ফুলের মালি

প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

বাসু দেব নাথ
মধুপুরে নন্দ নামে এক রাজা ছিলেন। বিশাল সেই রাজ্য। রাজ্যে কোনোকিছুরই কমতি ছিল না। একদিন সকালবেলা রাজা প্রাসাদের পাশে বাগানের মাঝরাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন বাগানে তেমন কোনো ফুল নেই। গাছগুলোও মুমূর্ষু হয়ে আছে কেমন। পুরো বাগানে আগাছা হয়ে গেছে অনেক। বাগানের এমন অবস্থা দেখে রাজা রেগে গেলেন। তিনি মন্ত্রিমশাই ও সেনাপতিকে ডেকে বিষয়টি খুলে বলেন এবং জানতে চান কেন এমন হলো। তখন মন্ত্রিমশাই বলেন- মহারাজ, বাগানে বুট্টু নামে এক মালি রয়েছে কিন্তু সে ভীষণ অলস। ফুল ও বাগানের প্রতি তার কোনো আকর্ষণ নেই। রাজা আরও রেগে যায় এবং মালিকে ডেকে এনে বরখাস্ত করে দেন। রাজা মন্ত্রীকে বলেন রাজ্যে ঘোষণা করতে রাজবাগানের পরিচর্যার জন্য মালি প্রয়োজন। মন্ত্রী বললেন- মহারাজ, গ্রামে এই সংবাদ ঘোষণা করলে তো শত শত মালি চলে আসবে। কীভাবে পরখ করবেন কে যোগ্য! নন্দ রাজা জানান বিষয়টি তিনি দেখবেন। ঘোষণা করার পরদিন রাজসভায় প্রায় ১০০ মালি এসে উপস্থিত হয়। রাজা সবার উদ্দেশ্যে বলেন- - ফুলের বাগানের জন্য একজন মালি নির্বাচন করা হবে। আমি একটি প্রশ্ন করব যে পারবে সে জয়যুক্ত এবং যে পারবে না সে পরাজিত হবে। যে জয়যুক্ত হবে তাকে সুন্দর একটি ফুলের মালা উপহার দেওয়া হবে আর যে পরাজিত হবে তাকে দশটি সোনার মোহর দেওয়া হবে। রাজার এমন অদ্ভুত পরীক্ষা পদ্ধতিতে সবাই বিস্মিত হয়। যে জয়যুক্ত হবে সে পাবে সামান্য ফুলের মালা আর যে পরাজিত হবে সে পাবে সোনার মোহর। অদ্ভুত বিষয়। এর পরপরই রাজা খুব সহজ একটি প্রশ্ন করেন। অংশগ্রহণকারী মালিরা একে একে হাত তুললেন এবং ভুল ভুল উত্তর দিতে লাগলেন। সঠিক উত্তর জানা সত্ত্বেও তারা ভুল উত্তর দিতে থাকলেন মোহরের লোভে। তারা মনে মনে ভাবছে যদি দশটি মোহর পেয়ে যাই তবে আর চাকরি কিসের দরকার! সবাই একে একে ভুল উত্তর দিল এবং দশটি করে সোনার মোহর নিতে লাগল। প্রতিযোগীর সংখ্যাও শেষ। রাজা প্রায় হতাশ হয়ে পড়লেন। সবশেষে পুলক নামে ময়লা-ছেঁড়া কাপড়ে এক অনাথ মালি ছেলে আসে এবং রাজার মুখের দিকে তাকিয়ে সঠিক উত্তরটি দেয়। সবাই তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। রাজা তার কাছ থেকে সঠিক উত্তর পেয়ে অনেক খুশি হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন এবং তার গলায় ফুলের মালাটি পরিয়ে দেন। পুলক খুব খুশি মালাটি পেয়ে সে বারবার ফুলের মালাটির সুগন্ধ নিচ্ছিল। তখন রাজা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন। আমার এমনই কাউকে প্রয়োজন ছিল যে ফুলকে ভালোবাসবে, সৎ এবং নির্লোভ হবে। রাজা নিজের গলার মহামূল্যবান পুঁতির মালাটি পুলককে উপহার হিসেবে দিলেন। বাগানের পাশে পুলকের জন্য একটি সুন্দর ঘর স্থাপনের নির্দেশ দিলেন। এর কিছুদিন পরই রাজা যেমন বাগান দেখতে চেয়েছিলেন পুলক তেমন করেই বাগান তৈরি করলেন। যাতে রঙবেরঙের ফুলের মেলা দেখা যায়। এভাবেই ফুলকে ভালোবেসে পুলক মালি রাজার কাছে প্রিয় হয়ে উঠলেন।