যোগাভ্যাস এবং সুন্দর জীবন
নিরোগ শরীর বজায় রাখতে নিয়মিত যোগাসন করা প্রয়োজন। শরীর ও মন দুয়ের ওপরই যোগের প্রভাব অপরিসীম। যোগাসন মানসিক জড়তা ও অবসন্ন ভাব কাটাতে সাহায্য করে...
প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
আমরা অনেকেই ব্যস্ততার অজুহাতে নিজের যত্ন নিই না। তাদের জন্য সহজ সমাধান হতে পারে যোগাব্যায়াম বা যোগাসন। যোগাসন শব্দের ইংরেজি নাম ণড়মধ, যার অর্থ যোগ করা বা একত্র করা। ব্যক্তিসত্তার সঙ্গে বিশ্বসত্তা একত্র করে প্রশান্তি অর্জনের মাধ্যম হলো, যোগ বা যোগাসন।
যোগ হলো ভারতে সৃষ্টি এক প্রাচীন তপস্বী অনুশীলন পদ্ধতি যেটা আমাদের শরীর এবং মনের শান্তি সুখ অর্জনের জন্য শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সাধনাকে একত্রিত করে এগিয়ে নিয়ে চলে। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে যোগের প্রসার ও পরিকল্পনা বেড়েই চলছে। তারই গতিপথ ধরে শুদ্ধ যোগ ও তার সুবিশাল পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের একটি সংস্থা 'বাংলাদেশ যোগ সংঘ'। নিরোগ শরীর বজায় রাখতে নিয়মিত যোগাসন করা প্রয়োজন। শরীর ও মন দুয়ের ওপরই যোগের প্রভাব অপরিসীম। যোগাসন মানসিক জড়তা ও অবসন্ন ভাব কাটাতে সাহায্য করে। যোগাসনের মাধ্যমে রাগ, চঞ্চলতার মতো মনের বেশ কিছু অবস্থা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
সুস্বাস্থ্যের জন্য যোগ :
হ যোগাসন শরীরের সাম্যতা বজায় রাখে।
হ যোগ ইনসোমনিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে ঘুমের উন্নতিসাধন ঘটায়।
হ শরীরের ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দূর করে ফিট থাকতে সাহায্য করে।
হ দেহের অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করে।
হ দেহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মানুষের মধ্যে এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি করে।
হ কার্ডিওভাসকুলার এবং শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়ার উন্নতি সাধন করে।
হ মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
হ যোগাভ্যাস দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা এবং বিষণ্ন্নতার হাত থেকে মুক্তি দেয়।
হ যোগা ঐউখ (ভালো কোলেস্টেরল) কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং খউখ (ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল) কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস করে এবং এভাবে টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখে।
হ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে যোগাসন সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে।
হ সর্বোপরি যোগের দ্বারা মানুষের সার্বিক উন্নতি সাধন ঘটে।
এবার জেনে নেওয়া যাক, কোন রোগ কমাতে কোন যোগাসন সবচেয়ে উপকারী বা ফলদায়ক-
শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা
এই জাতীয় সমস্যার মোকাবিলায় সিদ্ধাসন কার্যকরী। মেরুদন্ড সোজা রেখে পা গুটিয়ে বসে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। এটি দেখতে অনেকটা পদ্মাসনের মতোই। সিদ্ধাসনে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি সেই সঙ্গে ফুসফুসের কার্যক্ষমতাও বাড়ে।
হজমের সমস্যা
হজমের সমস্যা কমাতে পবনমুক্তাসন বা সুপ্ত বজ্রাসন করা যেতে পারে। পবনমুক্তাসনে চিত হয়ে শুয়ে প্রথমে ডান পা ভাঁজ করে পেটের সঙ্গে লাগাতে হবে। বাঁ পা তখন সোজা থাকবে। এরপর একইভাবে বাঁ পা ভাঁজ করে পেটে লাগতে হবে। ডান পা তখন সোজা থাকবে। গ্যাস, অম্বল, হজমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমিয়ে খিদে বাড়ায়।
হাঁটুর ব্যথা
হাঁটুর ব্যথা কমানোর জন্য উত্থানপদাসন করলে উপকার মিলবে। চেয়ারে বসে পা তোলা ও নামানো অর্থাৎ সিটেড লেগরাইজ বা পেলভিস ব্রিজ (চিত হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে উপরের দিকে তোলাকে পেলভিস ব্রিজ বলা হয়) করা যেতে পারে। এতে থাইয়ের পেশি সংকুচিত বা প্রসারিত হয়।
ঘাড়ের যন্ত্রণা
ঘাড়ের যন্ত্রণার জন্য আইসোমেট্রিক প্রেসার অভ্যাস করলে ফল মিলবে। দুই হাত মাথার পেছনে নিয়ে মাথাকে হাত দিয়ে ঘাড় সোজা করে চাপ দিতে হবে। এভাবে মাথাকে চারদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চাপ দিতে হবে। চিত হয়ে শুয়ে (ভুজঙ্গাসন) থেকে চিবুকে হাত দিয়ে চাপ দিলেও ঘাড়ের ওপর চাপ পড়ে।
পেট ও নিতম্বের চর্বি কমাতে
পেট ও নিতম্বের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে অর্ধকূর্মাসন খুবই কার্যকরী। মাটিতে বজ্রাসনে বসুন। এবার হাত দুটি সোজা করে মাথার ওপরে তুলে দুই হাত জড়ো করুন। পেট ও বুক যেন ঊরুর সঙ্গে লেগে থাকে। এ অবস্থায় মনে মনে কুড়ি পর্যন্ত গুনুন। ধীরে ধীরে সোজা হয়ে বসে শবাসনে বিশ্রাম নিন।
নারীদের জন্য যোগের উপকারিতা :
হ বিশেষজ্ঞদের মতে যোগাসন নারীদের দৈহিক গঠন ধরে রাখতে সাহায্য করে।
হ যোগাভ্যাস নারীদের দেহে নমনীয়তা প্রদান করে- যা ঢ়ৎবমহধহপু বা প্রসূতি অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে শিশুর জন্ম দেন বা হড়ৎসধষ ডেলিভারিতে সাহায্য করে।
হ মেনোপজের সময় নারীদের থাইরয়েড প্রবেস্নম, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হন। এ সময় এ যোগাসন মহিলাদের এসব সমস্যা থেকে দূরে রাখে এবং সুস্থ জীবনযাপনে সাহায্য করে।
হ মহিলাদের ক্ষেত্রে রেগুলার সবহংঃৎঁধষ পুপষব-এর জন্যও যোগার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যোগব্যায়াম বা অনুশীলনের পাশাপাশি সম্পূর্ণ ডায়েটেও মেনে চলা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।
যোগব্যায়াম করার আগে কী খাবেন
সকালে ঘুম থেকে উঠে যোগব্যায়াম করা সব থেকে বেশি স্বাস্থ্যকর। এক্ষেত্রে সকালে ওঠার পর শরীরে শক্তি কম থাকে। যোগব্যায়াম করার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তির দরকার। তাই যারা সকালে যোগব্যায়াম করেন তাদের যোগব্যায়ামের ৪০ মিনিট আগে কলা খাওয়া উচিত।
এছাড়াও আপনি ড্রাই ফ্রুটস বা প্রোটিনসমৃদ্ধ যে কোনো খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। এটি কোনো ফল হতে পারে বা আপনি ডিমও রাখতে পারেন। ব্রেকফাস্টে রাখতে পারেন ওটমিলও। এগুলো ছাড়াও ব্রেকফাস্টের পর দই খেতে পারেন। তবে আপনি যদি সন্ধ্যায় যোগব্যায়াম করেন তবে আপনার যোগব্যায়ামের এক ঘণ্টা আগে বাদাম, ডাল, সালাদ বা বীজজাতীয় খাদ্য খাওয়া উচিত।
যোগব্যায়াম করার পরে কী খাবেন
যোগব্যায়াম করার সঙ্গে সঙ্গে যদি আপনি জল পান করেন তবে এটি মারাত্মক ভুল। আপনার কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ মিনিট পরে জল পান করা উচিত। যোগব্যায়াম করার পর পুষ্টিসমৃদ্ধ ডায়েট গ্রহণ করুন। আপনার ডায়েটে অবশ্যই প্রোটিন থাকা প্রয়োজন।
এর জন্য আপনি পনির, ডিম, সালাদ, ফল বা ফলের রস খেতে পারেন। যোগব্যায়াম করার পর আপনি প্রোটিন শেক নিতে পারেন। এ ছাড়াও স্যান্ডউইচ, বাদাম বা ড্রাই ফ্রুটসও ডায়েটে রাখতে ভুলবেন না। যদি কোনো খাদ্যের বিষয়ে এলার্জির সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে একটি নিখুঁত ডায়েট চার্ট বানিয়ে নিন।