গরমে ইউরিন ইনফেকশনের আশঙ্কা
মূত্রনালির সংক্রমণ হলো আমাদের কিডনি থেকে মূত্রনালি পর্যন্ত দীর্ঘ যাত্রার যে কোনো অংশে সংক্রমণ। এক্ষেত্রে জ্বালাপোড়া, ব্যথা, প্রস্রাবে রক্ত, পেটে ব্যথা, তলপেটে ব্যথা, জ্বর, কাঁপুনি ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ হতে পারে...
প্রকাশ | ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
তীব্র গরমে সবারই শ্বাসকষ্ট হয়। এমন গরম অনেক দিন দেখা যায় না। বৈশাখের শুরুতে এমন অগ্নিকান্ডের ঘটনা অভিজ্ঞজনরাও মনে করতে পারেন না। তীব্র গরমের প্রভাবে শরীরে একাধিক রোগ বাসা বাঁধে। এমনকি মূত্রনালির সংক্রমণ বা ইউটিআই। মূত্রনালির সংক্রমণ হলো আমাদের কিডনি থেকে মূত্রনালি পর্যন্ত দীর্ঘ যাত্রার যে কোনো অংশে সংক্রমণ। এক্ষেত্রে জ্বালাপোড়া, ব্যথা, প্রস্রাবে রক্ত, পেটে ব্যথা, তলপেটে ব্যথা, জ্বর, কাঁপুনি ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ হতে পারে। মনে রাখতে হবে প্রচন্ড গরমে ইউটিআই হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এ সময় ঘামের মাধ্যমে শরীরের বেশির ভাগ পানি চলে যায়। ফলস্বরূপ, প্রস্রাব আউটপুট বা প্রস্রাব পর্যাপ্ত হয় না। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
অনেকে মনে করেন ইউটিআই শুধু মহিলাদের জন্য। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই সংক্রমণ ঘটতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গ্রীষ্মে ইউরিন ইনফেকশন কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়? আসুন জানা যাক-
পর্যাপ্ত পানি পানই এ থেকে বাঁচার উপায়?
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। আসলে শরীরে পানির অভাব হলে প্রস্রাব হয় না। ব্যাকটেরিয়া তখন মূত্রনালিতে বৃদ্ধি পেতে পারে। এই কারণে সংক্রমণ ঘটে।
অন্যদিকে, প্রস্রাবের আউটপুট স্বাভাবিক হলে প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে আসবে। ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে না। তাই গরমের দিনে অন্তত ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করুন। তবেই আপনি সুস্থ থাকবেন।
ডাবের পানি ও ফলের রস পান করুন?
শুধু পানি পান করলেই ইউরিন ইনফেকশন প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু অনেকেই দিনে ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করতে পারেন না। সেই অভাব পূরণ করতে তারা ডাবের পানি এবং ফলের রস পান করতে পারেন।
বোতলজাত পানি ও ফলের রস শরীরে পানির অভাব পূরণ করবে। খনিজ, ভিটামিন এবং ইলেক্ট্রোলাইটও শরীরে পৌঁছাবে। এই কারণে সংক্রমণ সহজেই নির্মূল করা যায়। তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই।
বাইরের টয়লেট কম ব্যবহার করুন?
ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় পাবলিক টয়লেট। এসব টয়লেট ব্যবহার করার সময় আপনাকে সচেতন হতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগের জীবাণু পায়খানা থেকে ছড়ায়। তাই এই সময়ে অন্তত পাবলিক টয়লেট এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
বিশেষ করে মহিলাদের পাবলিক টয়লেট এড়িয়ে চলা উচিত। তবে দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখাও বিপদের কারণ। তাই একান্তে প্রস্রাব করতে হবে। তবে আপনি প্রস্রাব করার আগে টয়লেটের মেঝেতে একটি বিশেষ স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলবে। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যাবে।
প্রস্রাব চেপে রাখলেই বিপদ
প্রস্রাব ধরে রাখা ব্যাকটেরিয়াকে মূত্রাশয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য থাকতে দেয় এবং দুর্ভাগ্যের সঙ্গে, জীবাণু এর মধ্যে বহুগুণ বৃদ্ধি করতে পারে। তখন ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে। এই অবস্থায় সচেতন হওয়া ছাড়া আর কোনো গতি নেই। তাই ৩০ মিনিট বা তার বেশি সময় প্রস্রাব আটকে রাখবেন না। পরিবর্তে, আপনি প্রস্রাব করার সঙ্গে সঙ্গে মূত্রাশয় পরিষ্কার করুন। সুস্থ থাকতে পারবেন। ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে যাবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন?
অনেকে বছরে একাধিক বার এই অসুখে আক্রান্ত হন। তাদের বিশেষভাবে সচতেন হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আর নিজের বুদ্ধিতে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাবেন না। এতে ড্রাগ রেজিস্টেন্স তৈরি হয়। পরে আর সেই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। বরং সমস্যা সমাধানে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কী কারণে বারবার এমন সমস্যা হচ্ছে তা খুঁজে বের করে দেখতে হবে। তারপর চিকিৎসা। এভাবেই রোগ থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন।