বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজা ও রাক্ষসী

মিনহাজ উদ্দীন শরীফ
  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বহুদিন আগেকার কথা, চন্দ্রাবতী রাজ্যের রাজা ছিল হরিদাস। সে একদিন শিকার করার জন্য এক গভীর অরণ্যে গেল। সে শিকার খুঁজতে খুঁজতে বনের একপ্রান্তে যেতে না যেতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। সে মনে মনে ভাবল একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার না হয় শিকার খুঁজতে যাব। সে একটা বড় বৃক্ষের নিচে বসে ঘুমিয়ে গেল। হঠাৎ করে একটা রাক্ষসী এসে বলল, 'কে গো তুমি, আমার দ্বারে ঘুমিয়ে আছ'! রাজা হরিদাস গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে ছিল। তাই সে রাক্ষসীর কথা শুনতে পায়নি। রাক্ষসী বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে বলল, 'এক্ষুনি আমার রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াও।' রাজা হরিদাস আচমকা হয়ে ওঠে বলে, 'কে এভাবে চিৎকার করছ?' রাক্ষসী বলল, 'এদিকে চেয়ে দেখ'! সে চেয়ে দেখে আকাশ আর জমিনে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল আকারের রাক্ষসী। কিন্তু রাক্ষসী ছিল খুবই সুন্দরী।

সে জানতো রাক্ষসীরা মানুষের রক্ত চুষে খায়। তাই সে রাক্ষসীকে মারার জন্য তীর আর ধনুক তার দিকে তাক করে ধরেছিল। রাক্ষসী বলল, 'নিজের মরণ নিজেই ডেকে আনছ। রাজা ভয় পেয়ে যায়। সে বলল, 'তাহলে আগে বলো আমার কোনো ক্ষতি করবে না।' রাক্ষসী বলল, 'আমি কেন তোমার ক্ষতি করব! আমরা তোমাদের মানুষের মতো দুষ্ট না। তোমরা মানুষ জাতি বিনা কারণে একে অন্যের ক্ষতি কর। আমরা বিনা কারণে অন্যের ক্ষতি করি না। তুমি আমার রাজ্যের দ্বারে ঘুমিয়ে আছ। তাই তোমাকে জাগাতে চেয়েছি।' রাজা হরিদাস বলে, 'কোথায় তোমার রাজ্য? সে বলল, 'এই বৃক্ষের ভেতরে আমার রাজ্য। রাজা হরিদাস বলল, 'আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, আমি জানতাম না এই বৃক্ষে ভেতরে তোমার রাজ্য!'

আমি ছোটবেলা থেকে জেনে আসছি তোমরা মানুষের রক্ত চুষে খাও। এ জন্যই আমি প্রথমে নিজের জীবন রক্ষা করার জন্য তোমাকে মারার জন্য তীর ধনুক হাতে নিয়েছিলাম। রাক্ষসী বলল, 'তোমার ধারণা ভুল। আমরা বিনা অপরাধে কারো রক্ত চুষে খাই না। যারা দুষ্টু তাদের আমরা শাস্তি দেই।'

রাজা বলল, 'আমার খুব পানি তৃষ্ণা পেয়েছে। আমি এখন আসি। রাক্ষসী বলল, 'তুমি আমার রাজ্যের অতিথি। তোমার পানি তৃষ্ণা পেয়েছে। আমি ব্যবস্থা করছি। কোথাও তোমাকে যেতে হবে না।' রাক্ষসী বৃক্ষের সামনে গিয়ে বলল, 'দ্বার মেলে দাও সবুজ পাতা,/ এসে পড়ছি তোমার মাতা!'

এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বৃক্ষের বাকল সরে গিয়ে ঝকঝকে একটা সোনার দ্বার এলো। কিন্তু দ্বারটা ছিল বন্ধ। রাক্ষসী আবারও বলল, 'দাও, মেলে দাও সোনার দ্বার;/ হবো আমরা রাস্তা পার।'

এই কথা বলায় দ্বারটাও খুলে গেল। রাজা কথা না বলে শুধু দেখছে! অবশেষে রাক্ষসী তার রাজ্যে নিয়ে গেল রাজাকে।

রাজ্যের সব কিছু ছিল সোনার। রাজা এসব দেখ একটুও লোভ করল না। রাক্ষসী রাজাকে সোনার বিছানায় বসিয়ে। পানি এনে দিল। রাজা পানি খেয়ে বলল, 'রাক্ষসী আমি কি এখন যেতে পারি?' রাক্ষসী বলল, 'একটু বিশ্রাম করে যাও। তুমি তো ক্লান্ত। সত্যিই তো। রাজা ক্লান্ত ছিল। তাই সে রাজি হয়ে গেল। সে সোনার পালঙ্কে শুয়ে পড়া মাত্র ঘুমের দেশে চলে গেল। সে স্বপ্নে দেখে রাক্ষসী তারা মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুমপাড়ানির গান শুনাচ্ছে। দু'জনে মিলে নেচে গেয়ে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে যায়। সে বুঝতে পারল, আগে যা দেখেছে সেটা স্বপ্নে ছিল। কিন্তু রাজা রাক্ষসীকে মনের অজান্তেই খুব ভালোবেসে ফেলেছে। তাই সে রাক্ষসীর কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিল। রাক্ষসী শুনে বলল, 'আমি রাক্ষসী তুমি জেনেও আমাকে কেন বিয়ে করতে চাও?' সে বলে, তুমি নিজেই বলেছিলে, তোমরা কাউকে বিনা কারণে শাস্তি দাও না। কিন্তু মানুষ বিনা কারণে শাস্তি দেয়। এ জন্য আমি বিয়ে করতে চাই। রাক্ষসী বলে, 'ঠিক আছে, আমি রাজি! তারপর দুজনের বিয়ে হয়।'

রাজা রাক্ষসীর নাম দিল মায়াবতী। রাজা মায়াবতী রানিকে নিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে যায়। চন্দ্রাবতী রাজ্যের প্রজারা নব রানি রূপ দেখে সবাই রাজার প্রশংসা করছে। বহু দূরদূরান্তের মানুষও নব রানিকে দেখে রাজার প্রশংসা করতে লাগল। এভাবে বেশ চার-পাঁচ বছর কেটে যায়। তারপর তাদের একটা পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। মায়াবতী সেই থেকে তার রাক্ষুসে রূপ কর্ম ত্যাগ করে মানুষের মতো বসবাস করতে থাকে। রাজা হরিদাস ও পুত্র সন্তানকে নিয়ে তার দিন সুখেই কাটছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<86677 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1