গুলেন ব্যারি সিনড্রোম কী

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
গুলেন ব্যারি সিনড্রোম বা সংক্ষেপে জিবিএস নামটি অতি অপরিচিত বৈকল্য ও রোগটির প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে নেহায়েত কম নয়। যে কোনো বয়সের শিশু-কিশোর বা নারী-পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। জিবিএসের মূল কারণ জীবাণুঘটিত হলেও প্রকৃতপক্ষে জীবাণু প্রতিরোধী ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক আচরণের ফলে এ রোগের উৎপত্তি হয়। 'ক্যাম্পাইলো ব্যাকটর জেজুনি' দ্বারা আক্রান্ত 'ডায়রিয়ার রোগী বা ইনফ্লুয়েঞ্জা' ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত সর্দি-জ্বরের রোগীরা সাধারণত 'জিবিএস'-এ আক্রান্ত হয়। ডায়রিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের প্রায় দুই সপ্তাহ পরে রোগী হঠাৎ ধীরে প্রথমে তার দুই পায়ে দুর্বলতা বোধ করে। যা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং উপরের দিকে বিস্তার লাভ করে মেরুদন্ড, দুই হাত, বুকের মাংসপেশি এমনকি মুখের মাংসপেশিতে ছড়িয়ে পড়ে। কখনো কখনো দুর্বলতা এত বেশি হয় যে, রোগী হাত পায়ের আঙুলও সামান্য পরিমাণ নাড়াতে পারে না। বুকের মাংসপেশির দুর্বলতার কারণে শ্বাসকষ্ট হলে রোগীকে দ্রম্নত হাসপাতালের আইসিইউ বা 'নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে' স্থানান্তর করতে হয়। নতুবা রোগীর মৃতু্যও ঘটতে পারে। জিবিএস রোগীর এত দুর্বলতা সত্ত্বেও সাধারণ অনুভূতি, স্মৃতিশক্তি, পায়খানা-প্রস্রাবের কোনো সমস্যা হয় না এবং রোগী কখনো অজ্ঞান হয়ে যায় না। এসব রোগীকে সব সময় হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগের উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা, এনসিএস নামক স্নায়ুর পরীক্ষা এবং মস্তিষ্কের রস বিশ্লেষণ করে রোগটি নির্ণয় করেন। রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস, নাড়ির গতি, বস্নাড প্রেসার ইত্যাদির প্রতি সার্বক্ষণিক লক্ষ্য রাখতে হয়। যদি শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করতে হয়। নিয়মিত হাত-পায়ের ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, রোগীকে দ্রম্নত সেরে উঠতে সাহায্য করে। এ রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং ধনীশ্রেণি ব্যতীত অন্যরা তা গ্রহণ করতে পারে না। পস্নাজমাফেরোসিস বা আইভি ইমিউনো গেস্নাবিনের খরচ প্রায় ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা। কোনো কোনো রোগীর পুরোপুরি আরোগ্য পেতে প্রায় এক বছর লেগে যায়। পস্নাজমাফেরোসিস তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল। তবে আইভি ইমিউনোগেস্নাবিনের খরচ প্রায় ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা। উপসর্গ শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে এ চিকিৎসা দিতে হয়। এরপরে ইমিউনোগেস্নাবিনের কার্যকারিতা থাকে না। জিবিএসের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রায় ৮০ ভাগ রোগী সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করে, ৫-১০ ভাগ রোগী কিছু না কিছু শারীরিক দুর্বলতা স্থায়ীভাবে থেকে যায় এবং প্রায় ৫-৬ ভাগ রোগী মারা যায়। সাধারণত কোনো ইনফেকশন যেমন ডায়রিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের দুই বা তিন সপ্তাহ পরে জিবিএসের লক্ষণসমূহ দেখা দেয়। কখনো কখনো ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেও জিবিএস হতে পারে।