শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর বাল্যকাল

শেখ একেএম জাকারিয়া
  ০৭ মার্চ ২০২০, ০০:০০

মার্চ মাস আমাদের জীবনে খুবই জরুরি ও তাৎপর্যবহ একটি মাস। নুনাধিক সবাই অবগত পরাধীন থাকাকালীন ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক যোজন হলো ১৯২০ সালের এ মাসেই ১৭ তারিখে ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমায় টুঙ্গিপাড়া গ্রামে শেখ লুৎফর রহমান ও তার সহধর্মিণী সায়রা খাতুনের ঘর আলোকিত করে অত্যন্ত উজ্জ্বল অর্থাৎ ফুটফুটে মুখাবয়বের একটি শিশুপুত্রের জন্ম হয়।

শিশুটি অন্য শিশুদের মতোই পরিবারের সব মানুষের সুখের মধ্যবিন্দু হয়ে ওঠেন। পিতামাতা আদর করে শিশুপুত্রের নাম রাখেন খোকা। আর এই খোকাই হলেন আমাদের সবার প্রেমাস্পদ, প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সবার প্রীতিভাজন এ খোকার শৈশব ও কৈশোরকাল কীভাবে কেটেছে তা আজ অনেকের কাছেই অবিদিত। বইপত্রাদি পাঠে যে পর্যন্ত জানা যায়, খোকা বালকবয়সে দোয়েল ও বাবুই পাখি খুব ভালোবাসতেন, শালিক ও ময়না পাখি ভালোবেসে খাঁচায় পুষতেন। এছাড়া তিনি বানর ও কুকুর পুষতেন খুব যত্নের সঙ্গে। পশুপাখির প্রতি ছিল তার প্রগাঢ় অনুরাগ। হাওর ও খালের পানিতে বক, মাছরাঙা কীভাবে ডুব মেরে মাছ ধরে, সেসব দৃশ্য তার মনকে নাড়া দিত খুব। ফুটবল ছিল খোকার পছন্দের একটি খেলা। মোটকথা, বঙ্গবন্ধুর শৈশব কেটেছে গাঁয়ের মেঠো পথের ধুলিমাটি মেখে আর বর্ষার কর্দমাক্ত জলে ভিজে। টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘন গাঁয়ের আলো, বাতাস, মাটি ও মানুষ তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করত। তিনি ভালোবাসতেন গ্রামের সব মানুষকে। আর এ কারণেই তিনি ছিলেন সবার নয়নের পুত্তলি। শিশু-কিশোর জোয়ান-বুড়ো সবাই খোকাকে একান্তভাবে বিশ্বাস করত ও ভালোবাসত।

শৈশবে খোকা বালকদলের নেতা ও ভাই-বোনের আদরের মিয়াভাই ছিলেন। মধুমতি নদীর কাদামাখা জলে গাঁয়ের ছেলেদের সঙ্গে সাঁতার কাটা, দৌড়ঝাঁপ, দলবেঁধে হাডুডু, ফুটবল, ভলিবল খোয় খোকা ছিলেন খুবই পারদর্শী। টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গ্রামের লোকদের কাছে শেখ বাড়ি নামেই পরিচিত ছিল। শেখ বাড়ির দক্ষিণপার্শ্বে ছিল বিচারালয় অর্থাৎ কাচারি ঘর। সেখানেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মৌলবি সাহেবদের কাছে খোকার বিদ্যাশিক্ষার হাতেখড়ি। তবে গৃহশিক্ষক মৌলবি সাখাওয়াৎ উলস্নাহ সাহেবের কাছে প্রথম বর্ণপরিচয় শেখেন। তৎপর খোকা সাতবছর বয়সে ১৯২৭ সালে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরে অর্থাৎ ১৯৩১ সালে তার বাবা লুৎফর রহমান পরিবারবর্গ নিয়ে নিজ কর্মস্থল গোপালগঞ্জে আসেন এবং খোকাকে সেখানকার পাবলিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করান।

সেখানে কিছুদিন যেতে না যেতেই বঙ্গবন্ধু বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগ থেকেই চোখে জটিল সমস্যা বা অসুখ দেখা দেয়। যার নাম গেস্নাকোমা। বাবা লুৎফর রহমান পুত্রের এই অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে ওঠেন এবং স্বজনদের পরামর্শে খোকাকে চিকিৎসা করানোর জন্য কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. টি আহমেদ তার চোখের অপারেশন করেন। অপারেশনের পর গেস্নাকোমা থেকে সুস্থ হলেও চিকিৎসক তাকে চোখে চশমা ব্যবহারের উপদেশ দেন। পরিতাপের বিষয়, বঙ্গবন্ধু চোখে সমস্যার কারণে চারবছর বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেননি।

সুস্থ হওয়ার পর তিনি বাবার কর্মস্থল মাদারীপুরেও কিছুদিন লেখাপড়া করেন। স্কুলজীবনেই বঙ্গবন্ধু সংস্কারমুক্ত অর্থাৎ সমাজে প্রচলিত কোনো অযৌক্তিক ধ্যান-ধারণার বশীভূত নয় এমন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন। খোকা বাল্যকাল থেকেই কথা বলায় খুব পারদর্শী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু যে সময়ে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশনারি হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন, সে সময়ে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ওই স্কুল পরিদর্শনে আসেন।

তার সঙ্গে ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী। এ সময় কিশোর মুজিব শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীর সামনে দাঁড়িয়ে স্কুলের ছাদ মেরামতের দাবি জানান। পরে তার সে দাবি বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হন মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক। তাছাড়া তিনি যে সময়ে নবম শ্রেণির ছাত্র, সে সময়ে একবার ছাত্রদের উদ্দেশে মঞ্চে বক্তৃতা দানকালে তাকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। সম্ভবত এটাই তার জীবনের প্রথম গ্রেপ্তার। পরে ছাত্রদের চাপের কারণে পুলিশ বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। শৈশবে সবার প্রিয় খোকা বড় হয়েও ছোটদের খুব ভালোবাসতেন। তার প্রিয় সংগঠন ছিল কচিকাঁচার মেলা ও খেলাঘর। এমনকি বঙ্গবন্ধু তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও কচিকাঁচার আসরে ভর্তি করেছিলেন। তার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি কাটিয়েছেন এই সংগঠনের সঙ্গে। বর্তমানে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু জন্মদিন 'জাতীয় শিশু দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<91420 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1