নিরাপদ মাতৃত্ব : গর্ভবতী মায়ের যত্ন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে অবশ্যই কমপক্ষে চারবার এএনসি (গর্ভকালীন) চেক আপের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এই চারবার হচ্ছে যথাক্রমে ১৬, ২৮, ৩২ ও ৩৬তম সপ্তাহে। এছাড়া কারও শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে

প্রকাশ | ০৮ মে ২০২৪, ০০:০০

ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, নীলফামারী সদর, নীলফামারী।
গর্ভের শিশুর শারীরিক ও মানসিক পরিপূর্ণ বিকাশের পূর্বশর্ত হচ্ছে মায়ের সুস্থতা সুনিশ্চিতকরণ। এজন্য একজন নারীকে নিজেই যেমন হতে হয় স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন, তেমিন গর্ভবতী মায়েদের প্রতি যত্নশীল হতে হয় পরিবারের সবার। গর্ভবতী মায়ের পরিচর্যা গর্ভস্থ সন্তান ও মা উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২৮,০০০ মহিলা গর্ভজনিত কারণে মৃতু্যবরণ করেন। নবজাতকের মৃতু্যর হার প্রতি হাজারে ৮৩ জন। মা ও শিশুর এ অকাল মৃতু্যর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু এ প্রতিরোধ আমাদের দেশে সম্ভব হয়ে উঠছে না- মূলত স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে। একজন নারী যখন প্রথমবার গর্ভধারণ করেন তখন অনেক কিছুই তার অজানা থাকে। সন্তান ধারণ থেকে শুরু করে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত একজন মাকে অনেক বিষয়ে সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করতে হয়। পরিকল্পিত গর্ভধারণ মা ও শিশু উভয়ের জন্যই অত্যন্ত নিরাপদ। সন্তান ধারণের আগে অবশ্যই মায়ের ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি শারীরিক পরীক্ষা করে নিতে হবে। শিশু গর্ভে থাকাকালীন তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হয়। তাই এ সময় মায়ের খাদ্যের উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। মায়ের খাবার পস্নাসেন্টার মাধ্যমে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। তাই মা যা খাচ্ছে সেটি মা-শিশু উভয়ের জন্যই পর্যাপ্ত পুষ্টির জোগান দিচ্ছে কিনা, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অন্যদিকে মা যদি অসুস্থ হয় বা যদি কোনো বিষয়ে মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন থাকে, সেটিও উভয়ের জন্য সমান ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই গর্ভকালীন একজন মায়ের সমানভাবে শারীরিক ও মানসিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। মানসিক চাপমুক্ত থাকা, ভারী কোনো ওজন না নেওয়া, উঁচুনিচু স্থান এড়িয়ে চলা- এসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। গর্ভবতী মায়েদের পোশাকের ব্যাপারেও সচেতন থাকা উচিত। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আরামদায়ক, সহজে পরিধানযোগ্য ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করতে হবে এবং সঠিক মাপের নরম জুতা পরা এবং হিল জুতা পরিহার করাই শ্রেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে অবশ্যই কমপক্ষে চারবার এএনসি (গর্ভকালীন) চেক আপের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এই চারবার হচ্ছে যথাক্রমে ১৬, ২৮, ৩২ ও ৩৬তম সপ্তাহে। এছাড়া কারও শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একজন প্রসূতি মায়ের জন্য গর্ভধারণকালীন প্রথম এবং শেষ তিন মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশু গর্ভে থাকার প্রথম তিন মাসেই তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো পূর্ণ রূপ ধারণ করে। গর্ভাবস্থায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মায়েদের হিমোগেস্নাবিনের ঘাটতি পড়ে যায়। কারণ এ সময় গর্ভস্থ শিশুর শরীরে লৌহের চাহিদা মেটানোর পর মায়েদের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এজন্য গর্ভবতী মাকে এ সময় প্রয়োজনীয় ওষুধের পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দিতে হয়। গর্ভে থাকাকালীন শেষ তিন মাস শিশু খুব দ্রম্নত বেড়ে ওঠে। যে কারণে প্রসূতি মায়ের পায়ে পানি আসতে পারে। এছাড়া শেষ তিন মাসে পেট বড় হয়ে যাওয়ার কারণে গর্ভবতী মায়ের অনেক কষ্ট হয়। এই সময়ে কিছু জটিলতাও দেখা দিতে পারে, যেমন অস্বাভাবিকভাবে পেট বড় বা ছোট হওয়া, হঠাৎ রক্ত ভাঙা, খিঁচুনি, খুব বেশি জ্বর আসা, রক্তচাপ অতিরিক্ত বেশি হওয়া। এমন পরিস্থিতিতে অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। \হডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, নীলফামারী সদর, নীলফামারী।