মাইগ্রেনের ব্যথা এবং প্রতিকার
এই ধরনের মাথাব্যথা ৪ ঘণ্টা থেকে ৩ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং কখনো কখনো আরো দীর্ঘ হয়। সাধারণত পুরুষদের তুলনায় মহিলারা মাইগ্রেনে তিনগুণ বেশি আক্রান্ত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে মাইগ্রেনের মাথাব্যথা শুরু হয় এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৫০ বছর বয়সের পরে আপনা-আপনিই ভালো হয়ে যায়।
প্রকাশ | ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
মাইগ্রেন এক ধরনের ভয়ংকর মাথাব্যথা, যাতে আক্রান্ত হলে প্রায়শই এর সঙ্গে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরানো এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। এই ধরনের মাথাব্যথা ৪ ঘণ্টা থেকে ৩ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং কখনো কখনো আরো দীর্ঘ হয়। সাধারণত পুরুষদের তুলনায় মহিলারা মাইগ্রেনে তিনগুণ বেশি আক্রান্ত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে মাইগ্রেনের মাথাব্যথা শুরু হয় এবং মহিলাদেও ক্ষেত্রে ৫০ বছর বয়সের পরে আপনা-আপনিই ভালো হয়ে যায়।
মাইগ্রেনের কারণ :
মাইগ্রেনের ব্যথার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে দেখা গেছে, যদি বাবা কিংবা মায়ের মাইগ্রেনের ব্যথার সমস্যা থাকে তবে তাদের সন্তানেরও তা হওয়ার ৫০% সম্ভাবনা থাকে এবং যদি বাবা-মা উভয়েরই থাকে তবে ঝুঁকি বেড়ে হয় ৭৫%। আগে ধারণা করা হতো মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের পরিবর্তনের ফলে মাইগ্রেনের ব্যথা হয়। তবে এখন অনেকে মনে করেন যে, মস্তিস্কের গঠনগত জেনেটিক ত্রম্নটির কারণে মাইগ্রেন হয়।
মাইগ্রেনের ব্যথা তখনই শুরু হয়, যখন মস্তিষ্কের অতিরিক্ত সক্রিয়তার ফলে প্রেরিত সিগন্যাল দ্বারা ট্রাইজেমিনাল নার্ভ উত্তেজিত হয়। নার্ভের সক্রিয়তার ফলে সেরোটোনিন এবং ক্যালসিটোনিন নামক জিন-সম্পর্কিত পেপটাইড (সিজিআরপি) জাতীয় কিছু নিউরোট্রান্সমিটারের অবমুক্তি ঘটে। সিজিআরপি মস্তিষ্কের আস্তরণে থাকা রক্তনালিগুলোকে ফুলিয়ে ফেলে। এতে করে শরীরে নিউরোট্রান্সমিটারগুলো প্রবাহিত হয় যা প্রদাহ এবং ব্যথা তৈরি করে।
কিছু কিছু ফ্যাক্টর মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু করতে পারে :
হ স্ট্রেস: অন্যতম প্রধান ট্রিগার- যা মাইগ্রেনের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়।
হ খাদ্য: কিছু কিছু খাবার ও পানীয়, যেমন: পনির, অ্যালকোহল এবং নাইট্রেটযুক্ত খাবার এবং মনোসোডিয়াম গস্নটামেট- যা টেস্টিং সল্ট নামে পরিচিত, ৩০% ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের জন্য দায়ী।
হ ক্যাফেইন : অত্যধিক ক্যাফেইন গ্রহণ বা তা থেকে সরে আসা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। মাথার রক্তনালি ক্যাফেইনে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এর অভাবে মাথাব্যথা হতে পারে।
হ আবহাওয়ার পরিবর্তন: ঝড়, বাতাসে আর্দ্রতার পরিবর্তন, প্রবল বায়ুচাপ বা উচ্চতার পরিবর্তন মাইগ্রেনের ব্যথার কারণ হতে পারে।
হ মেয়েদের পিরিয়ডকালীন
হ অতিরিক্ত ক্লান্তি
হ খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন
হ ঘুমের ব্যাঘাত
মাইগ্রেনের লক্ষণ:
হ মাথাব্যথা- যা প্রায়শই মাথা ভারী ভারী লাগা হিসেবে শুরু হয় এবং ক্রমশ তীব্র ব্যথা হয়ে ওঠে- যা চলাফেরার সঙ্গে খারাপ হতে থাকে। ব্যথা মাথার একপাশ থেকে অন্য দিকে সরেও যেতে পারে, মাথার সামনের দিকে হতে পারে বা সম্পূর্ণ মাথা জুড়ে হতে পারে।
হ আলো, শব্দ এবং গন্ধের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা।
হ বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরানো, বদ হজম হওয়া এবং পেটের ব্যথা।
হ ক্ষুধামন্দা।
হ জ্বর জ্বর অনুভূতি।
হ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।
হ অবসাদ।
হ দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া।
হ ডায়রিয়া।
বেশিরভাগ মাইগ্রেনের ব্যথা প্রায় তিন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সাধারণত মাসে দুই থেকে চারবার মাইগ্রেনের অ্যাটাক হলেও কারো কারো বছরে একবার বা দুইবার হতে দেখা যায়।
মাইগ্রেন প্রতিরোধে করণীয়:
হ মাইগ্রেনের কারণ শনাক্ত করে তা এড়িয়ে চলতে পারলে ব্যথা ওঠার ফ্রিকোয়েন্সি কমানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে মাথাব্যথার একটা ডায়েরি মেইন্টেন করা যেতে পারে। তাতে লক্ষণীয় কারণগুলো ট্র্যাক করা সহজ হবে এবং কি কারণে আক্রান্ত হচ্ছেন তা নির্ধারণ করতে পারবেন।
হ স্ট্রেস ফ্রি থাকুন।
হ যারা প্রায়শই ঋতুস্রাবের সময় মাইগ্রেনের ব্যথার সম্মুখীন হন তারা মাসের নির্দিষ্ট সময় এলেই প্রতিকারক ওষুধ সেবন করতে পারেন।
হ নিয়মিত সময়সূচি মেনে খাওয়া-দাওয়া করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং পরিমিত বিশ্রাম নিলে আপনার মাইগ্রেনের ব্যথা কমে যাবে।
হ নিয়মিত ব্যয়াম করুন।
ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা,
নীলফামারী সদর, নীলফামারী।