মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগ

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

ফাইলেরিয়াসিস (ঋরষধৎরধংরং) বা গোদ রোগ মূলত কিউলেক্স জাতীয় স্ত্রী মশার কামড়ে একজন রোগী থেকে অন্য আরেক জন সুস্থ মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়। তবে অ্যানোফেলিস ও এডিস মশার কামড়ে এ পরজীবীর দ্বারা মানুষের শরীরে বেশি সংক্রমিত হয়। এই ঋরষধৎরধংরং বা গোদ রোগ একটি দীর্ঘমেয়াদি মারাত্মক রোগ। ঋরষধৎরধংরং বা গোদ রোগ একটি কৃমি জাতীয় রোগ; কিন্তু এই রোগের পরজীবী মানুষের অন্ত্রে বাস করে না, বরং শরীরে প্রবেশের পর লসিকা নালিতে গিয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পূর্ণবয়স্ক হয় এবং লসিকা নালিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে লসিকা নালি বন্ধ করে ফেলে, ফলে নানা ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়; যেমন- আক্রান্ত স্থানে (রোগীর হাত, পা, অন্ডকোষ, যৌনাঙ্গ ও মেয়েদের ক্ষেত্রে স্তন) চামড়া ফুলে যায়, লালচে হয়, ব্যথা হয়, কার্যকারিতা কমে যায়, চামড়া খসখসে হয়ে ওঠে এবং দেখতে হাতির চামড়ার মতো মনে হয়। সাধারণত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। এই রোগের আরেকটি নাম এলিফ্যানটিয়াসিস।

বর্তমানে সারাদেশে কয়েক লাখ মানুষ এ রোগের কারণে পঙ্গু হয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, শ্রীলংকা, জাপান, ব্রাজিল, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। বাংলাদেশে ষাটের দশকের পূর্ব থেকেই এ রোগ বিদ্যমান। উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। মশাবাহিত হয়ে সারাদেশে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। সারাদেশে এখন পর্যন্ত কত লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে এর সঠিক কোনো হিসাব নেই। গোদ রোগ হাসপাতালের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট ৫৬টি জেলায় এ রোগ বিদ্যমান। তবে সরকারিভাবে এসব রোগীর পরিকল্পিত পুনর্বাসনের কোনো সঠিক উদ্যোগ বা পরিকল্পনা নেই।

ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগের সামাজিক গুরুত্ব

ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগ বাংলাদেশের একটি অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা, যা পারিবারিকভাবে অবহেলিত, সামাজিক, বিবাহবিচ্ছেদ ও অর্থনৈতিক বোঝাস্বরূপ। অপুষ্টি, দারিদ্র্য, সামাজিক অবস্থান, কুসংস্কার অশিক্ষা ও বসতবাড়ির নোংরা পরিবেশ, ঘনবসতি, স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব প্রভৃতি এই রোগ সংক্রমণের জন্য দায়ী।

ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগের সাধারণ লক্ষণগুলো :

লক্ষণহীন, তাৎক্ষণিক, দীর্ঘসূত্রী ও দীর্ঘসূত্রীর মধ্যে তাৎক্ষণিক।

লক্ষণহীন : জীবাণু দেহে প্রবেশের পর অনেক ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ বছর কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে জীবাণুটি বিশেষত কিডনি ও ফুসফুসের লসিকা গ্রন্থি ও নালির ক্রমাগত ক্ষতি করে। আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না করালে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেয়।

তাৎক্ষণিক : কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক লক্ষণ দেখা যায়। যেমন- চর্মরোগ, ত্বক চুলকানো, লাল হওয়া, চাকা চাকা হওয়া, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, আক্রান্ত অঙ্গ ফুলে বিকৃত হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।

দীর্ঘসূত্রী : দীর্ঘসূত্রী বা ক্রণিক আক্রান্ত রোগীর সবার চোখে পড়ে। মশার কামড়ের পর আক্রান্ত অঙ্গ মোটা হয়ে বিকৃত হতে প্রায় তিন থেকে পাঁচ বছর এবং সর্বোচ্চ ২০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। সাধারণত পা, অন্ডকোষ, যৌনাঙ্গ, স্তন, হাত মোটা হয়ে বিকৃত হয়ে যায়। সাধারণত ১১-১৫ বছর বয়সের শিশুদের মধ্যে ঐুফৎড়পবষব নামক সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়।

দীর্ঘসূত্রীর মধ্যে তাৎক্ষণিক : অনেকের পা বা হাতের আঙ্গুলের মাঝখানে প্রদাহ হয় এবং হঠাৎ প্রদাহ হয়ে ত্বক লাল হয়, প্রচন্ড জ্বর ও মাথা ব্যথা দেখা দেয়।

ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগ নির্ণয়ের ল্যাবরেটরি পরীক্ষা

১. এলার্জি পরীক্ষা। যেমন- স্কিন পিক টেস্ট, স্ক্যাচ টেস্ট, চ্যালেঞ্জ টেস্ট, রক্তের আরএএসটি (রাস্ট) টেস্ট ইত্যাদি।

২. রক্তের ঈইঈ পরীক্ষা, রক্তের বংড়হড়ঢ়যরষ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে।

৩. ত্বকের পরীক্ষা : ত্বক ফুলে থাকে।

৪. ওঈঞ (ওসসঁহড় ঈযৎড়সধঃড়মৎধঢ়যরপ :বংঃ)

৫. খুসঢ়যুংপরবহপবহঃড়মৎধঢ়যু :বংঃ : যাদের রক্ত পরীক্ষা করে ঋরষধৎরধংরং বা গোদ রোগ বোঝা যায় না তাদের জন্য এ পরীক্ষা করা হয়।

ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগীর চিকিৎসা

রেজিস্টার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিম্ন ওষুধগুলো সেবন ও উপদেশ গ্রহণ করা যেতে পারে।

জী .

১. ঐুফৎড়পড়ঃুষব অংরধঃরপধ ু (ঞড়ঢ় এৎধফব গবফরপরহব) ঋড়ৎ ঝবিষষরহম ধহফ ঐধৎফবহরহম ড়ভ ংশরহ রিঃয জড়ঁময, ঞযরপশ, ঐধৎফ ঝশরহ .

২. ঝরষরপধ- ডযবহ রঃ ধভভবপঃং খবমং, ঋববঃ ধহফ ঐধহফ

৩. ঊষধবরং এঁরহববহংরং ু ঋড়ৎ ঝবিষষরহম ধহফ ঐধৎফবহরহম ড়ভ ংশরহ

৪. অৎংবহরপ অষনঁস- ঞড় গধহধমব ঝবিষষরহম ড়ভ খড়বিৎ খরসনং ধহফ ঢ়ধরহ.

৫. চবঃৎড়ষবঁস- ঋড়ৎ ঈধংবং রিঃয ৎড়ঁময, :যরপশ, ঐধৎফ ংশরহ.

৬. গবৎপ ঝড়ষ: ঋড়ৎ সধহধমরহম টষপবৎং ড়হ :যব ঝশরহ.

৭. ঘধঃৎঁস ঈধৎন- অহড়ঃযবৎ গবফরপরহব :ড় সধহধমব টষপবৎ ড়হ ংশরহ.

উপদেশ

১. প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ ধরা পড়লে রোগীকে দ্রম্নত চিকিৎসা নিতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের অন্য সদস্যদেরও প্রতিষেধক গ্রহণ করতে হবে।

২. প্রতিদিন অন্তত ১ বার সাবান দিয়ে আক্রান্ত অঙ্গ পরিষ্কার করতে হবে।

৩. আক্রান্ত অঙ্গ সব সময় শুকনা রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে