শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

গরমে ত্বকের স্বাস্থ্য দাদ : কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়

এটি ত্বকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের যেকোনো জায়গায় ছত্রাক বা ফাঙ্গাসের ইনফেকশনের কারণে হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে দাদ রোগসহ বিভিন্ন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। যেমন : ডায়াবেটিস রোগী দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড নিচ্ছেন কিংবা কেমোথেরাপি নিচ্ছেন এমন ব্যক্তি। আক্রান্ত স্থানভেদে দাদের লক্ষণে ভিন্নতা দেখা যায়।
  ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০
গরমে ত্বকের স্বাস্থ্য দাদ : কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয়

দাদ একটি অতি পরিচিত মারাত্মক ছোঁয়াচে চর্মরোগ। এটি শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ত্বকের যে কোনো জায়গায় ছত্রাক বা ফাঙ্গাসের ইনফেকশনের কারণে হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে দাদ রোগসহ বিভিন্ন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। যেমন, ডায়াবেটিস রোগী দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড নিচ্ছেন কিংবা কেমোথেরাপি নিচ্ছেন এমন ব্যক্তি। আক্রান্ত স্থানভেদে দাদের লক্ষণে ভিন্নতা দেখা যায়। আবারর্ যাশের আকারেও ভিন্নতা থাকতে পারে। দাদের র?্যাশ আস্তে আস্তে বড় হয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। কিংবা কখনো একাধিকর্ যাশ দেখা দিতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি আপাতদৃষ্টিতের্ যাশ সেরে গিয়েছে মনে হলেও চিকিৎসা বন্ধ করা যাবে না। সঠিক সময় পর্যন্ত চিকিৎসা না নিলে র?্যাশ পুরোপুরি নাও সারতে পারে কিংবা ত্বকে পুনরায় দাদ হতে পারে।

শরীরের যে সব স্থানে দাদ হয়:

আমাদের শরীরের যে কোনো স্থানে দাদ হতে পারে। যেমন: মাথার ত্বক, মুখ, বগল, কুঁচকি, হাত, পা, পায়ের পাতা, হাত-পায়ের নখ ইত্যাদি অংশে।

মাথার ত্বক

মাথার ত্বকে দাদ দেখা দিলে সাধারণত আক্রান্ত অংশের চুল পড়ে টাক সৃষ্টি হয়। টাক পড়া অংশে লালচে, গোলাকার ও ছোটো আঁইশযুক্তর্ যাশ তৈরি হয়। এতে চুলকানি থাকতে পারে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে টাকের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে এবং একাধিকর্ যাশ তৈরি হতে পারে। মাথার ত্বকের দাদ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

পা ও পায়ের আঙুলের ফাঁকে

এক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানটি লালচে হয়, ফুলে ওঠে এবং চামড়া উঠে যেতে থাকে। সেই সঙ্গে পায়ের আঙুলগুলোর ফাঁকে ফাঁকে চুলকানি হয়। বিশেষ করে পায়ের সবচেয়ে ছোটো আঙুল দুটির মাঝখানের অংশে চুলকানি হয়ে থাকে। পায়ে দাদ হলে পায়ের পাতা ও গোড়ালি আক্রান্ত হতে পারে। কখনো কখনো পায়ের ত্বকে ফোস্কা পড়ে।

কুঁচকি

কুঁচকিতে দাদ হলে সেটি সাধারণত ঊরুর ভেতরের দিকের ভাঁজে লাল র?্যাশ হিসেবে দেখা যায়। র?্যাশে আঁইশ থাকে এবং চুলকানি হয়।

দাড়ি

গাল, চিবুক ও গলার ওপরের অংশে এই ধরনের দাদ দেখা দেয়। এক্ষেত্রেও লালচে র?্যাশ ও আঁইশ থাকে এবং চুলকানি হয়। দাড়িতে দাদ হলে অনেক সময়র্ যাশের ওপরে খুশকির মতো হয়, এর ভেতরে পুঁজ জমতে পারে এবং সঙ্গে আক্রান্ত অংশের চুল পড়ে যেতে পারে।

লক্ষণ বা উপসর্গ :

দাদের প্রধান উপসর্গ হলো ফুসকুড়ি বার্ যাশ- যা দেখতে চাকতি বা আংটির মতো গোল লালচে রঙের। তবে রোগীর ত্বকের বর্ণভেদে এটি রুপালি কিংবা আশপাশের ত্বকের চেয়ে গাঢ় বর্ণেরও হতে পারে। ত্বকের বর্ণ পরিবর্তনের পাশাপাশির্ যাশের উপরিভাগে ছোটো ছোটো আঁইশ থাকতে পারে। এখানে কমন কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হলো :

হ ত্বক খসখসে বা শুকনো হয়ে যায়

হ আক্রান্ত স্থানটি ফুলে যায়

হ চুলকানি হয়

হ আক্রান্ত ত্বকের উপরে চুল অথবা লোম থাকলে সেগুলো ঝরে পড়ে

সংক্রমণ যেভাবে ছড়ায় :

দাদ একটি সংক্রামক রোগ। এটি ট্রাইকোফাইটন, মাইক্রোস্পোরাম ও এপিডার্মোফাইটন নামক ফাঙ্গাসের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটায়। এটি মূলত তিনভাবে ছড়ায়।

হ আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা তার ব্যবহৃত জিনিস পত্রের সংস্পর্শ থেকে। যেমন: চিরুনি, তোয়ালে, বালিশের কভার, বিছানার চাদর ইত্যাদি।

হ দাদ আক্রান্ত ব্যক্তি ও প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে। যেমন: মানুষ (সঙ্গী বা সঙ্গিনী, খেলার সঙ্গী, সহপাঠী ইত্যাদি) কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল, ঘোড়া ইত্যদি।

হ সঁ্যাতসেঁতে পরিবেশ।

জটিলতা :

হ সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করালে দাদ শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে যেতে পারে।

হ ত্বকে দাগ থেকে যায়।

হ আক্রান্ত স্থানটি চুলকানোর ফলে ত্বক ফেটে যেতে পারে। সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয়ে আক্রান্ত স্থানটি লালচে ও গরম হয়ে ফুলে ওঠে, ব্যথা হয় এবং পুঁজ বের হয়।

হ নখে দাদ হলে নখের স্বাভাবিক রং ও আকারের পরিবর্তন ঘটতে পারে।

প্রতিরোধে করণীয় :

হ দাদ হলে যত দ্রম্নত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করুন।

হ ত্বক সব সময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখুন। আক্রান্ত ত্বক স্পর্শ করলে সঙ্গে সঙ্গে হাত ধুয়ে ফেলুন।

হ দৈনন্দিন ব্যবহারের কাপড় (যেমন: তোয়ালে ও বিছানার চাদর) নিয়মিত ফুটন্ত পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

হ দাদ হয়েছে এমন কারও ব্যবহার্য জিনিসপত্র (যেমন: তোয়ালে, চিরুনি, বিছানার চাদর ইত্যাদি) ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

হ আক্রান্ত ত্বক স্পর্শ করা অথবা চুলকানো থেকে বিরত থাকুন। তাতে দাদ শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে যেতে পারে। এমনকি চুলকানোর কারণে ত্বকে সেকেন্ডারি ইনফেকশন হতে পারে- যা দাদের চিকিৎসাকে আরও জটিল করে তুলে।

ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা,

নীলফামারী সদর, নীলফামারী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে