বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু করোনাই নয়, হাত ধুলে দূরে থাকবে শত রোগ

সাধারণ মানুষের প্রত্যেকবার টয়লেট ব্যবহারের আগে ও পরে, খাবার তৈরির আগে ও পরে, খাবার খাওয়ার আগে ও পরে, হাত দিয়ে হাঁচি, কাশি, সর্দির বেগ সামলানোর পর সাবান দিয়ে কমপক্ষে ৪০ সেকেন্ড হাত ধোয়া উচিত
সুস্বাস্থ্য ডেস্ক
  ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে বদ্ধপরিকর গোটা ভারত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফেও জারি হয়েছে বিভিন্ন নির্দেশিকা। উপদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সাবান বা অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু নোভেল করোনাভাইরাসই নয়, বিভিন্ন রোগ আটকে দিতে পারে সঠিকভাবে হাত ধোয়ার অভ্যেস।

কলকাতার বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আশিস মিত্র জানান, অ্যাডিনোভাইরাস, নরোভাইরাস, হেপাটাইটিস 'এ' এবং 'ই' ভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম উৎস হলো অপরিষ্কার হাত। হাতের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের চাইতে বেশি হয় ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া সংক্রমণ।

উদাহরণ হিসেবে সালমোনেলস্না ব্যাকটেরিয়া থেকে টাইফয়েড, শিগেলস্না থেকে আমাশয়, এশেরিশিয়া কোলাই সংক্রমণ থেকে ডায়রিয়া, জিয়ার্ডিয়ারের মতো পরজীবী থেকে পেটের অসুখ, কৃমির ডিম থেকে পেটের সংক্রমণের কথা বলা যায়। তিনি জানান, রোগগুলো ছড়ায় নানাভাবে। বিশেষত বাজারে গিয়ে মাছ-মাংস, সবজি হাতে ধরে বেছে বেছে নেওয়ার অভ্যেস আছে অনেকের। অথচ বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পর হাত ধুতে ভুলে যান তারা। অনেকেই হাত ধুতে ভুলে যান টয়লেট ব্যবহারের পরেও। এরপর অপরিষ্কার হাতেই মুখ-চোখ-নাকে হাত দিলেই সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা থাকে। কিছু নির্দিষ্ট পেশার সঙ্গে জড়িত মানুষেরও বারবার হাত ধোয়ার দরকার রয়েছে। বিশেষত চিকিৎসক, নার্সদের বারবার হাত ধোয়ার প্রয়োজন। কারণ তারা বিভিন্ন রোগীর সংস্পর্শে আসেন।

এ ছাড়া পরিচারিকা, আয়া ও পরিচ্ছন্নকর্মীদেরও হাত ধুতে হবে বারবার। বারবার হাত ধুলে তাদের নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে। আর কলকাতার জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. জ্যোতির্ময় পাল যোগ করেন, সুনির্দিষ্ট সমীক্ষা না থাকলেও ধারণা করা যায়, সাধারণভাবে মানুষ অজান্তেই প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৪০ বার মুখে হাত দেয়। মুখ অর্থাৎ নাক-চোখ-মুখ, ঠোঁট, থুতনিকে বোঝানো হচ্ছে।

ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনোতোষ সূত্রধর বলেন, সঠিক নিয়ম মেনে হাত ধুলে প্রায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে নানা রোগ থেকে দূরে থাকতে পারেন সাধারণ মানুষ। চিকিৎসকদের মধ্যে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিবার রোগীকে পরীক্ষা করার পর সঠিক নিয়ম মেনে হাত ধুলে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডাক্তার সাহেবরাও বিভিন্ন ধরনের ক্রস ইনফেকশন থেকে দূরে থাকতে পারেন। ক্রস ইনফেকশন বলতে বোঝায়, রোগীর থেকে চিকিৎসক এবং চিকিৎসক থেকে অন্য রোগীর মধ্যে জীবাণু সংক্রমণ। তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের প্রত্যেকবার টয়লেট ব্যবহারের আগে ও পরে, খাবার তৈরির আগে ও পরে, খাবার খাওয়ার আগে ও পরে, হাত দিয়ে হাঁচি, কাশি, সর্দির বেগ সামলানোর পরে সাবান দিয়ে কমপক্ষে ৪০ সেকেন্ড হাত ধোয়া উচিত।

পশ্চিমবঙ্গের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথির (সল্টলেক) সাবেক অধিকর্তা ডা. অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'কোভিড-১৯' শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত সাধারণ মানুষ পথের ধারে ফুচকা, এগরোল, চা-বিস্কুট খাওয়ার আগে একবারও হাত ধোওয়ার কথা ভাবতেন না। বড় রেস্তোরাঁতে ঢুকেও খাবার খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার কথা অনেকের মাথায় আসত না। নিদেনপক্ষে স্যানিটাইজার ব্যবহারেও ছিল প্রবল উদাসীনতা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে