স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি রোগ। আমাদের মস্তিষ্কের রক্তনালিতে জটিলতার কারণে এই রোগ দেখা দেয়। প্রতি বছর বিশ্বে এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ স্ট্রোক করেন। প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ স্ট্রোকের কারণে মৃতু্যবরণ করেন। ৫০ লাখ মানুষ স্ট্রোকের কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন। প্রতি ৬ জনে একজন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। অনেকেই স্ট্রোককে হার্টের রোগ মনে করেন- যা একদমই ভুল। এই ভুল ধারণার কারণে রোগীরা বাড়তি ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।
স্ট্রোকের যত কারণ :
১. উচ্চ রক্তচাপ, ২. ডায়াবেটিস, ৩. উচ্চ কোলেস্টেরল, ৪. হৃদরোগ (করোনারি হৃদরোগ, ধমনি ফাইব্রিলেশন, হার্টের ভালভ রোগ, ক্যারোটিড ধমনি।), ৫. অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, ৬. ধূমপান, ৭. বেশি ওজন, ৮. অপুষ্টি, ৯. কায়িক পরিশ্রম না করা, ১০. হেমোরেজিক স্ট্রোকে পূর্ববর্তী স্ট্রোক বা টিআইএ, ১১. কোয়াগুলোপ্যাথি, ১২. প্রদাহ (দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতির দিকে পরিচালিত করে।), ১৩. ধমনি বিকৃতি, ১৪. অ্যানিউরিজম, ১৫. স্থূলতা, ১৬. প্রি-একলাম্পসিয়া, ১৭. ভাইরাল সংক্রমণ: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, লুপাস ও ১৮. উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং মানসিক চাপ।
লক্ষণসমূহ :
১. শরীরের একদিক দুর্বল বা অবশ হয়ে যায়, ২. মুখের যে কোনো একপাশ বেঁকে যায়, ৩. কথা অস্পষ্ট হয়ে যায় বা জড়িয়ে যায়, ৪. চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, ৪. তীব্র মাথাব্যথা অনুভূত হয় ও ৫. অজ্ঞান হয়ে যায়।
স্ট্রোকপরবর্তী জটিলতা :
১. পক্ষাঘাত বা চলাফেরা করতে অসুবিধা, ২. পেশির ও অস্থিসন্ধির কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলা বা পঙ্গুত্ব, ৩. কথা বলতে বা গিলতে অসুবিধা, ৪. অবশ অংশে ক্ষত বা বেড সোর হওয়া, ৫. শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা, ৫. মানসিক ও আচার-আচরণে অসুবিধা।
জটিলতার চিকিৎসা :
স্ট্রোকপরবর্তী সময়ের চিকিৎসা কী হবে এটা নিয়েও রয়েছে নানা জটিলতা। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষই জানেন না, স্ট্রোকে যদি কেউ প্যরালাইজড হয়ে পড়েন তবে তাকে কী চিকিৎসা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কার্যকর একটি পদ্ধতি ফিজিওফেরাপি ও পুনর্বাসন। রোগী যদি খুব দ্রম্নত ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসার আওতাধীন হয়, তবে প্রায় ৯৫ ভাগই আগের জীবনে ফিরে আসতে পারে। স্ট্রোকের পর রোগীর মাংসপেশি অবশ বা শক্ত হয়ে যায়। এসব রোগীর শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়াতে ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসার গুরুত্ব অপরিসীম। স্ট্রোকের কারণে অধিকাংশ রোগীর শরীরের যে কোনো একপাশ অবশ বা প্যারালাইজড হয়ে যায়। এ সময় রোগী তার স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। তাই যত দ্রম্নত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করা যাবে, রোগী তত তাড়াতাড়ি সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।
ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান
ফিজিওথেরাপি, ডিজএবিলিটিস ও রিহেবিলিটেশন স্পেশালিস্ট
সহযোগী অধ্যাপক (আইআইএইচএস) ও কনসালটেন্ট ডিপিআরসি,
১২/১, রিং রোড, শ্যামলী, ঢাকা।