যায়। হাড় দুর্বল হয়ে আর্থ্রাইটিস হয়। এই সমস্যার কারণে প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
ডিম খাওয়ার উত্তম উপায় হলো সিদ্ধ করে খাওয়া। যদি কারও কোলেস্টেরল বা হার্টের সমস্যা থাকে তাহলে কুসুম খাওয়া যাবে না। এতে সমস্যা বাড়তে পারে। এছাড়াও ভাজা ডিম না খাওয়া ভালো। কাঁচা ডিম না খাওয়া ভালো, অর্ধসিদ্ধ খেতে হলে পাস্তুরাইজড ডিম ব্যবহার করতে হবে। কারণ ডিমের কুসুমে সালমোনেলা নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকে। ডিমের অমলেট বা পোচও খাওয়া যায়, তবে তেলেভাজা কোনোকিছুই তেমন স্বাস্থ্যকর নয়। তবে দৈনিক ডিমসিদ্ধ একঘেয়ে লাগলে মাঝেমধ্যে স্বাদবদল করতেও ননস্টিক ফ্রাইপ্যানে সামান্য অলিভ অয়েলে অমলেট বা পোচ করে খাওয়া যায়। ডিমসিদ্ধ থেকে স্বাদবদলের জন্য আরেকটি খাবার হলো ওটস অমলেট। এতে অমলেট বেশ ভারী হয় ও ক্ষুধা মিটে। ডিমের দুই-তৃতীয়াংশ সাদা অংশ আর এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে হলুদ অংশ বা কুসুম। সাদা অংশে থাকে মূলত প্রোটিন আর হলুদ অংশ বা কুসুমে থাকে ফ্যাট বা স্নেহ, প্রোটিন ও কোলেস্টেরল। একজন সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তির দিনে সর্বোচ্চ দুইটি ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত। অতিরিক্ত ডিম খেলে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে -
দ্ব রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে হার্টের অসুখ হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
দ্ব ডিমের সাদা অংশে যেহেতু খুব ভালো প্রোটিন অ্যালবুমিন আছে, তাই অনেকে বেশি করে খায়। মাংসপেশি বাড়ানোর জন্য অনেকে এক দিনে বেশ কয়েকটি ডিম খেয়ে ফেলেন। এমনিতে দৈনন্দিন ডিমের সাদা অংশ খাওয়া ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত অ্যালবুমিন গ্রহণে শরীরে বায়োটিন নামক ভিটামিনের শূন্যতা দেখা দেয়।
দ্ব ডিমে অনেকের অ্যালার্জি থাকে, সেক্ষেত্রে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা হতে পারে। বেশি করে ডিম খেলে পেটে গ্যাস বা অস্বস্তি হতে পারে।
দ্ব অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা ও ডায়াবেটিসের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খাওয়া উচিত।
দ্ব ডিম খেলে শরীরে দ্রম্নত অ্যানার্জি আসে।
দ্ব দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয়।
দ্ব ডিমে থাকা ভিটামিন ই কোষ আর ত্বকে থাকা ফ্রির্ যাডিকেল ধ্বংস করে। তাই ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। এছাড়াও নতুন কোষ তৈরি হতেও সাহায্য করে থাকে। নিয়মিত ডিম খেলে ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
দ্ব পেশির ব্যথা কমায়।
দ্ব নারী স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রতিদিন ৫০-৬০ শতাংশ প্রোটিন দরকার হয়। যা ডিম থেকেই পাওয়া যায়।
দ্ব ডিম খেলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
দ্ব পাশাপাশি সারা শরীরেই রক্ত চলাচল সচল থাকে।
দ্ব ডিম লিপিড প্রোফাইলও নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাছাড়া ডিম লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতেও সাহায্য করে।
দ্ব শরীরের সার্বিক সুস্থতায় কোলাইন খুবই প্রয়োজন। কোলাইনের ঘাটতি হলে লিভারের নানা সমস্যা বা নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার হয়। ডিমে প্রায় ৩০০-৩৫০ মাইক্রোগ্রাম কোলাইন থাকে। সেজন্য ডিম খেলে লিভার ও স্নায়ু ভালো থাকে।
দ্ব প্রোটিনের মূল উৎস হলো অ্যামিনো এসিড। প্রোটিন তৈরিতে প্রায় ২১ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড লাগে। যার মধ্যে ৯টি শরীরে তৈরি হয় না। এজন্য বাইরে থেকে প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। এগুলো ডিম থেকে পাওয়া যায়।
দ্ব নখ ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় অনেকই ভোগেন। নখ মজবুত করে সালফার। আর ডিম হলো এই সালফারের উৎকৃষ্ট উৎস। যা নখকে সুন্দর ও সাদা রাখতেও সাহায্য করে।
দ্ব অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় নারী ও শিশুরা বেশি ভোগে। শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন থাকলে অ্যানিমিয়া হয় না। আর ডিমে রয়েছে আয়রন।
দ্ব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডিম দুর্দান্ত কার্যকরী। ঘন ঘন সর্দি-কাশি বা জ্বরে ভুগতে না চাইলে রোজ ডিম খান। ডিমে থাকা জিংক ইমিউনিটি সিস্টেমকে অনেকটাই শক্তিশালী করে।
দ্ব দাঁতের স্বাস্থ্যও ডিম উন্নত করে।
দ্ব ডিম খেলে ওজন কমে। কারণ ডিম অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। একটি ডিম শরীর থেকে ৪০০ ক্যালোরির মতো কমাতে পারে।