বর্ষায় সুস্থ থাকতে খাদ্যাভ্যাস

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

নাজিয়া আফরিন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ নারী মৈত্রী
বর্ষা মৌসুম উপভোগ্য হলেও এ সময়ে দেখা দেয় নানারকম অসুখ ও রোগব্যাধি। তাই সুস্থ থাকতে হলে খাবার বাছাই করে খাওয়াটা ভীষণ প্রয়োজন। তাই হতে হবে অনেক বেশি সচেতন।পছন্দসই খাবারের পাশাপাশি পুষ্টিকরও যেন হয় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। বর্ষায় খাবার নিবার্চনে লক্ষ্যণীয় দিক ও নির্বাচনের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো: পুষ্টিকর নাস্তা বাছাই করা কড়া ভাজা বা শর্করাযুক্ত খাবার খেতে মজাদার হলেও এর পরিবর্তে পুষ্টিকর বিকল্প বাছাই করা উচিত। এক মুঠো পরিমাণ বাদাম, ভাজা ছোলা বা মসলাযুক্ত পপকর্ন বাছাই করা যায়। এগুলো খেতেও মজাদার এবং পুষ্টিকর। মৌসুমি ফল বর্ষাকালে নানারকমের ফলমূল পাওয়া যায়, যেমন- আপেল, নাশপাতি, ডালিম, বেরি ইত্যাদি। এগুলো আঁশ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রাকৃতিক চিনি সমৃদ্ধ। সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি এসব ফল পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। সু্যপ ও স্টু্য বর্ষাকালে উষ্ণ স্বাদ নিতে সু্যপ ও স্টু্যবেশ উপকারী। সবজি, ডাল ও চর্বিহীন মাংসের তৈরি সু্যপ খেতে মজাদার ও পুষ্টিকর। এটা পেট ভরার পাশাপাশি শরীর আর্দ্র রাখে এবং পুষ্টি যুগিয়ে সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করে। হালকা রান্না করা খাবার এই মৌসুমে ক্ষুধাভাব বাড়ে। সুস্থ থাকতে এই সময়ে হালকা রান্না করা খাবার খাওয়া উচিত যেন আলসেভাব না লাগে। হালকা ভাজা সবজি, ভাঁপানো মাছ বা গ্রিল করা মুরগির মাংস এই সময়ের জন্য উপযোগী। এতে খাবারের পুষ্টিমান বজায় থাকে এবং সহজে হজম হয়। মসলা চা ক্ষুধাভাব অনেক সময় পানিশূন্যতার সংকেত দেয়। ভেষজ চা আদা, লেমন গ্রাস বা দারুচিনি দিয়ে তৈরি করা মজাদার চা বেছে নেওয়া যেতে পারে। এসব চা দেহের আর্দ্রতা রক্ষার পাশাপাশি ক্ষুধাভাব নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সবুজ শাক পালং শাক, মেথি পাতা এবং বাঁধাকপি অত্যন্ত ক্ষারীয়। এ সবুজ শাকগুলো ভিটামিন এ, সি এবং কে আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের মতো খনিজে সমৃদ্ধ। আপনার খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি যোগ করুন। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, হজমশক্তি উন্নত করতে এবং অন্যান্য অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে সাহায্য করে। স্ট্রোক থেকে বাঁচাবে সবুজ শাকসবজি। পেঁয়াজ ও টমেটো পেঁয়াজ ও টমেটো দুটি খাবারই বেশিরভাগ খাবারের সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এগুলো আমাদের খাবারের স্বাদও বৃদ্ধি করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পেঁয়াজ এবং টমেটো আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। রসুন রসুন বিভিন্ন রোগের প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে অ্যালিসিন নামক একটি যৌগ রয়েছে- যার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। খাবারে রসুন যোগ করলে তা শুধু স্বাদই বাড়ায় না; বরং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। সাইট্রাস ফল লেবু, কমলা ও আঙুরের মতো সাইট্রাস ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এগুলো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে পরিচিত। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ ধরনের ফল শ্বেত রক্তকণিকা উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে- যা সংক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধ করে। সাইট্রাস ফলের ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্য শরীরে একটি স্বাস্থ্যকর পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বেরি স্ট্রবেরি, বস্নুবেরি, রাষ্পবেরি কেবল সুস্বাদুই নয়, একই সঙ্গে এগুলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এ ধরনের ফলে চিনির পরিমাণ কম এবং ফাইবার বেশি- যা বর্ষাকালে স্বাস্থ্যকর পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য উপযুক্ত। বিভিন্ন রকমের বেরি ও খুব স্বাস্থ্যকর। গ্রিন টি শরীর থেকে বিষাক্ত জৈব রাসায়নিক নির্মূলে গ্রিন-টির কোনো বিকল্প নেই। তরল এই খাবার আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু চা নয়, একে ওজন কমানোর ওষুধও বলা চলে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। কেননা, এ সময় নানারকম পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। সেগুলো নিয়েও আলোচনা করা হলো: স্ট্রিট ফুড বর্ষার সময় কাঁদা আর বাতাসে ব্যাকটেরিয়া দ্রম্নত ছড়ায়। অসাবধানে আপনার হাত-পা নোংরা হয়। তাই স্ট্রিটফুডেও পেটে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক থাকে। \হ সি-ফুড সামুদ্রিক খাবার বর্ষায় দ্রম্নত দূষিত হতে পারে। শুধু সি-ফুড নয়। স্যাঁতঁসেতে পরিবেশে মাছ-মাংসও দূষিত হয়। পচন না ধরলেও ফুড পয়জনিংয়ের মতো উপাদান জমতে পারে। তাই এমন খাবারে সাবধান। দুগ্ধজাত পণ্য বর্ষায় দুগ্ধজাত পণ্য খাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকা জরুরি। আবহাওয়ায় এগুলো দ্রম্নত নষ্ট হতে পারে। তাই এ ধরনের খাবার তাজা গ্রহণ করা ভালো। নাজিয়া আফরিন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ নারী মৈত্রী।