এই গরমে সুস্থ থাকতে যা করতে পারেন
প্রকাশ | ১২ জুন ২০২৪, ০০:০০
সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
রান্নাঘরে গেলেই শিলার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এত গরমের মধ্যে সকালের নাস্তা বানাতে গেলেই ঘেমে নেয়ে যাচ্ছে, তারপর আছে দুপুরের খাবার, বিকালের নাস্তা আর রাতের খাবার বানানোর ঝামেলা। তার হাজবেন্ড আসিফও অফিস থেকে ফিরে বেশ ক্লান্ত হয়ে থাকে। রাতেও শান্তি নেই! ঘুমাতে গেলে মনে হয় ফ্যানের বাতাস গরম হুলকা ছাড়ছে। সবমিলিয়ে এই গরমে অতিষ্ঠ জীবন। এই সমস্যা কিন্তু শুধুই শিলার নয়! স্মরণকালের অতিরিক্ত গরম এবার পড়েছে। শহর, নগর, গ্রাম কোথাও কেউ স্বস্তি পাচ্ছে না। নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন এখন একটুতেই মানুষ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, এমনকি অনেকে মারাও যাচ্ছে। এখন সবার একটাই চিন্তা কীভাবে এই আবহাওয়ায় ভালো থাকা যায়। প্রচন্ড গরমে সুস্থ থাকার উপায় নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
গরমে কী কী স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে থাকে?
প্রচন্ড গরমের সময় সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে ক্লান্তি বোধ করা, হিটস্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোক অন্যতম। এছাড়াও এই সময়ে কিডনি ও ফুসফুসের রোগীদের শারীরিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। গরমে যারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন ৬৫ বছরের বেশি বয়সি প্রবীণ ব্যক্তি, শিশু-কিশোর, গর্ভবতী নারী ও দীর্ঘস্থায়ী রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা।
গরমে সুস্থ থাকতে কী করবেন?
গরমে সুস্থ থাকতে এই পরামর্শগুলো মেনে চলুন-
১. সম্ভব হলে বাসায় এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। ইলেকট্রিক বিল কমাতে একই সময়ে এসি ও ফ্যান ব্যবহার করুন। এসির তাপমাত্রা ২৬-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখলে রুম দ্রম্নত ঠান্ডা হবে এবং এতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের খরচ কমে আসবে।
২. কাজের ফাঁকে কিছুটা আরাম পেতে একটি স্প্রে বোতলে পানি নিয়ে মুখে স্প্রে করুন অথবা ভেজা স্পঞ্জ ব্যবহার করে মুখ ও হাত ভিজিয়ে নিন।
৩. গরম পানিতে গোসল না করে ঠান্ডা পানিতে গোসল করুন।
৪. সবসময় হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। সিনথেটিক কাপড়ের পোশাক এড়িয়ে চলুন এবং সুতি, লিনেন ইত্যাদি কাপড়ের পোশাক বেছে নিন।
৫. আপনার ঘরকে শীতল করার জন্য তাপ নিরোধক কোটিং দেয়ালে দিতে পারেন, বাইরের জানালায় খড়খড়ি বা ভারী পর্দা দিয়ে ঢেকে দিতে পারেন এবং বাড়িতে ইনডোর পস্ন্যান্ট রাখতে পারেন।
গরমে সুস্থ থাকতে সতর্ক থাকুন
প্রচন্ড গরমের সময় বাসায় থাকাই সবচেয়ে ভালো। বিশেষ করে দুপুরবেলায় রোদের তাপ বেশি থাকে বলে এ সময় বাইরে গেলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। পরামর্শ থাকবে, অপ্রয়োজনীয় আউটিং বাতিল করুন বা পুনঃনির্ধারণ করুন। সম্ভব হলে দিনের শুরুতে ও বিকালবেলায় দরকারি কাজ করার পরিকল্পনা করুন। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় খাবার, পানি ও ওষুধ মজুদ রাখুন, যাতে আপনাকে গরমে বারবার বাইরে যেতে না হয়।
বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নিন। টিভি-রেডিওর মাধ্যমে, অনলাইনে বা বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে হিটওয়েভের পূর্বাভাস দেখুন এবং স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চলুন। যদি আপনাকে বাইরে যেতেই হয়, তাহলে সঙ্গে একটি পানির বোতল ও ছাতা নিন। বাইরে সবসময় ছায়ায় থাকার চেষ্টা করুন এবং ত্বকের সুরক্ষার জন্য সানগস্নাস, টুপি ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
হাইড্রেটেড থাকার বিকল্প নেই
গরমের দিনে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাওয়া একটি পরিচিত সমস্যা। ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলো হলো তৃষ্ণা অনুভব করা, হালকা মাথাব্যথা হওয়া, শুষ্ক ত্বক, ক্লান্তি, গাঢ় রঙের তীব্র গন্ধযুক্ত প্রস্র্রাব হওয়া, স্বাভাবিকের চেয়ে কম প্রস্র্রাব হওয়া ইত্যাদি। এই সমস্যা এড়াতে প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কোনো অসুস্থতার জন্য যদি আপনার ডাক্তার তরল গ্রহণ সীমিত করে থাকেন, তাহলে তার পরামর্শ নিন যে, এই গরম আবহাওয়ায় আপনার কতটুকু পানি পান করা উচিত। ও হঁ্যা, গরমে সুস্থ থাকতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আপনার সঙ্গে সবসময় একটি পানির বোতল রাখুন।
পরিশেষে বলা যায়, আমরা সবাই একটি ক্রান্তিকালীন সময়ে আছি। এই অসহনীয় তাপমাত্রা কবে কমবে তা এখনো জানা যায়নি। বরং বলা হয়েছে, তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। গরমে সুস্থ থাকতে আপনার একটু সচেতনতাই আপনার নিজের ও পরিবারের জন্য যথেষ্ট। তাই সময় থাকতে সচেতন হোন এবং সুস্থ থাকুন।